ওর একটা ভালোমতো নাম অন্তত থাকতে পারত, যেমন তথাগত, কিম্বা কৌশিক, কিম্বা শাহিদ
কিন্তু নেই, ঘটনাচক্রে ওর নাম কেলো, গ্রামের লোক ওই নামেই ডাকে, মা বলে মানিক, কিন্তু ওই মা অবধিই মানিকের আলো পৌঁছয়, যখন ও খুব ছোট তখন ওর বাপ সোনা পালিশ করতে বোম্বে গেছিল, যাওয়ার আগে বলে গেছিল অনেক টাকা ইনকাম হবে, ফিরে এসে আর কোনও কষ্ট থাকবে না, তারপর আর ফিরে আসেনি, অনেকদিন অপেক্ষা করে করে যখন কেলোর মা বুঝলো বান্দা আর ফিরবে না, তখন এর ওর বাড়ি হত্যে দিয়ে, কাজকাম করে চাট্টি খুদকুঁড়ো জোগাড় করে কেলোকে নিয়ে থাকতে লাগল, কেলোর মা এককালে ভালো চাটাই বুনত, ভাবলে সন্ধ্যার পর বসে থেকে আর কী হবে তার চেয়ে চাটাই বুনতে পারলে দুপয়সা আসে, সেই থেকে নতুন কাজ শুরু, তারপর থেকেই মা ব্যাটায় কাঁটা ঘেঁটে কুলগোরের জঙ্গল থেকে খেজুর ও তাল পাতা তুলে আনে, এসব খেজুর আর তাল গাছ কারও বাপের নয়, এসব আবজাই হয় কুলগোরের জঙ্গলে, কেলো পাতা ফালি করে দেয়, মা চাটাই বোনে, কেলো অবাক হয়ে দেখে মা কীভাবে পাতায় পাতায় জুড়ে যাচ্ছে আঙুল দুটো দিয়ে, মায়ের আঙুল দুটো তার খুব ভালো লাগে, মা যখন ঘুমায় আঙুলে হাত দিয়ে দেখে শক্ত শক্ত, ছোট ছোট কঠিন মাংসের ঢিপি...
একটু বড় হতে একদিন কেলো প্রাইমারি ইস্কুলের দাওয়ায় দাঁড়িয়ে দেখছিল বিপিন মাস্টার রঙিন রঙিন বই নিয়ে নাড়াচাড়া করছে, কেলোর ছবিগুলো খুব ভালো লাগছিল, বিপিন মাস্টার ভালো লোক, ওকে কাছে ডেকে অনেককিছু জিজ্ঞেস করে বুঝেছিল কেলোর মানিক হওয়ার সম্ভবনা প্রবল, একদিন কেলোর মাকে বলে ইস্কুলে ভর্তি করে দেয়, মা প্রথমে আপত্তি করলেও পরে বিপিন মাস্টার তাকে বলেছিল তোমার ছেলে পড়লে তোমার কষ্ট থাকবে না, কেলোর মায়ের ভয় হয়েছিল বেশি পড়ে ওর বাপের মতো যদি না ফেরে? তবে পড়লে আর কেলোকে পাতা বয়ে আনতে হবে না, হাটে মাথায় করে চাটাই নিয়ে যেতে হবে না ভেবেই আর কথা বাড়ায়নি, কেলো দিনের বেলা ইস্কুলে যায়, বিপিন মাস্টার বই কিনে দেয়, কেলোর মা একাই বন ভেঙে পাতা কেটে আনে, একাই শুকোতে দেয়, পানি ঝরায়
কেলো ইস্কুল থেকে ফিরে পাতা ফালি করে, দুএকটা ফালি নিয়ে খেলা করে, কখনও ফড়িং কিম্বা সাইকেল বানায়, মা দুর থেকে দেখে আর অবাক হয়! কেলো কী করে এসব বানিয়ে ফেলছে! সন্ধ্যা হলেই কেলো পড়তে বসে, জোরে জোরে পড়ে আর দেখে ওর মা চাটাই বুনছে
রাতে খেয়েদেয়ে মা ব্যাটায় গল্প করে, মা কপালে চুমু দেয়, কেলো ভাবে একদিন একটা তালপাতার পাখি বানিয়ে মা'কে দেবে...