সিন্ধু সভ্যতার সময় থেকেই গোমাংস ভক্ষণের রেওয়াজ ছিল ভারতে, জানাচ্ছে গবেষণা

গোমাংস ভক্ষণ নিয়ে যতই তরজা চলুক, ভারতে যে একসময় বেশ আয়োজন করেই গোমাংস ভক্ষণ করা হত, সে-কথা স্বীকার করে নিয়েছেন প্রায় সকলেই। কিন্তু ঠিক কত পুরনো এই রেওয়াজ? বৈদিক যুগের নানা শ্লোকে তার প্রমাণ মেলে। কিন্তু এদেশে আর্যরা আসার আগেই সেই রেওয়াজ চালু হয়ে গিয়েছিল বলে দাবি করছে সাম্প্রতিক গবেষণা। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির গবেষক, ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক অক্ষেতা সূর্যনারায়ণ সম্প্রতি তাঁর গবেষণাপত্রে দেখিয়েছেন, সিন্ধু সভ্যতার সময় থেকেই ভারতীয়দের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে প্রাণীজ প্রোটিন নেওয়ার রীতি ছিল। আর তার মধ্যে গোমাংসের ব্যবহারই ছিল সবচেয়ে বেশি।

সম্প্রতি ‘আর্কিওলজিক্যাল সায়েন্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সূর্যনারায়ণের গবেষণা। আর এই গবেষণার জন্য তিনি একটি অভিনব পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন তিনি। সাধারণত কোনো এলাকার কৃষিকাজের ধরণ দেখে খাদ্যাভ্যাস আন্দাজ করা হয়। তবে সূর্যনারায়ণ সরাসরি সিন্ধু সভ্যতার সময়ের মাটির পাত্রের লিপিড পরীক্ষা করে সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করেছেন। এর ফলে যে অনেক বেশি নির্ভুল তথ্য পাওয়া যাবে, সেকথা বলাই বাহুল্য। গবেষণাপত্রে তিনি দেখিয়েছেন, শতকরা ৮০ শতাংশ পাত্রে মাংসের নমুনা মিলেছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রেই গোরু বা মোষের মাংস পাওয়া গিয়েছে। এছাড়াও আছে শুকর এবং হরিণের মাংস। এমনকি পাখির মাংসের নমুনাও পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে সেগুলি ঠিক কোন প্রজাতির পাখি, তা বোঝা যায়নি।

মাটির পাত্রের পাশাপাশি বেশ কিছু জায়গায় গবাদি পশুর হাড়গোড় দেখেও গোমাংস ভক্ষণের প্রমাণ মেলে। পাশাপাশি সূর্যনারায়ণ দেখিয়েছেন, হরপ্পা এবং মহেঞ্জোদারো শহরে তেল এবং মদ্যের প্রচলনও ছিল। আজ থেকে ৫ হাজার বছর আগেই এসবের ব্যবহার শিখেছিলেন ভারতীয়রা। তাঁর এই গবেষণা যেমন অনেক দ্বন্দ্বকে মিটিয়ে দিতে পারে, তেমনই তাঁর অভিনব পদ্ধতি আগামীদিনে প্রত্নতাত্ত্বিকদের পথ দেখাতে পারে। হয়তো এভাবেই অন্যান্য সভ্যতার মানুষদের খাদ্যাভ্যাস সম্মন্ধেও অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যাবে।

Powered by Froala Editor