অপরিণত শিশুমৃত্যুতে শীর্ষে কলকাতা, ঘাতক কয়লাজনিত দূষণ

দূষণের মাত্রার নিরিখে দিল্লির থেকে পিছিয়ে থাকলেও ক্রমশ আশঙ্কাজনক হয়ে উঠছে কলকাতার পরিস্থিতি। কয়েক মাস আগে প্রকাশিত জাতীয় রিপোর্টে উঠে এসেছিল সেই তথ্য। কিন্তু এই দূষণজনিত কারণে কতটা বিষিয়ে উঠেছে কলকাতার পরিস্থিতি? এবার আন্তর্জাতিক সংস্থা সি৪০-এর সমীক্ষায় সামনে এল ভয়াবহ বাস্তবের ছবি। তাপবিদ্যুৎ থেকে উৎপন্ন কয়লাজাত বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে অপরিণত শিশুমৃত্যুর (Premature Deaths) ঘটনায় বিশ্বের মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে কলকাতা (Kolkata)।

জলবায়ু পরিবর্তনের নিরিখে বিশ্বের ৬১টি মেগাসিটির ওপর একটি বিশেষ সমীক্ষা চালিয়েছিল সি৪০ (C40)। বছর দুয়েক আগে ২০১৯ সালে শুরু হয়েছিল তথ্য সংগ্রহের কাজ। সম্প্রতি প্রকাশ্যে এল সেই চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট। জানা যাচ্ছে, তাপবিদ্যুৎজনিত কারণে কলকাতাতে দূষণের হার সবচেয়ে বেশি। আর সেই কারণেই অপরিণত অবস্থাতেই মৃত্যু হচ্ছে বহু শিশুর। পরিসংখ্যান অনুযায়ী সেই তালিকায় শীর্ষস্থানেই রয়েছে কলকাতা। উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ২০৩০ সালের মধ্যে সংখ্যাটা ১০ হাজার ছোঁবে বলেই সতর্ক করছেন সি৪০-র গবেষকরা।

প্রশ্ন থেকে যায়, কয়লাজনিত দূষণে কলকাতার এমন শোচনীয় অবস্থার কারণ কী? সমীক্ষকদের মতে, কলকাতার ৫০০ কিলোমিটারের মধ্যেই অবস্থিত ভারতের ২০ শতাংশ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। কয়লা থেকে উৎপন্ন দূষিত ধোঁয়া এবং ফ্লাইং অ্যাশ বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ার কারণে, তার সরাসরি প্রভাব পড়ে তিলোত্তমায়। শুধু কলকাতাই নয়, কয়লাজনিত দূষণে জর্জরিত গোটা পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। পাশাপাশি, ভৌগোলিক দিক থেকে দেখতে গেলে, পশ্চিমবঙ্গের একটা বড়ো অংশের অবস্থান কোল-বেল্টে। ফলত কয়লা উত্তোলনের ক্ষেত্রেও দূষণ ছড়াচ্ছে সমানভাবে। 

বর্তমানে কলকাতায় কয়লাজনিত বায়ু দূষণের মাত্রা ২.৫ পিএম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুযায়ী, যা স্বাভাবিক মাত্রার সাত গুণ। কিন্তু তারপরেও জাতীয় কিংবা রাজ্যস্তরে সেইভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলেই অভিমত সি৪০-এর। 

আরও পড়ুন
রাস্তার মধ্যেই ধোঁয়া পরীক্ষা, দূষণ নিয়ন্ত্রণে পথে নামছে কলকাতা পুলিশ

অন্যদিকে ২০২০ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে তাপবিদ্যুৎ এবং কয়লার উৎপাদন ২৮ শতাংশ বৃদ্ধি করার কর্মসূচি নিয়েছে কেন্দ্র সরকার। যা আগামীতে দূষণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে তুলবে বলেই আশঙ্কা গবেষকদের। আর তার ভয়াবহ প্রভাব পড়তে চলেছে কলকাতায়। কেবলমাত্র কলকাতাতেই অপরিণত অবস্থায় মৃত্যুর হার বাড়বে ৫০ শতাংশ। গোটা ভারতের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ছাড়িয়ে যাবে ৩১ হাজার। শিশুদের পাশাপাশি গর্ভবতী মহিলা, প্রবীণ নাগরিক এবং যুবকরাও শ্বাসজনিত কঠিন রোগের শিকার হবেন বলেই অভিমত সি৪০-এর গবেষকদের। এখন দেখার চাঞ্চল্যকর এই রিপোর্ট প্রকাশের পর আদৌ প্রশাসনের টনক নড়ে কিনা…

আরও পড়ুন
দূষণের জেরে ভারতবাসীর গড় আয়ু কমবে ৯ বছর!

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বিশ্বের ৫০ শতাংশ প্লাস্টিক দূষণের জন্যই দায়ী ২০টি বহুজাতিক সংস্থা!