শিল্পের মতোই বিচিত্র শিল্পীদের জীবন। মৃত্যুতে তার একটা অধ্যায় শেষ হয় মাত্র। কিন্তু জীবনের পরতে পরতে রহস্য আর রোমাঞ্চের বুনট কোথাও শিথিল হয় না। তাই মৃত্যুর ৬ দশক পরে এসেও ফ্রিডা কাহলোর জীবনের নানা ঘটনা আমাদের অবাক করে। আর সেই অবাক করা অনুভূতিকেই আরও খানিকটা বাড়িয়ে দিয়ে যায় সম্প্রতি প্রচারের আলোয় আসা একটি ফটোগ্রাফ। মেক্সিকান শিল্পীকে আমরা এখানে দেখতে পাব একেবারে ভারতীয় মহিলার বেশে। সাদা ব্লাউজের সঙ্গে ছাপা শাড়ি, আবার তার সঙ্গে মানানসই কানের দুল; ফ্রিদা কাহলোর প্রায় অচর্চিত ড্রেসিং সেন্স নিয়ে আবার নতুন করে ভাবনাচিন্তার অবকাশ বাড়িয়ে দেয় এই ছবি।
শাড়ির মধ্যে যে অদ্ভুত লাবণ্য আছে, তা যেন সবসময় হাতছানি দিয়ে যায়। বিদেশি তন্বীরাও যেমন সাজের জন্য নানা সময় শাড়িকেই বেছে নেন, আবার তাঁদের শাড়িতে সেজে উঠতে দেখে ভারতীয়দের চোখেও যেন একটা ভালোলাগা ফুটে ওঠে। আর এই সৌন্দর্যকে যেন আরও বেশি করে ফুটিয়ে তুলছে দুদিকে দুই ভারতীয় মহিলার উপস্থিতি। এঁদের পরিচয় নিয়েও রয়েছে জল্পনা। কেউ কেউ বলেন, এই দুজন আসলে ভারতীয় রাজনীতিবিদ বিজয়লক্ষ্মী পাণ্ডের দুই মেয়ে।
তবে এই ছবি আবার নতুন করে মেক্সিকান শিল্পীর জীবনের দিকে ফিরে তাকানোর একটা সুযোগ করে দিল। কাসা আজুল নামের যে বাড়িতে থেকেছেন সারাজীবন, সেখানেই যে তাঁর কত বিচিত্র সাজের সরঞ্জাম লুকিয়ে আছে তার হিসাব হয়তো করেননি কেউই। পা ঢাকা গাউন, অথবা ক্যাট-আই সানগ্লাস, অথবা নেইল পলিশ বা লিপস্টিক;এই সবকিছুর সঙ্গেই তো জড়িয়ে আছে শিল্পীর জীবন। অথচ মৃত্যুর এতদিন পরেও সেসব সম্বন্ধে তেমনভাবে চর্চা হয়নি। ফ্রিডা কাহলো তো শুধু ছবিকেই দেখাতেন না, দর্শকদের সামনে তুলে ধরতেন নিজেকেও। তাঁর বেশিরভাগ ছবিই তাই সেলফ পোট্রেট ধরনের।
তবু তো এই পৃথিবীতে এখনও নিজের স্বতন্ত্র অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই মেয়েদের। তাই লুভ্যের মিউজিয়ামে প্রথম স্থান পেয়েছিল যে মেক্সিকান শিল্পীর ছবি, তাঁকেই মৃত্যুর পর পরিচিত হতে হয় স্বামীর নামে। প্রত্যেকেই চিনতেন দিয়েগো রিভেরার স্ত্রী হিসাবে। কিন্তু নিজের সত্তা যেন কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল। ঠিক যেভাবে হারিয়ে গিয়েছিল ফ্রিডার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন। সেই পথদুর্ঘটনার স্মৃতি তাঁকে সারা জীবন তারা করে বেরিয়েছিল। নাহলে হয়তো জীবনটাই অন্যরকম হত। ২১ বছর বয়সে বড় একজনের কাছে সারা জীবন সমর্পণ করতে হত না।
আরও পড়ুন
ওয়েস্ট ইন্ডিজে প্রথম ভারতীয় শিল্পী হেমন্ত, একশো গাড়ির কনভয় অনুসরণ করল তাঁকে
তবে এসবের পরেও ১৯৭০-এর দশক থেকেই আবার নতুন করে ফ্রিডার জীবনের দিকে ফিরে তাকাতে শুরু করেছেন একদল শিল্প-অনুরাগী মানুষ। উঠে আসতে থাকে তাঁর রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে নানা তথ্যও। সেখানেও তিনি শুধু রিভেরার স্ত্রী হিসাবে নয়, বরং স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার একটা মঞ্চ খুলে দিতে চেয়েছিলেন। যে মঞ্চে দাঁড়িয়ে মেয়েরা নিজেদের কথা বলতে পারবেন। যেখানে দাঁড়িয়ে প্রান্তিক যৌনতার মানুষরা নিজেদের স্বাতন্ত্র্যের কথা বলতে পারবে। এইসব জীবনের ছবিই তো তিনি আঁকতে চেয়েছেন। কিন্তু সেসব শুধুই ইশারায়-ইঙ্গিতে। ছবির সংকেতে জানিয়ে দিয়ে গিয়েছেন নিজের জীবনের কথাও। নিজের বাইসেক্সুয়াল চরিত্রের কথাও প্রকাশ করেছেন ছবির মধ্যেই। এইসব কথা শুনতে সেদিন প্রস্তুত ছিল না মেক্সিকো। আজও কি প্রস্তুত পৃথিবী? তবে শাড়ি পরিহিতা, ভারতীয় লাবণ্যের দ্যোতক ফ্রিডাকে দেখতে সেদিন মানুষ প্রস্তুত না থাকলেও আজ সেই ছবি অনেকের চোখ টানছে। ব্যক্তিত্বময়ী ফ্রিডা যে এমনই...
আরও পড়ুন
মৃত্যুর পর সমস্ত লেখা পুড়িয়ে দিতে বলেছিলেন কাফকা, অনুরোধ রাখেননি বন্ধু
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
দরিদ্র চা-বিক্রেতার মেয়ে থেকে বায়ুসেনার পাইলট, মধ্যপ্রদেশের কন্যার স্বপ্নপূরণের গল্প