আজ এ-প্রান্তে তো কাল অপর প্রান্তে— কলকাতা পানীয় জলের পাইপ ফাটার সমস্যা লেগেই থাকে বছরজুড়ে। একদিকে যেমন পাইপের ফাটল দিয়ে জলে দূষিত পদার্থ মেশে, আর্সেনিকের মতো ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি বাড়ার সম্ভাবনা থাকে, তেমনই পাইপের ফাটল মেরামত করতে খরচও মন্দ হয় না সরকারের। পাইপ বদলানোর জন্য খুঁড়তে হয় রাস্তা, বন্ধ রাখতে হয় জলের সরবরাহ। তাতে ভোগান্তি বাড়ে সাধারণ মানুষের। তাছাড়াও পাইপ ফাটার কারণে অপচয় হয় প্রচুর পরিমাণ পানীয় জল (Drinking Water)।
শুধু কলকাতাই নয়, এই সমস্যা রয়েছে লন্ডন, সান ফ্রান্সিসকো, নিউ ইয়র্কের মতো বিশ্বের উন্নত শহরগুলিতেও। তবে এবার আর মানুষ নয়, পাইপের ফাটল সারাবে স্বয়ংক্রিয় রোবট (Robot)। প্রয়োজন পড়বে না রাস্তা খোঁড়ার। এমনকি কোথায় পাইপ ফেড়েছে, তাও আলাদা করে বলে দিতে হবে না অত্যাধুনিক এই রোবটকে। নিজেই ফাটল চিহ্নিত করে, তা ভেতর থেকে দ্রুত মেরামত করে ফেলবে এই আশ্চর্য যন্ত্র। ‘পাইপ প্যাট্রোলার’ বা ‘পাইপবট’-খ্যাত (Pipebots) এই চমকপ্রদ রোবট আবিষ্কারের নেপথ্যে রয়েছেন শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টিগ্রেটেড সিভিল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার রিসার্চ সেন্টারের গবেষকরা।
তবে একটি-দুটি রোবট নয়, একটা গোটা শহরের পানীয় জলের পাইপের ফাটল নিয়ন্ত্রণ করতে মাটির নিচে নামানো হবে আস্ত একটি ‘রোবট-আর্মি’। জলের মধ্যেও দিব্যি যেগুলি কাজ করতে সক্ষম। প্রতিটি রোবটের সঙ্গে যুক্ত থাকবে বিশেষ ক্যামেরা, মাইক্রোফোন এবং ওয়াইফাই ট্রান্সমিটার ও রিসিভার। অর্থাৎ, পাইপের ভেতরে থেকেই নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারবে স্বয়ংক্রিয় রোবটগুলি। তাছাড়াও একাধিক রোবটগুলিতে সংযুক্ত করা হয়েছে একাধিক সেন্সর। যা জলের চাপ ও অন্যান্য রাশি পরীক্ষা করেই চিহ্নিত করবে পাইপের ফাটল। তারপর দ্রুত সেই ‘ক্ষত’ পূরণ করবে জিলেটিন জাতীয় পদার্থ দিয়ে। আবার পাইপে বড়ো আকারের ফাটল দেখা দিলে, অন্যান্য মাইক্রোবটগুলিকে একত্রিত করে তা সারানোরও ব্যবস্থা নেবে তারা। পাশাপাশি ফাটলের জিপিএস অবস্থান জানিয়ে দেবে মানুষকেও।
ইতিমধ্যেই ‘ওয়াটার ইউকে’, ‘এসেক্স ওয়াটার’-এর মতো বেশ কিছু ওয়াটার নেটওয়ার্ক সংস্থা ট্রায়াল শুরু করেছে এই যন্ত্রটির। এই পরীক্ষণ সফল হলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই বাণিজ্যিকভাবে কাজ শুরু করবে ‘পাইপবট’-খ্যাত এই রোবট। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিবছর কেবলমাত্র যুক্তরাজ্য এবং ওয়েলসে পাইপ ফাটার কারণেই অপচয় হয় ৩০০ কোটি লিটার পানীয় জলের। পাইপবট আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করলে এই অপচয়ের মাত্রা কমিয়ে আনা যাবে ৫০ শতাংশ, এমনটাই জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা…
Powered by Froala Editor