‘হ্যাঁ, আমি সমকামী’, অলিম্পিকে সোনা জিতে গর্বিত উচ্চারণ টমের

টোকিও অলিম্পিকের মঞ্চে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তিনি। গলায় ঝোলানো স্বর্ণপদক, হাতে ফুলের তোড়া। হ্যাঁ, বিশ্বজয়ের স্বপ্ন সত্যি হয়েছে এতদিন পর। অথচ, এই খুশির দিনেই তাঁর দু’চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে জলের ধারা। 

টম ড্যালি। গতকাল টোকিও অলিম্পিকে সিঙ্ক্রোনাইজড ডাইভিং সোনা জেতার পর আবেগঘন হয়ে পড়লেন ব্রিটিশ ডাইভার। কারণ এই লড়াই যে শুধু ক্রীড়াক্ষেত্রের লড়াই নয়। ব্যক্তিগত জীবনের দুঃখ, যন্ত্রণা, হাজার হাজার তীর্যক মন্তব্য যে মিশে রয়েছে এই লড়াইয়ের সঙ্গে। 

তখন স্কুল শিক্ষার্থী টম। বুঝতে পেরেছিলেন আর পাঁচজন বন্ধুর থেকে যে তিনি আলাদা। একজন পুরুষ হয়েও তাঁর ভাল্লাগে পুরুষদের। কিন্তু তা মুখফুটে কখনোই প্রকাশ করেননি টম। কারণ, তাঁর আচরণ, কথা বলার ভঙ্গি— এসব কিছুর জন্য ক্লাসের সহপাঠীদের কাছে সেসময় প্রায়শই হেনস্থার শিকার হতে হত তাঁকে। অথচ, ততদিনে একাধিক আন্তর্জাতিক পদক পকেটস্থ করে ফেলেছেন তিনি। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ২০০৮-এর বেজিং সামার অলিম্পিকে খেলে তিনি তখন দেশের তারকা। তা সত্ত্বেও দিনের পর দিন এহেন ঘটনার সাক্ষী থাকতে থাকতে টম একসময় ভেবেছিলেন সমকামিতা অপরাধ। এমনকি বুলিং-এর থেকে বাঁচতে তাঁকে ঘোষণা পর্যন্ত করতে হয়েছিল তিনি সমকামী নন। ধীরে ধীরে তাঁকে গ্রাস করে নিয়েছিল হতাশা। একসময় ধরে নিয়েছিলেন সমকামী হওয়ার জন্যই, হয়তো অলিম্পিকজয় সম্ভব হবে না তাঁর।

পরবর্তীতে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় অস্কারজয়ী মার্কিন পরিচালক, স্ক্রিন রাইটার ও প্রযোজক ডাস্টিন ল্যান্স ব্ল্যাকের সঙ্গে। তারপরই বদলে যায় গোটা জীবন। ২০১৬-র রিও অলিম্পিকের ঠিক আগেই তিনি আত্মপ্রকাশ করেন সমকামী হিসাবে। তার বছর খানেকের মধ্যে আইনি প্রক্রিয়ায় বিবাহ করেন ডাস্টিনকে। অবশ্য তা নিয়েও চর্চা চলেছিল বিশ্বজুড়ে। তবে হাত ছাড়েননি ল্যান্স ব্ল্যাক। ক্রমাগত অনুপ্রেরণা জুগিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এর আগে লন্ডন ও রিওতে ব্রোঞ্জ জিতলেও, অল্পের জন্য হাতছাড়া হয়েছিল স্বর্ণপদক। গতকাল চতুর্থ বিবাহবার্ষিকীর ঠিক দু’মাসের মাথায় সত্যি হল সেই বিশ্বজয়ের সেই স্বপ্ন। 

আরও পড়ুন
বাংলা-সহ ৩০টি ভাষায় ইমোজি প্রকাশ অলিম্পিক কমিটির

অলিম্পিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে এসব স্মৃতিই যেন ভিড় করে আসছিল তাঁর চোখে। না, আর সামলাতে পারেননি নিজেকে। এদিন অলিম্পিকের মঞ্চে দাঁড়িয়ে টম এই জয় উৎসর্গ করেন গোটা বিশ্বের এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষদের। দৃপ্ত কণ্ঠে জানালেন, ‘আমি গর্বিত আমি একজন সমকামী পুরুষ এবং একই সঙ্গে একজন অলিম্পিকজয়ী।’ এই পদকপ্রাপ্তি আসলে প্রান্তিক লিঙ্গ-যৌনতার মানুষদের ক্ষমতায়নের প্রতীক। টমের এই সাফল্য যে এক কথায় ঐতিহাসিক, তাতে সন্দেহ নেই কোনো!

আরও পড়ুন
অলিম্পিকের আগেই কুস্তির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ৮টি সোনা ভারতের

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ভাগ্যের পরিহাসে অলিম্পিক ফাইনাল থেকে বাদ ভারতীয় শুটার