'টোটো, তুমি ছোটো'। গতি খুব বেশি না হলেও মানুষের নিত্যদিনের যানবাহনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে এই টোটো। বিশেষত শহরতলিতে ব্যাপক হারে বাড়ছে টোটোর দৌরাত্ম্য। মফঃস্বল এলাকাগুলো ছাড়াও এখন গ্রামগুলোতে দিনকে দিন টোটোর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি হুগলি জেলার জমজমাট শহর উত্তরপাড়াতেও টোটো ও বাইকের দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিপাকগ্রস্ত।
ঘটনার সূত্রপাত বেশ কিছুদিন আগে। বাইক ও টোটো চালিয়ে এলাকার ব্যস্ত রাস্তায় প্রতিনিয়ত যাতায়াত করেন কয়েকশো মানুষ। কিছুদিন আগে টোটোর সাথে বাইকের ধাক্কায় ঘটে যাওয়া এক দুর্ঘটনায় রীতিমতো উত্তেজনা তৈরি হয় উত্তরপাড়ার কাঁঠালবাগান বাজারে। একে তো কান বিদীর্ণ করা হর্নের আওয়াজ, তার ওপর নিয়ম না মেনে যেখান সেখান দিয়ে টোটো চালানোর অভ্যেসে বারংবার অসুবিধের মুখে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বাজার সংলগ্ন রাস্তায় সারাদিনই মানুষ গিজগিজ করে। একটি টোটোর ভুলে পেছনে আসতে থাকা একটি বাইক থেকে একটি বাচ্চা ছেলে পড়ে যায়। সে নেহাতই শিশু, দুর্ঘটনার ফলে তার নাক থেকে তখন রক্ত বেরোচ্ছে, চোখে মুখে ভয়ের চিহ্ন।
ঘটনাটি ঘটবার পরই সামনের চায়ের দোকানের একদল লোক ও অনান্য প্রত্যক্ষদর্শীরা অকুস্থলে ছুটে আসেন। তাঁদের অভিযোগ, টোটোর হঠকারী চালানোর ফলেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এমন ঘটনা নেহাত নতুন নয়, টোটো চালকদের ভুলে প্রায়শই ছোটোখাটো দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয় সাধারণ মানুষকে।
তারপর থেকেই টোটোর এই দৌরাত্ম্যের প্রতিবাদে এগিয়ে এলেন এলাকার সাধারণ কিছু মানুষ। বুকে পিঠে পোস্টার ঝুলিয়ে বাজার এলাকায় সাবধানে টোটো চালাবার বার্তা দিতে দেখা গেলো সেখানকার মানু্ষকে। শুধুমাত্র টোটো নয়, অভিযোগ বাইকচালকদের বিরুদ্ধেও। রাস্তা সরু ও ছোটো হওয়ায়, সারাদিনই সাধারণ মানুষের ভিড় লেগে থাকে ওই এলাকায়। তাই টোটো ও বাইক চালকদের সতর্ক করতেই বেশ কিছু পোস্টার নিয়ে বহু মানুষ প্রতিদিন প্রতিবাদ করে চলেছেন।
লড়াইয়ে নেমেছেন আট থেকে আশি সবাই। উদ্যোক্তা শংকর চক্রবর্তী জানান, তিনি এমন কাজে তাঁর বাড়ির লোককেও পাশে পেয়েছেন। এখন এই লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন বাজারের নানা মানু্ষজনও। সেই চায়ের দোকানের বিপরীতে একটি ল্যাম্পপোস্টে রোজ একটি করে পোস্টার লাগাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। তাঁদের মতে, এ-লড়াই হারজিতের নয়, বরং শব্দদূষণ ও দুর্ঘটনার আতঙ্কের কথা জানাতেই তাদের এই প্রতিবাদ। ভবিষ্যতে তাঁদের লক্ষ্য আশেপাশের সরু রাস্তাগুলোতেও যানবহনের গতিকে নিয়ন্ত্রণে আনা।
ছোটো শহর ও মফঃস্বল গুলিতে পর্যাপ্ত রাস্তার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। জনসংখ্যা তুলনামূলক বেশি হওয়ায় যান চলাচলে সাধারণ মানুষের হাঁটাচলায় যথেষ্ট সমস্যা হয়। তাই, আগামীদিনে কেবল উত্তরপাড়া নয়, প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ুক অনান্য শহরগুলিতেও। নাহলে নিজের ইচ্ছেমতো যানবাহন চালালে এরকম আরও অনেক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। প্রশাসনের উচিৎ খুব শীঘ্রই এ-ধরণের রাস্তাগুলোয় ছোটো-ছোটো যানগুলিকে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনা। এভাবে প্রতিটি শহর থেকে এগিয়ে আসুক সাধারণ নাগরিকেরা। তবেই সচেতন হবে সমাজ।