চিতাবাঘ, খটাস বা সাধারণ বনবেড়াল মাঝেমাঝেই মানুষের আশেপাশে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু খাঁটি বাঘ সবসময় মানুষের কাছ থেকে দূরেই থাকে। নিতান্ত খিদে না পেলে বসতিতে আসে না তারা। কিন্তু এই ভারতেই আছে এমন এক বাঘ পরিবার, টানা ৪-৫ বছর যারা মানুষের সঙ্গেই বাস করছে। হ্যাঁ, এমন বিরল দৃশ্যই দেখা যাবে মহারাষ্ট্রের চন্দ্রপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকায়।
চন্দ্রপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিকটেই অবস্থিত তাদোবা-আন্ধেরি টাইগার রিজার্ভ। কিন্তু সেখানে বাঘের সংখ্যা এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে তাদের মিলেমিশে থাকাই প্রায় সম্ভব হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে অনেক বাঘই লোকালয়ে ঢুকে পড়ে অনেক সময়। তেমনই এসে পড়েছিল এই দম্পতি। কিন্তু বাকিদের মতো এরা আর ফিরে যায়নি। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের এক পরিত্যক্ত এলাকাতেই সুখে ঘরকন্না শুরু করে তারা।
১১১৭ হেক্টর জমিতে বিদ্যুৎ প্রক্রিয়াকরণের পাশাপাশি প্রায় ১০ হাজার কর্মচারীর আবাসস্থল। তারাও আপন করে নিয়েছিল এই দম্পতিকে। ক্রমে এক অদ্ভুত বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাদের মধ্যে। কিছুদিনের মধ্যেই ৩টি শিশু সন্তানের জন্ম দেয় এই দম্পতি। তারাও বেড়ে উঠতে শুরু করে এই এলাকাতেই। আর সেইসঙ্গে বদলেছে তাদের স্বভাবও।
চন্দ্রপুর বনবিভাগের মুখ্য সংরক্ষক ভি. এস. রামারাও জানিয়েছেন, এদের খাদ্যাভ্যাস এবং বাসস্থানের অভ্যাসও বদলে গিয়েছে ইতিমধ্যে। এখন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে চড়ে বেড়ানো গবাদি পশুই তাদের খাদ্যে পরিণত হয়েছে। এমনকি এর মধ্যে শিশু বাঘদের একটিকে তেলাঙ্গানার বনভূমিতে নিয়ে যাওয়া হলেও তারা সে সেখানে টিকে থাকতে পারেনি। অসুস্থ অবস্থায় তাকে আবার ফিরিয়ে আনা হয় চন্দ্রপুরে।
আরও পড়ুন
২০১৮ সালে ভারতেই ঘটেছে বৃহত্তম বাঘসুমারি, স্বীকৃতি দিল গিনেস বুক
তবে বাঘের স্বভাবের এই পরিবর্তন প্রকৃতির এক নেতিবাচক পরিবর্তনের কথাই জানাচ্ছে, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর তার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়াও দরকার। কিছুদিনের মধ্যেই আন্ধেরি টাইগার রিজার্ভ থেকে বেশ কিছু বাঘকে দেশের অন্যান্য বনাঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দেশের বন্যপ্রাণ সংরক্ষক প্রতিষ্ঠানের আধিকারিকরা। কিন্তু যেভাবে ক্রমশ বনভূমি হারিয়ে যাচ্ছে, সেখানে আদৌ কি বাঁচানো সম্ভব হবে অসংখ্য প্রাণীকে? এর উত্তর পেতে অবশ্য সময় লাগবে।
আরও পড়ুন
মহারাষ্ট্রে একটি পূর্ণবয়স্ক বাঘ ও দুটি শাবকের মৃত্যু, সন্দেহ বিষক্রিয়ার দিকেই
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
৮ বছরে দেশজুড়ে মৃত ৭৫০ বাঘ, জানাল জাতীয় ব্যাঘ্র সুরক্ষা দপ্তর