বাড়িতে কারোর প্রচণ্ড শরীর খারাপ। হয়ত হাসপাতালেও ভর্তি করা হতে পারে। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে হাসপাতাল অব্দি কে নিয়ে যাবে অসুস্থ মানুষটিকে? অ্যাম্বুলেন্সেরও তো সেরকম বন্দোবস্ত নেই। এরকম সময়ই সহায় হন একজন; ‘বাইক-দাদা’। যে-কোনো সময় একটা ফোন করলেই ছুটে আসেন তিনি। সঙ্গে থাকে নিজের বাইক অ্যাম্বুলেন্স। রোগীকে বসিয়ে চলে যান কাছের হাসপাতালে।
পশ্চিমবঙ্গের রাজাডাঙা গ্রামের বাসিন্দা করিমুল হক। সাধারণই, আমার-আপনার মতো। সব ঠিকই ছিল পরিবারে। একা মানুষ, সঙ্গে ছিলেন শুধু মা। আজ থেকে বছর কুড়ি আগের ঘটনা। প্রবল অসুস্থ হয়ে পড়েন মা। গ্রামের অবস্থা তখন আরও খারাপ। মা’কে নিয়ে করিমুল হাসপাতালে যাবেন, তারও সুযোগ নেই। অনেক চেষ্টা করলেন তিনি; কিন্তু সবই বিফলে গেল। মারা গেলেন বৃদ্ধা মা। শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারলেন না, এই দুঃখ কুরে কুরে খেতে লাগল করিমুলকে। এটাই বদলে দিয়ে গেল পুরো ছবিটা।
আরও পড়ুন
যোগাযোগ নেই বাকি পৃথিবীর সঙ্গে, ৩০ বছর আলাস্কায় একা কাটিয়েছেন এই ব্যক্তি
মায়ের মৃত্যুর পরই করিমুল হক ঠিক করলেন, আর কোনো গ্রামবাসীর যাতে এরকম না হয়, তার খেয়াল রাখবেন তিনি। বিনা চিকিৎসায় কিছুতেই চলে যেতে দেবেন না কাউকে। একটা বাইক কিনে নিজেই তৈরি করলেন অ্যাম্বুলেন্স। বাইক অ্যাম্বুলেন্স! গোটা গ্রামে হইচই পড়ে গেল। এসব ১৯ বছর আগের কথা। তখন থেকে আজ পর্যন্ত নিজের দায়িত্ব থেকে এক চুলও সরেননি করিমুল। সকাল-বিকেল, রাত-দিন যখনই ফোন বেজে ওঠে, বাইক নিয়ে ছুটে যান তিনি। এমনকি অ্যাম্বুলেন্সে মজুত থাকে ফার্স্ট এইড কিটও। যাতে সমস্ত দিক থেকে রোগীর সুবিধা হয়। এইসবের জন্য একটি পয়সাও নেন না করিমুলবাবু। এটা তাঁর কাছে উপার্জনের জায়গা নয়। মানুষের বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানো।
এভাবেই বাইক অ্যাম্বুলেন্স ছুটছে জল-জঙ্গল পেরিয়ে। আজ গোটা গ্রামের ভরসা বাইক-দাদা করিমুল হক। এমন মানুষ যদি সমস্ত জায়গায় ছড়িয়ে থাকেণ, তাহলে সমাজটা কত সুন্দর থাকে একবার ভাবুন তো!