বাক্সের ভেতর আইসক্রিম, নিতাইয়ের পেছনে ছুটছে বাচ্চারা

জামালপুর মোটামুটি একটু শহুরে গ্রাম, মানে জামালপুরে ইন্টারনেট আছে টিমটিম করে, কয়েকটা দোকান আছে, তার গায়ে জিও এবং ভোডাফোনের পোস্টার মারা, একটা ক্লাব আছে, খেলার মাঠ রয়েছে, ছোট লাইব্রেরি রয়েছে আর রয়েছে একটা স্বাস্থ্যকেন্দ্র

নিতাই রোজ দশ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে এখানে আসে, কেননা এখানে একটা আইসক্রিম ফ্যাক্টরিও রয়েছে, নাম ‘জনপ্রিয় আইসক্রিম’, সাইকেলের পিছনে থাকে একটা বড় বাক্স, সাইকেলের চাকার ভিতরে যে টিউব থাকে সেটা দিয়ে সাইকেলের ক্যারিয়ারে বাক্সটা টানটান করে বাঁধা, হাতে থাকে একটা রবারের ভেঁপু, টিপলেই প্যাঁক প্যাঁক করে আওয়াজ বের হয়, সকাল সকাল চাট্টি মুড়ি চা খেয়ে নিতাই তার গ্রাম বাতাসপুর থেকে অনেক আলরাস্তা, মোরামের রাস্তা পেরিয়ে বড় রাস্তায় উঠে তারপর জামালপুর পৌঁছোয়, তারপর ফ্যাক্টরি থেকে আইসক্রিম লোড করে কাঠের বাক্সটাতে, প্রথমে চাঁই বরফ মেঝেতে রাখে, আরো কয়েকজন হাত লাগায়, মুগুর দিয়ে দুমাদুম পিটিয়ে বরফটাকে ছোট ছোট টুকরো করে, সেই কুচি বরফ বাক্সে পুরে দেয় স্তরে স্তরে, তারপর খানিকটা নুন দেয় বরফের মধ্যে, সবশেষে প্লাস্টিক বিছিয়ে দেয় বাক্সের দেওয়ালে, মাঝখানটায় রাখে আইসক্রিমগুলো, দুধেবালা একদিকে, ম্যাঙ্গো একদিকে, ওদিকে অরেঞ্জ, আর একদম কোণে বাটি আইসক্রিম

মালপত্র লোড হলে নিতাই সাইকেলের প্যাডেল করে, বড় রাস্তা ছেড়ে ফের ঢোকে গ্রামের ভিতর, এ গ্রাম থেকে সে গ্রাম করে বেড়ায়, হাতের ভেঁপুটা বাজায়, ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে ওর সাইকেলের পিছনে পিছনে দৌড় দেয়, হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় ফের উঠে দৌড় দেয়, যেন কোনো একটা মজার খেলা, বাক্সের ভিতরে ম্যাজিক আছে, কেউ কেউ মায়ের আঁচল ধরে হত্যে দেয়, পাঁচ টাকার কয়েন জোগাড় করে চেয়ে চিন্তে, দৌড় দিয়ে নিতাইকে ধরে, যাওয়ার আগে মা একটা গেলাস দেয়, বলে এইটা করে আনবি, নইলে খসে গলে পড়ে যাবে, অনেকেই বাড়ি যায় না আর, নিতাইয়ের পাশে দাঁড়িয়েই আইসক্রিম চুষতে থাকে, এ ওর দিকে জিভ দেখায়,বলে লাল হোয়েচে? অ্যা? লাল হোয়েচে?

খিলখিল করে হেসে ওঠে সবাই

প্রচণ্ড গরমে নিতাইয়ের কপাল থেকে টপ টপ করে ঝরে পড়ে ঘাম, ইস্কুলতলার টিউবওয়েল টিপে টিপে ঘাড়ে মাথায় জল দেয়, হাত জড়ো করে অনেকটা জল খায়, বটতলায় সাইকেলটা ঠেসিয়ে দিয়ে একটা বিড়ি ধরায়, ভাবে এরকম গরম যদ্দিন তদ্দিন বাজার, গরম ফুরালে পাঁপড়ের ব্যবসা ফের...

সারাদিন বিক্রিবাটা শেষে নিতাই ফের একবার দাঁড়ায়, কোমরের ছোট থলিটা উপুড় করে গুনতে থাকে কত হল আজ, পুব দিক থেকে হাওয়া বয়ে আসে ঠান্ডা, অসময়ে বিকেল হয়ে যায়, হুট করে ঝড় উঠে যায়, কালবৈশাখী! নিতাই কোনোমতে ফের কোনো চায়ের দোকান বা ক্লাবের দাওয়ায় মাথা গোঁজে, ঝড় থেমে বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা শুরু হয়, নিতাইয়ের ভিজতে খুব ভালো লাগে, বৃষ্টির মধ্যেই বেরিয়ে পড়ে বাড়ির পথে, ভিজতে ভিজতে আরাম লাগে ওর, শরীরটা সতেজ হয়ে ওঠে

গ্রামের একদম শেষ বাড়িতে যে ছেলেটা মুখ গুঁজে কাঁদে, তার মা বলে ঠিক আছে কাল পাঁচ টাকা দিবো, নিতাই এলে কাল খাস, আজ বিস্টিতে আর কিনতে হবে না