মাটির উপর দিয়ে আর বৈদ্যুতিক লাইন রাখা যাবে না। বিদ্যুতের লাইন হবে মাটির নিচে সুড়ঙ্গ খুঁড়েই। সম্প্রতি গুজরাট এবং রাজস্থান সরকারকে এমনই নির্দেশ পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি এসএ বোবদের বেঞ্চ জানিয়েছে, বিপন্ন পাখি গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড সংরক্ষণের জন্যই এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড সংরক্ষণের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা চলছিল। সেই মামলার প্রেক্ষিতেই এবার ঐতিহাসিক এই রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট।
ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম বিপন্ন প্রজাতি হিসাবে গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ডের নাম চিহ্নিত। ইতিমধ্যে এই প্রজাতি সংরক্ষণের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বনবিভাগ। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে, পাখির সংখ্যা ততই কমতে দেখা গিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলায় পরিবেশকর্মীরা দাবি করেন পাখিদের সংখ্যা কমে আসার সবচেয়ে বড়ো কারণ বিদ্যুতের তার। বিশেষ করে গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ডের আয়তন ও ওজন বিশেষ প্রতিকূলতার সৃষ্টি করে। আদালতে পেশ করা একটি রিপোর্টে বলা হয়, আয়তনে বড়ো হওয়ার জন্যই উড়তে উড়তে হঠাৎ গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে না এই পাখি। ফলে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে বহু পাখির মৃত্যু হয় প্রতিবছর।
ইতিমধ্যে রাজস্থান বনবিভাগের অফিসাররা জানিয়েছেন, তাঁরা আদালতের রায় খতিয়ে দেখছেন। চিফ ওয়াইল্ড ওয়ার্ডেন মোহনলাল মীনা জানিয়েছেন, বাড়ির বিদ্যুৎ সরবরাহের সাধারণ লাইন মাটির নিচে সুড়ঙ্গ দিয়ে নিয়ে যাওয়া সমস্যার হবে না। তবে শিল্পক্ষেত্রের বিদ্যুৎ লাইন নিয়ে সমস্যা হতে পারে। আদালতের রায় খতিয়ে দেখেই সমস্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পাশাপাশি তাঁর মতে, বারমের এবং জয়শালমির অঞ্চলে গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ডের বসতি বেশ সুরক্ষিত। তবে বাকি রাজ্যে বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয়ে পাখি মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত স্বাভাবিক। ইতিমধ্যে বনবিভাগ এই বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এক একটি প্রজাতির বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রায় স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। ভারতেও এমন প্রজাতির সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। ২০১১ সালে গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড বিপন্ন প্রজাতি হিসাবে আইইউসিএন-এর তালিকায় জায়গা পায়। এরপর এই প্রজাতির সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়া নেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, বর্তমানে রাজস্থান এবং গুজরাটের পরিবেশ গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ডের জন্য নিরাপদ। তবে একমাত্র বিদ্যুতের তারের জন্যই তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে না। সুপ্রিম কোর্টের এই ঐতিহাসিক রায় একটি পাখিকে বিলুপ্তির হাত থেকে ফিরিয়ে আনবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন
পরিযায়ী পাখিদের মৃত্যু রুখতে অন্ধকারে ফিলাডেলফিয়া
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
হিমাচলের জলাভূমিতে অসংখ্য পরিযায়ী পাখির রহস্যমৃত্যু, কারণ অজানা বিশেষজ্ঞদের