আসামের বনবিভাগের কর্মচারীদের আনন্দের শেষ নেই। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে মানস জাতীয় উদ্যানের বাঘ সুমারির রিপোর্ট। আর তাতেই দেখা গিয়েছে, গত এক বছরে বাঘের মোট সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৬টি। ২০১০ সালে এই অরণ্যে ছিল মাত্র ১০টি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। আর এবছর সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬। বলাই বাহুল্য, এই সংখ্যাবৃদ্ধির পিছনে রয়েছে সংরক্ষণকর্মীদের এতদিনের নিরলস পরিশ্রম। অবশেষে সেই পরিশ্রম সার্থকতা পেতে চলেছে।
এক সময় ভারতের সমস্ত অরণ্যেই কমবেশি সন্ধান পাওয়া যেত রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকেই এই প্রাণীর অস্তিত্ব সংকটের মুখে। ১৯৯২ সালে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ইন ডেঞ্জার’ হিসাবে চিহ্নিত হয় মানস ন্যাশানাল পার্ক। আর তার কারণ ছিল অবশ্যই বাঘের সংখ্যা। দীর্ঘ আলোচনার শেষে বাঘ সংরক্ষণের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করে আসাম বনবিভাগ। একে একে অরণ্যের নানা জায়গায় মানুষের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সেইসঙ্গে ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর নিয়মিতভাবে ক্যামেরা ট্র্যাপিং প্রযুক্তির সাহায্যে বাঘের সংখ্যা গণনার ব্যবস্থাও করা হয়। ২০১১ সালে আবার ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তকমা ফিরে পায় মানস। কিন্তু সংরক্ষণ প্রক্রিয়াও শুরু হয় আরও পরিকল্পনামাফিক।
২০১০ সালে থেকে এখনও অবধি বরাবরই বাঘের সংখ্যা উর্ধ্বমুখী। কিন্তু এর আগে কোনো বছর একসঙ্গে ১৬টি নতুন বাঘের আগমন হয়নি বলেই জানিয়েছেন পার্কের ডিরেকটির অমল চন্দ্র শর্মা। গতবছর ৩০টি বাঘ ছিল। এবছর সংখ্যাটা ৫০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ৪৬টি বাঘের মধ্যে ২০টি পুরুষ, ১৬টি মহিলা, ৭টি অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং ৩টি বাঘ একেবারে শিশু। শুধু তাই নয়, এই প্রথম সংরক্ষিত অঞ্চলের বাইরেও বাঘের পায়ের ছাপ পাওয়া গিয়েছে। কয়েক মাস আগেই মধ্যপ্রদেশের বান্ধবগড় অরণ্যে এক বছরে ৪৮টি বাঘের জন্মের খবর পাওয়া গিয়েছে। আর এবার বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেল মানস ন্যাশানাল পার্কে। এই সংখ্যাবৃদ্ধির পিছনে করোনা অতিমারীও অনেকটা প্রভাব ফেলেছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সব মিলিয়ে হয়তো আবারও বিপন্নতা কাটিয়ে উঠতে চলেছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। অন্তত এরপর আর তেমনটা আশা করা খুব ভুল হবে না।
Powered by Froala Editor