গ্রিনল্যান্ড থেকে শুরু করে নর্থপোল কিংবা আন্টার্কটিকা— সব জায়গাতেই থাবা বসিয়েছে বিশ্ব উষ্ণায়ন। এবার তার প্রকোপে গলতে বসল বিশ্বের সবথেকে প্রশস্ততম হিমবাহ ‘থোয়েটেস’ (Thwaites)। আন্টার্কটিকার এই হিমবাহ গলে গেলে কী পরিণতি হবে বিশ্বের? তা গলতেই বা কতদিন সময় লাগবে? এসব অজানা আশঙ্কার উত্তর দিতে এবার গবেষকরা পাড়ি দিলেন আন্টার্কটিকায় (Antarctica)। আর শুরুতেই উঠে এল চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য।
গত বৃহস্পতিবারেই আন্টার্কটিকায় থোয়েটেস মিশনে নামলেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ৩২ জন বিজ্ঞানীর একটি বিশেষজ্ঞদল। আগামী দু’মাস ধরে চলছে এই মিশন। খুঁটিয়ে থোয়েটেসের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখা হবে। কীভাবে তার গলনের হার ধীর করা যায়, তাও পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখবেন গবেষকরা। গোটা প্রকল্পের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য যৌথভাবে বরাদ্দ করেছে ৫০ মিলিয়ন ডলার।
আয়তনে ইংল্যান্ডের থেকেও বেশ খানিকটা বড়ো থোয়েটেস হিমাবাহ। তবে ১ লক্ষ ৯২ হাজার বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত এই হিমবাহের চরিত্র খানিক অদ্ভুত। অন্যান্য হিমবাহের মতো থোয়েটেস একদম জমাট বাঁধা বরফের স্তূপ নয়। বরং, তার উপরিতলের তুষার অন্যদের তুলনায় অনেকটাই ভঙ্গুর। ফলে, উষ্ণায়ন আরও দ্রুত থাবা বসাচ্ছে এই হিমবাহে। শুরুতেই তার গায়ে অসংখ্য ফাটল লক্ষ করেছেন গবেষকরা। এক বছরের মধ্যেই এই ফাটলের দৈর্ঘ্য পৌঁছাতে পারে মোটামুটি ৬ মাইল। এমনই আন্দাজ গবেষকদের।
পরিসংখ্যান বলছে প্রতি বছর ৫০ বিলিয়ন মেট্রিক টন বরফ গলছে থোয়েটেস থেকে। প্রাথমিকভাবে গবেষকদের অভিমত, আগামী এক শতকের মধ্যেই সম্পূর্ণভাবে গলে যেতে চলেছে এই দৈত্যাকার হিমবাহ। তার অন্যতম কারণ থোয়েটেসকে কেন্দ্র করে থাকা আমুন্ডসেন সাগরের উষ্ণ জলস্রোত। ভঙ্গুর উপরিতলের পাশাপাশি জলের তলাতেও ক্রমশ ক্ষয়ীভূত হচ্ছে থোয়েটেস। কেবলমাত্র এই একটি হিমবাহের গলনেই সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধি পাবে প্রায় ২ ফুট। ফলে ‘ডুমস ডে’-খ্যাত এই হিমবাহ আক্ষরিক অর্থেই ‘ডুমস ডে’ হয়ে উঠতে চলেছে মানব সভ্যতার কাছে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। এখন দেখার এই গলন কমিয়ে আনার আদৌ কোনো উপায় খুঁজে বার করতে পারেন কিনা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা…
আরও পড়ুন
আয়তনে ব্রিটেনের সমান, এক দশকের মধ্যেই গলে যেতে পারে আন্টার্কটিকার হিমবাহ
Powered by Froala Editor