রাজ্য জুড়ে বেজে গেছে নির্বাচনের ঘণ্টা। যেকোনো রাজনৈতিক দলেরই প্রস্তুতি এবং প্রচার এখন তুঙ্গে। সমস্ত দলের প্রার্থীরাই চাইছেন মানুষের জন্য কাজ করতে। আর মাঝখান থেকে উপেক্ষিত হচ্ছে পরিবেশের গুরুতর সমস্যগুলিই। প্রতিদিন যে হারে চলছে পরিবেশ নিধন, তা প্রতিরোধের কর্মসূচি নামমাত্র উল্লেখিত হচ্ছে না কারোর কথাতেই। আর সেজন্যই রাজনীতির ময়দানে প্রথমবার পা রাখলেন তিনি। একমাত্র ইস্যু পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যা এবং দূষণ।
হ্যাঁ, এমনটাই হতে চলেছে বাঁকুড়ায়। পরিবেশের সমস্যাগুলির সমাধানের আশ্বাস দিয়েই ২৫২/বাঁকুড়া বিধানসভা থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন স্বদেশ মণ্ডল। পেশায় রসায়নের অধ্যাপক স্বদেশবাবু। না, কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় নয়; বরং নির্দল প্রার্থী হিসাবেই গতকাল মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তিনি।
সাম্প্রতিক সময়ে একাধিকবার খবরের শীর্ষে উঠে এসেছে বাঁকুড়ার নাম। সদ্য ঘটে যাওয়া শুশুনিয়া অগ্নিকাণ্ডের কথা আর নতুন করে বলার নেই। অন্যদিকে বাঁকুড়ার দ্বারকেশ্বর, গন্ধেশ্বরী ইত্যাদি নদীগুলিতে চলছে অবৈধ বালিখাদান। পাশাপাশি শহরের আবর্জনা ফেলায় নদীর জলধারণ ক্ষমতাও তলানিতে এসে ঠেকেছে। আর তার ফলাফল হিসাবে গত বছরই ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল বাঁকুড়াকে। তারপরেও একাধিক আবেদন সত্ত্বেও মজে যাওয়া নদীগুলির কোনোরকমের সংস্কারের কার্যক্রম নেওয়া হয়নি প্রশাসনের তরফ থেকে।
এখানেই শেষ নয়। চলছে বেআইনি বননিধনও। শাল, সেগুন, পলাশ— বাঁকুড়ার অরণ্য ঐতিহ্যও মৃত্যুর পথে। নেপথ্যে কাঠচুরি। এই চোরাকারবারিদের কর্মকাণ্ড শুধু যে অরণ্যকেই মুছে দিচ্ছে, তেমনটা নয়, পরোক্ষভাবে তা ত্বরান্বিত করছে দাবানলকেই। সরকার কিংবা বনদপ্তরের কাছে একাধিকবার আবেদন করেও খুব কিছু ফল মেলেনি বলেই জানাচ্ছেন স্বদেশবাবু। তাঁর কথায়, “বাঁকুড়ায় পলাশ প্রায় নেই বললেই চলে। তবে সরকার থেকে খাতায় কলমে বৃক্ষরোপণের কর্মসূচি নেওয়া হয়নি, এমন না। কোটি কোটি টাকা ঢালা হচ্ছে গাছ লাগানোর উদ্দেশ্যে। প্রথমত, শাল-সেগুনের জায়গায় এখন বসানো হচ্ছে ইউক্যালিপটাস। আর দেখতে গেলে গোটা কর্মসূচির সামান্যতম প্রতিফলনও পড়ছে না বাস্তবে। গাছ লাগান হলেও তা পরিচর্যার অভাবে মারা যাচ্ছে কিংবা গাছ কাটা হচ্ছে ততধিক হারে।”
আরও পড়ুন
আবারও আগুনের গ্রাসে শুশুনিয়া, নতুন বছরেই আতঙ্ক ছড়াচ্ছে পর্যটকদের মধ্যে
স্বদেশবাবু আরও তুলে আনলেন আরও পরিবেশগত সমস্যার কথা। বাঁকুড়ার ঠিক কেন্দ্রেই রয়েছে একটি সফট আয়রন কারখানা। সেখান থেকেও প্রতিনিয়ত পরিবেশে মিশছে লোহার গুঁড়ো। যা প্রভাব ফেলছে চাষাবাদে। আবাদি জমির ওপরে মোটা আস্তরণ জমেছে সেই দূষিত ধূলিকণার। তবে এই দূষণ রোধের জন্য কোনোরকমের ফিল্টার করার ব্যবস্থা নেই কারখানায়। তাতেও নিশ্চুপ প্রশাসন। পাশাপাশি জমি প্লটিংয়ের কারণে শিকেয় উঠেছে নিকাশি ব্যবস্থা।
“লকডাউনের সময় কিন্তু সুস্থ হয়ে উঠেছিল পরিবেশ। তারপর আবার সেই পুরনো জায়গাতেই ফিরে যাচ্ছি আমরা। তাই আমাদের মূল লক্ষ্য যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মুক্ত বাতাস পেতে পারে। কোনো রাজনৈতিক দলই এই কথাগুলি বলছে না। অথচ তাঁদের দপ্তর রয়েছে আলাদা আলাদা। সেই ঘাটতি পূরণ করার জন্যই এই উদ্যোগ”, জানালেন স্বদেশবাবু।
আরও পড়ুন
জ্বলছে বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড়, বিধ্বংসী আগুনে ছারখার বনভূমি
শুশুনিয়ায় আগুন লাগার সময় দেখা গিয়েছিল জঙ্গলের ত্রাতা হয়েই আগুন নেভানোর কাজে হাত লাগিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। এবার তাঁরাই জোটবদ্ধ হয়ে পাশে দাঁড়াচ্ছেন অধ্যাপক স্বদেশ মণ্ডলের। ক্ষমতায় আসা-না আসারও ঊর্ধ্বে যেন এই লড়াই। এই লড়াই দূষণহীন পরিবেশে বাঁচতে পারার অধিকার বুঝে নেওয়ার। আর সচেতন নাগরিকদের সমবেত কণ্ঠস্বর ঠিক কতটা তরঙ্গায়িত করতে পারে নির্বাচনী যুদ্ধকে। এখন দেখার সেটাই…
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
একাই লাগিয়েছেন ৫০০০ গাছ, বাঁকুড়ার গ্রামজুড়ে আজ ‘গাছদাদু’র ছায়া