গত ৩০ অক্টোবরের কথা। রাত ১০টা পরই থেমে গিয়েছিল ব্রিটেনের (Britain) সমস্ত ঘড়ি। এর ঠিক পাঁচ ঘণ্টা পর ফের আবর্তিত হতে শুরু করে ঘড়ির কাঁটা। অবশ্য তখন সময় পিছিয়ে গেছে ১ ঘণ্টা। অর্থাৎ, ব্রিটেনের কিংবদন্তি সব স্থাপত্যের সংযুক্ত ঘড়িতেই তখন বাজে রাত ২টো। হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। একটি নয়, ঋতু বিশেষে দুটি টাইম জোন বা প্রমাণ সময়কে ধরেই সময় নির্ধারণ করা হয় ব্রিটেনে। শীতের দিনে সন্ধে নামে দ্রুত। তাই দিনের আলোকে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগানোর জন্যই এই ব্যবস্থা। অবশ্য বিগত কয়েক বছর মহামারীর কারণে ছেদ পড়েছিল এই রীতিতে। ব্যবহৃত হয়েছিল একটিই টাইম জোন (Time Zone)।
সে যাই হোক না কেন, তবে এই প্রবন্ধ ব্রিটেনের টাইম জোন বা প্রমাণ সময় নিয়ে নয়। এই গল্পের নেপথ্যে রয়েছেন দুই ইংরেজ প্রযুক্তিবিদ— আলেক্স জেফরি এবং আয়ান ওয়েস্টওয়ার্থ। রাতারাতি এই টাইমজোন পরিবর্তনের দায়িত্ব পালন করে তুলেছেন ব্রিটেনের এই দুই ক্লক-মেকার। আর ব্রিটেনের বিভিন্ন ভাস্কর্য, ঐতিহাসিক স্থান এবং প্রশাসনিক দপ্তরে ঝোলানো ঘড়িগুলির সময় পরিবর্তন করেন তাঁরাই।
শুনতে অতি সহজ হলেও, বিষয়টা যথেষ্ট জটিল। ওয়েস্টমিনস্টারের গ্রেট ক্লক ‘বিগ বেন’ থেকে শুরু করে ওয়েস্টমিনস্টার প্রাসাদের গ্র্যান্ডক্লক কিংবা বাকিংহাম প্যালেসের অ্যান্টিক টাইমপিস— সবমিলিয়ে প্রায় হাজার দুয়েক ঘড়ির সময় পরিবর্তন করতে হয় অ্যালেক্স এবং আয়ানকে। তাও মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই। যা প্রায় অসম্ভব বললেও বোধ হয় কম বলা হয়।
গত ৩০ অক্টোবর ছিল রোববার। অবশ্য তার দু’দিন আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল এই সময়াভিযানের তোড়জোড়। শুক্রবার ব্রিটেনের সমস্ত অফিস বন্ধ হওয়ার পর থেকেই ঘড়ির সময় বদল এবং ঘড়ি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু করেছিলেন অ্যালেক্স ও আয়ান। সে-রাতেই সবমিলিয়ে প্রায় ৫০০ ঘড়ির সময় বদলান তাঁরা। পরদিন শুরু হয়, ব্রিটেনের বিভিন্ন রাজপ্রাসাদ ও ঐতিহাসিক ভবনে রাখা ঐতিহ্যবাহী ঘড়ির সংরক্ষণ প্রকল্প। তবে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বিষয় ছিল, ব্রিটেনের বিভিন্ন স্থাপত্যে সংযুক্ত ঘড়িগুলি পুনরুদ্ধার করা।
শনিবার ও রবিবার ব্রিটেনের সমস্ত সরকারি দপ্তর ও রাজপ্রাসাদে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ না হওয়ায় ঘড়ি মেরামতের জন্য যথেষ্ট সময় পেয়েছিলেন অ্যালেক্স ও আয়ান। তবে বিগ বেন কিংবা অন্যান্য ক্লক-টাওয়ারগুলির কাজ শেষ করতে হয়েছিল মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। আরও বিশেষভাবে বলতে গেলে মাত্র ৫ ঘণ্টায় লন্ডন-সহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলির ক্লক টাওয়ারে সময় পরিবর্তন করতে হয়েছিল তাঁদের। রাত দশটায় বন্ধ করা হয়েছিল সমস্ত ক্লক টাওয়ার। নিভিয়ে রাখা হয়েছিল টাওয়ার আলো। একদিকে যখন অক্লান্তভাবে ঘড়ি মেরামত ও সময় বদলানোর কাজ করছিলেন, অন্যদিকে তখন অ্যালেক্স ও আয়ানের জন্য গাড়ি নিয়ে হাজির ছিলেন একদল প্রশাসনিক আধিকারিক। না হলে, মাত্র পাঁচ ঘণ্টায় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছানো যাবে কীভাবে?
গত সপ্তাহে, সবমিলিয়ে ৪৮ ঘণ্টায় মোট ২ হাজারটি ঘড়ি সারিয়ে রীতিমতো নজির গড়েছেন ব্রিটেনের এই দুই প্রযুক্তিবিদ। তবে মজার বিষয় হল, এই ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মহামারীর আগেও এই ভূমিকায় দেখা যেত তাঁদের। তিন বছরের দীর্ঘ বিরতির পর এবার ফের হারানো ভূমিকায় ফিরতে পারে উচ্ছ্বসিত দুই ‘ক্লক-ম্যান’-ই (Clock-Man)…
Powered by Froala Editor