পরিযায়ী পাখিদের মৃত্যু রুখতে অন্ধকারে ফিলাডেলফিয়া

সন্ধে হলেও এবার আর ঝলমল করবে না ফিলাডেলফিয়া শহর। আকাশচুম্বী বাড়ি এবং রাস্তার আলো হয় নিভিয়ে রাখা হবে কিংবা ম্লান করে দেওয়া হবে মার্কিন প্রদেশের এই শহরে। বৃহস্পতিবার এমনটাই ঘোষণা করল ফিলাডেলফিয়ার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘বার্ড সেফ ফিলি’। লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী পাখিদের মৃত্যু আটকাতেই তাঁদের এই উদ্যোগ ‘লাটস আউট ফিলি’।

অবাক লাগছে? নিশ্চয়ই ভাবছেন পাখি মৃত্যুর সঙ্গে আলোর কী সম্পর্ক? হ্যাঁ, সম্পর্ক আছে। আসলে অভিবাসী পাখিরা রাতের বেলায় পরিযায়ন করে মূলত নক্ষত্রের আলো দেখেই। তবে কৃত্রিম আলোর ঝলকানি তাদের পথভ্রষ্ট করে। পাশাপাশি বহুতল স্কাইস্ক্র্যাপারগুলিতে আলো দেখে আকৃষ্ট হয় তারা। তবে সেখানে যে বাধা রয়েছে তা বুঝতে পারে না রাতের অন্ধকারে। ফলত সংঘাত। মৃত্যু। 

গত বছর অক্টোবর মাসে সংবাদমাধ্যমের শীর্ষে উঠে এসেছিল ফিলাডেলফিয়ায় পরিযায়ী পাখি মৃত্যুর ঘটনা। বিগত ৭০ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক পাখি মারা গিয়েছিল অক্টোবরে। আর তার কারণই ছিল এই কৃত্রিম আলো। পাশাপাশি মেঘলা আকাশ যেন আরও ত্বরান্বিত করেছিল পরিস্থিতিকে। 

তবে এই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় আগে। ড্রেসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নথি অনুযায়ী, ১৮৯৬ সালে ফিলাডেলফিয়ায় সিটি টাওয়ার তৈরি হওয়ার পর রেকর্ড সংখ্যক পাখির মৃত্যু হয়েছিল এই স্থাপত্যের সঙ্গে সংঘর্ষে। তারপর থেকে যত বেড়েছে স্কাইস্ক্র্যাপারের সংখ্যা, ততই বেড়েছে পাখি মৃত্যুর ঘটনা। পরিসংখ্যান বলছে শুধু এই ঘটনার জেরে বছরে প্রায় ৩৬ থেকে ১০০ কোটি পাখি মারা যায় যুক্তরাষ্ট্রে।

আরও পড়ুন
১৭০ বছর পর ‘অবলুপ্ত’ পাখির দেখা মিলল বোর্নিও-য়

পক্ষীবিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ইয়েলোথ্রোট, হোয়াইটথ্রোটেড স্প্যারো, গ্রে ক্যাটবার্ড, ওভেনবার্ড, ব্লু ওয়ার্বলার ইত্যাদি প্রজাতিগুলি সবথেকে বেশি শিকার এই ঘটনার। একদিকে যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, অন্যান্য শিকারি প্রাণীদের সম্মুখীন হচ্ছে তারা, তেমনই অস্তিত্বের হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃত্রিম আলো। ফলে বেড়ে চলেছে অবলুপ্তির ঝুঁকি।

মূলত বসন্ত এবং শরৎ— এই দুই ঋতুতে ফিলাডেলফিয়ায় আসে পরিযায়ী পাখিরা। আর হঠাৎ করেই বেড়ে যায় পাখিমৃত্যুর হার। তাই প্রারম্ভিক সময়ে এই দুটো ঋতুর ওপরেই জোর দিচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা। আগামী ১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত তাই সন্ধে থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত ম্লান করে রাখা হবে ফিলাডেলফিয়ার আলো। পরবর্তী ধাপে আবার ১৫ আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চলবে এই উদ্যোগ।

আরও পড়ুন
৬ মাসে ২৪৪৩টি আহত পাখি উদ্ধার, দিল্লির দমকল বাহিনীর পরিসংখ্যানে আশঙ্কা

তবে ‘লাইটস আউট ফিলি’ যে শুধু পাখিমৃত্যু কমাবে তা নয়, কমাবে শক্তির ব্যয়কেও। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন রুখতেও সাহায্য করবে এই উদ্যোগ। শহরের এই বহুতলগুলির নির্বাহী কমিটি বিল্ডিং ওনারস এন্ড ম্যানেজারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রায় চার শতোধিক প্রধান স্বাগত জানিয়েছেন এই উদ্যোগকে। ইতিমধ্যেই ২০টির বেশি প্রতিষ্ঠানে চালুও করে দেওয়া হয়েছে কর্মসূচি। প্রাণীজগতের বৈচিত্র রক্ষার জন্য একটা গোটা শহরের এমন সার্বিক উদ্যোগ, পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল বললেই চলে…

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
পরিযায়ী পাখিদের গণমৃত্যু ঘিরে রহস্য যুক্তরাষ্ট্রে