“স্বাধীনতার অনেক আগে জন্ম তাঁর। জন্ম থেকেই তাঁর দুটি ইন্দ্রিয় কাজ করে না। কোনোকিছু দেখতে বা শুনতে পান না। স্বাভাবিকভাবেই কথাও বলতে পারেন না। আশ্রয়ের জন্য প্রায় সারা দেশ ঘুরতে হয়েছে তাঁকে। তবে এসবের মধ্যেও তাঁর জেদ, কাজ না করে একদিনও খাবার খাবেন না। কারোর দয়ায় যেন বেঁচে থাকতে না হয়। আজকে যখন বহু মানুষ কাজ থেকে পালানোর রাস্তা খুঁজছেন, তখন এমন একজন মানুষ সমস্ত প্রতিবন্ধকতা নিয়েও কাজ করে চলেছেন। এই জীবনটাই আমাকে ছবি বানাতে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল।” বলছিলেন তথ্যচিত্র নির্মাতা সৌম্যদীপ ঘোষ চৌধুরী।
গুজরাটের জন্মান্ধ এবং জন্মবধির বৃদ্ধার জীবনকে নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্র ‘ওয়ার্ক ইন প্রোগ্রেস’ চারটি বিভাগে ‘গারোয়া পুরস্কার’ লাভ করেছে। ২৫ এপ্রিল সাও-পাওলো মাসিক চলচ্চিত্র উৎসব কর্তৃপক্ষ থেকে এই পুরস্কার প্রাপ্তির কথা জানতে পারেন নির্দেশক। শ্রেষ্ঠ তথ্যচিত্রের পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ তথ্যচিত্র নির্দেশকের পুরস্কার পেয়েছেন সৌম্যদীপ ঘোষ চৌধুরী। এছাড়াও শ্রেষ্ঠ সিনেমাটোগ্রাফার এবং শ্রেষ্ঠ এডিটরের সম্মান পেয়েছেন শুভদীপ দে এবং অনির্বাণ মাইতি। অনির্বাণ মাইতির কথায়, “এই ছবি বানানোর সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ ছিল অর্থনৈতিক। তথ্যচিত্র তৈরির বিষয়ে তো বাঙালিদের তেমন আগ্রহ থাকে না।” তাঁর কথায়, “সিনেমার নাম যেমন ‘ওয়ার্ক ইন প্রোগ্রেস’, যে কপি আমরা পাঠিয়েছিলাম তাও ছিল ওয়ার্ক ইন প্রোগ্রেস। তখনও আমার অনেকটা কাজ বাকি। কালার কারেকশন হয়নি, অডিও মিক্সিং-এর কাজ শেষ হয়নি। তারপরেও শ্রেষ্ঠ সম্পাদকের সম্মান পাওয়া সত্যিই আশ্চর্যের।”
তবে সৌম্যদীপ ঘোষ চৌধুরীর কথায়, “আমি তো বাণিজ্যিক ছবি তৈরি করতে আসিনি। প্রতিকূলতা তো থাকবেই।” তিনি ১৫ মিনিটের তথ্যচিত্রে এমন একজন মানুষের জীবনকে তুলে ধরেছেন, যিনি যেখানে আশ্রয় পান, সেই বাড়ির জামাকাপর কাচা হলে তা পাট করে গুছিয়ে রাখেন। আর এই কাজের বিনিময়েই দুবেলা খাবার গ্রহণ করেন। কোনোদিন মেঘলা আবহাওয়া থাকলে বা অন্য কোনো কারণে জামাকাপর কাচা না হলে সেদিন কোনো খাবার গ্রহণ করেন না। বিনা পরিশ্রমে তিনি কিছুই নিতে রাজি নন। “এমন একজন মানুষের ৮৫ বছরের জীবনকে ১৫ মিনিটের ছবিতে তুলে ধরাই তো সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ।” বলছিলেন নির্দেশক। তাঁর কথায় উঠে এল সিনেমা তৈরির পিছনের গল্পও। জন্মবধির এবং জন্মান্ধ একজন মানুষকে শ্যুটিং-এর জন্য কোনো নির্দেশ দেওয়া সম্ভব নয়। সৌম্যদীপবাবু বলছিলেন, “আমাদের তাই সারাদিন ক্যামেরা নিয়ে বসে থাকতে হয়েছে ওনার সামনে। উনি হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন আমরা আছি। হাত বাড়িয়ে ক্যামেরা স্পর্শ করেও দেখেছেন। সেই মুহূর্তটুকুও তুলে রেখেছি ১৫ মিনিটের তথ্যচিত্রে।”
আরও পড়ুন
‘বাবু পেলে ছবি বানাব, এখন লক্ষ্য বিজেপিকে হারানো’, বলছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অর্জুন
২০১৮ সালে যখন সিনেমার কাজ শুরু হয় তখন বৃদ্ধার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। আর ছবির ফাইনাল কাট তৈরি হওয়ার আগেই মৃত্যু হয় তাঁর। তাঁকে নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্র যে আন্তর্জাতিক সম্মান পেল, এ-কথা জেনে যেতে পারলেন না। শুধুই তো ‘গারোয়া পুরস্কার’ নয়, কাল্ট, গালি, রিলসের মতো আন্তর্জাতিক উৎসবেও জায়গা পেয়েছিল এই তথ্যচিত্র। প্রচলিত বাণিজ্যিক ছবির বাইরে গিয়ে এমন ব্যতিক্রমী ছবিই বানাতে চান সৌম্যদীপবাবু। এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হয়তো তাঁর সেই স্বপ্নপূরণের রাস্তা অনেকটা সহজ করে তুলবে।
আরও পড়ুন
প্রথম কোনো ভারতীয় সিরিজ হিসাবে এমি পুরস্কার জয় ‘দিল্লি ক্রাইম’-এর
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
পরশু মুক্তি, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালকের সিনেমা হল পেল না খোদ কলকাতায়