আমাদের এই শহর কলকাতা। এক সময় ব্রিটিশদের সঙ্গে ব্যবসার সূত্রে কত জাতি যে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে এসে এখানে বাসা বেঁধেছেন, তার প্রকৃত হিসাব রাখা কঠিন। তেমনই একদিন আফিমের ব্যবসার সূত্রে এসেছিল চিনারা। তারপর থেকেই অনেকে থেকে গিয়েছেন কলকাতার বুকেই। শহরের বুকে দুই জায়গায় তৈরি হয়েছে চায়না টাউন। একটা অবশ্যই ট্যাংরা অঞ্চলের চায়না টাউন। আর অন্যটা তার থেকেও পুরনো। মধ্য কলকাতায় লালবাজার অঞ্চলের অদূরে টেরিটিবাজার। কত না ইতিহাস পায়ে পায়ে জড়িয়ে এই ছোট্ট অঞ্চলে। তেমনই একটি ইতিহাস কাওয়ান তাই-এর ইতিহাস। মানুষ থেকে ঈশ্বর হয়ে ওঠার ইতিহাস।
১৯১৭ সালে কাওয়ান তাই-এর মন্দির প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়। ক্যান্টোনিজ অঞ্চল থেকে এসে কুন তং কিছুটা জায়গা কিনলেন টেরিটিবাজার অঞ্চলে। মন্দির তৈরির কাজ শেষ হল ১৯২৪ সালে। সেই সেদিন থেকে পূজিত হয়ে আসছেন দেবতা। দেবতা বলে পরিচিত হলেও, কাওয়ান তাই আসলে মানুষ। চিনের ইতিহাসে কাওয়ান তাই-এর কথা পাওয়া যায়। আর সেই বর্ণনার সঙ্গে মিলে যায় তাও উপাসকদের বর্ণনাও। চিনদেশে বৌদ্ধ ধর্মকে সংকটের হাত থেকে রক্ষা করে মানুষ থেকে দেবতা হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
ভারতের ইতিহাসে বৌদ্ধ ধর্মের যে চিত্র পাওয়া যায়, তার সঙ্গে কিন্তু চিনের বৌদ্ধ ধর্মের বর্ণনা মেলে না। তাই এখানে চিনা সম্প্রদায়কে আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করাই ভালো। আর চিনাদের কথা বললেই প্রথমেই মনে আসে খাবারের কথা। কাওয়ান তাই মন্দিরকে ঘিরেও তাই খাবারের বিপণন গড়ে উঠবে, এতে আশ্চর্যের কী আছে? এভাবেই মন্দিরের কাছে জন্ম হল আরেক কিংবদন্তি নানকিং রেস্টুরেন্টের। পর্ক মোমো খেতে হলে কলকাতায় এর থেকে ভালো ঠিকানা বোধহয় আর তৈরি হয়নি। আর পায়ে পায়ে ইতিহাসও তো কম জমা হয়নি। এখানে এলে হয়তো আজও সেই যুদ্ধের দিনগুলোর স্পর্শ পাবেন। সেই ষাটের দশকে যখন ম্যাক-মোহন লাইন পেরিয়ে চিনের সেনাবাহিনী একে একে ঢুকে পড়ছে ভারতের ভূখণ্ডে। সেইসব দিনের সাক্ষী ছিলেন কলকাতার চিনা বাসিন্দারাও। সেইসব দুঃস্বপ্নের দিন পেরিয়ে আজও টিকে আছে নানকিং রেস্টুরেন্টের বাড়িটা । আর টিকে আছে কলকাতার চিনা বাসিন্দাদের ইতিহাস। আজকের যুদ্ধের বাতাবরণে স্বাভাবিকভাবেই সেইসব দিনের কথা মনে করছেন টেরিটিবাজারের বাসিন্দারা।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
হেস্টিংসের সঙ্গে কলকাতায় এল পিয়ানো, ভারতচন্দ্রের গানে সুর তুললেন রুশ সাহেব