মার্কিন সীমান্তে জনস্রোত, আশ্রয়প্রার্থী হাজার হাজার অভিভাবকহীন শিশু

বিগত কয়েকদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেখা যাচ্ছে হাজার হাজার কিশোর-কিশোরীদের ভিড়। হ্যাঁ, তারা সকলেই অভিবাসন প্রত্যাশী। তবে আশ্চর্যের বিষয় তাদের সঙ্গে অভিভাবক নেই কোনো। মার্কিন সেনাবাহিনীর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মার্চ মাসে সে-দেশে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১৯ হাজার অভিভাবকহীন শরণার্থী শিশু। ফেব্রুয়ারির তুলনায় যে সংখ্যাটা প্রায় দ্বিগুণ।

মার্কিন সূত্রের খবর হন্ডুরাস, গুয়াতেমালা, সালভাদোর, মেক্সিকো, ইকুয়েডরের মতো মধ্য আমেরিকার দেশ থেকেই জড়ো হচ্ছে বিপুল পরিমাণে শরণার্থী। দারিদ্র, ড্রাগ মাফিয়াদের রাজত্ব আর সাম্প্রদায়িক হিংসা থেকে মুক্তি পেতেই এমন জনস্রোত নেমেছে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। তবে তৎপরতার সঙ্গেই পদক্ষেপ নিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। অভিবাসী শিশুদের অবিলম্বে আশ্রয়ের বন্দোবস্ত করে দেওয়ার জন্য শরণার্থী পুনর্বাসন অফিসে জানানো হয়েছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে নেমেছে স্বাস্থ্য এবং মানবাধিকার দপ্তরও। টেক্সাসে জরুরি অবস্থায় তৈরি করা হচ্ছে অস্থায়ী আবাসস্থল। মার্কিন প্রশাসনের সূত্রে জানানো হয়েছে, যে সকল অভিবাসী শিশুদের আত্মীয় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। তাছাড়াও সাধারণ নাগরিকদের শিশু দত্তক নেওয়ার পথও খুলে রেখেছে মার্কিন প্রশাসন। সেই যাচাই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার পরেই অস্থায়ী আবাসস্থল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে তাদের।

কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় হঠাৎ করে এত অভিবাসী শিশুর ভিড় জমছে কেন মার্কিন সীমান্তে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে পিছিয়ে যেতে হবে কয়েক বছর। মার্কিন প্রদেশে তখন ট্রাম্প জমানা। শরণার্থীদের ব্যাপারে চিরকালই রাষ্ট্রপতি স্পর্শকাতর ছিলেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ‘টাইটেল ৪২’ নীতির মাধ্যমে কড়াকড়িভাবেই অভিবাসনের প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। তবে এই জায়গাটায় অনেকটাই নমনীয় ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ক্ষমতায় আসার পরই তিনি বদল আনেন এই নীতির। জানানো হয়, অপ্রাপ্তবয়স্কদের সম্পূর্ণ অনুমতি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়গ্রহণের। আর সেই কারণেই হঠাৎ এই জনস্রোত। সন্তানদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করতে, অনেকে তাদের পাঠিয়ে দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের সীমানায়।

আরও পড়ুন
আন্তর্জাতিক অভিবাসনের নিরিখে শীর্ষে ভারত, দেশছাড়া ১.৮ কোটি ভারতীয়

তবে অভিবাসী সমস্যা নিয়ে গত মাসেই মেক্সিকোর সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন জো বাইডেন। অভিবাসনের মতো বড়ো একটি আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধান করতে, মধ্য আমেরিকার দেশগুলির অর্থনীতি ও সমাজনীতিতে বদল আনার কথাও প্রস্তাব দেন তিনি। কিন্তু সেই প্রস্তাব কতটা কার্যকরী হবে মধ্য আমেরিকার পিছিয়ে পড়া দেশগুলিতে, সেই জায়গাতেই থেকে যাচ্ছে প্রশ্ন।

আরও পড়ুন
অভিবাসীদের ন্যূনতম স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতেও ব্যর্থ ভারত, জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক রিপোর্ট

তবে বাইডেনের এই খোলামেলা মনোভাব এবং অভিবাসন নীতি নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে রিপাবলিকানরা। এমনকি প্রশ্ন তুলছেন বাইডেনের নিজের প্রশাসনের অনেক আধিকারিকও। হিসাব বলছে, ৪০ শতাংশ মার্কিনিই বিষয়টাকে ভালো চোখে দেখছেন না। অন্যদিকে দেশের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে মার্কিন সীমান্তে জোর দেওয়া হচ্ছে নজরদারিতে। আর সে জন্যেই বাইডেনকে বিঁধেছে মেক্সিকোর একাধিক মানবাধিকার সংস্থা। শরণার্থীডের ওপরে অত্যাচার বাড়বে বলেই আশঙ্কা তাদের। সব মিলিয়ে বাইডেনের এই উদারপন্থী মানসিকতাই এখন শাঁখের করাতের মুখে…

Powered by Froala Editor