মৃত্যুমুখ থেকে বারবার ফেরা, তিনটি পা নিয়ে বেঁচে থাকার অসম লড়াই সিংহের

দুর্ঘটনায় জঘম হয়েছে একটি পা। মাত্র তিনটি পা নিয়ে সেভাবে চলাফেরা করতে পারেন না পশুরাজ। তাই আজকাল দিনের বেশিরভাগ সময়টাই কেটে যায় গাছের উপরে। মাত্র ৬ বছরের জীবনের উপর দিয়ে তো কম ঝড়-ঝঞ্ঝা যায়নি। বস্তুত উগান্ডার জঙ্গলের জ্যাকোব নামের এই সিংহটি যে আজও বেঁচে আছে, তাই সংরক্ষণকর্মীদের কাছে এক পরম বিস্ময়ের কারণ। চারবার নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরেছে জ্যাকোব। এর মধ্যে চোরাশিকারীদের ফাঁদে পড়া থেকে শুরু করে খাদ্যে বিষক্রিয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। প্রতিবারই পশু-চিকিৎসকরা ভেবেছিলেন, এই বুঝি শেষ লড়াই। কিন্তু সবাইকে অবাক করে আবার সুস্থ দেহে ফিরে এসেছে জ্যাকোব। একটিমাত্র জখম পা ছাড়া বাকি সব দিক থেকেই সে পুরোপুরি সুস্থ বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।

বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সমস্ত জঙ্গল মিলিয়ে ২০ হাজারের মতো সিংহ বেঁচে আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে সিংহ এই মুহূর্তে অন্যতম বিপন্ন প্রাণীদের একটি। ক্রমশ চোরাশিকারীদের কবলে পড়ে তাদের সংখ্যা আরও হ্রাস পাচ্ছে। বিশেষত চিন এবং মধ্য-এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলিতে সিংহের দাঁর, হাড় এবং চামড়ার চাহিদা প্রচুর। নানারকম জরিবুটি তৈরির কাজে এবং সৌভাগ্যের প্রতীক হিসাবে ধরা হয় সিংহের দেহাংশকে। আর মানুষের এই কুসংস্কারের প্রভাবে তাদের সংখ্যা আরও কমে আসছে। তবে জ্যাকোবের এই বারবার মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে আসা প্রমাণ করে, বেঁচে থাকার সামান্য সম্ভাবনা থাকলেও সিংহরা তা কাজে লাগাতে জানে। ফলে এই লড়াই যতটা কঠিন মনে করা হয়েছিল, ততটা নয়।

২০১৩ সালে উগান্ডার ভিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্কে জন্ম জ্যাকোবের। জন্মের কিছুদিনের মধ্যেই দলের সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে সে। তখনও তার সঙ্গে রেডিও যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি। ফলে বেশ কিছুক্ষণ অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে। এরপর চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখেন, তার শরীরে বিষক্রিয়া ধরা পড়েছে। শুধু জ্যাকোব নয়, দলের আরও ৫টি সিংহের শরীরে বিষক্রিয়া ধরা পড়ে। অনুমান করা হয় চোরাশিকারীরাই কোনো বিষ মাখানো খাবার দিয়েছিল তাদের। বাকি ৫টি সিংহকে বাঁচানো না গেলেও জ্যাকোব অতি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।

এরপর জ্যাকোবের গলায় একটি রেডিও সেন্সর বেল্ট পরিয়ে দেয় পার্ক কর্তৃপক্ষ। ফলে কখনও তার চলাচল হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলেই সঙ্গে সঙ্গে টের পাওয়া যায়। কিন্তু তাতে দুর্ঘটনা এড়ানো যায়নি। কিছুদিন পরেই চোরাশিকারীদের ফাঁদে পড়ে জ্যাকোব। সেই ফাঁদে শ্বাস নেওয়ার মতো জায়গাও ছিল না। দীর্ঘক্ষণ শ্বাসরুদ্ধ হয়ে থাকার পরেও সামান্য চিকিৎসাতেই সেরে উঠেছে সে। ২০১৯ সালে জঙ্গলে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় তার শরীরের উপর দিয়ে চলে যায় একটি বুনো মহিষের দল। তাদের খুরের আঘাতে জ্যাকোবের পাঁজরের বেশ কয়েকটি হাড় ভেঙে যায়। কিন্তু সেই আঘাতও সেরে যায় কিছুদিনের মধ্যেই। সবচেয়ে বড়ো দুর্ঘটনাটি ঘটে গতবছর আগস্ট মাসে। আবারও চোরাশিকারীদের ফাঁদে পড়ে জ্যাকোব। তবে সেখান থেকে তাকে বের করে আনার সময় পিছনের দিকের একটি পা গুরুতর জখম হয়। বহু চেষ্টার পরেও সেই পা-টি  বাঁচাতে পারেননি চিকিৎসকরা। কেটে বাদ দিতে হয়। বনকর্মীরা চিন্তিত ছিলেন, মাত্র ৩টি পা নিয়ে কি বেঁচে থাকতে পারবে সিংহটি? কিন্তু সবাইকে অবাক করে ১ বছর ধরে বহাল তবিয়তে বেঁচে আছে সে। শুধু আজকাল মনটা সবসময়ই একটু খারাপ থাকে। এতগুলো দুর্ঘটনা কাটিয়েও তার টিকে থাকার লড়াই সত্যিই আশ্চর্য করে।

আরও পড়ুন
সিংহ-শিকার ছেড়ে রক্ষাকর্তার ভূমিকায় কেনিয়ার মাসাই যোদ্ধারা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
পৃথিবীর প্রথম কৃত্রিম গর্ভধারণে জন্ম-নেওয়া সিংহ, বেড়ে উঠছে মানুষের পরিচর্যাতেই