সন্ধে হলেই তাঁর বন্ধু হয়ে যেত মহাকাশ। টেলিস্কোপে চোখ রেখে তিনি পৌঁছে যেতেন অনন্তের কাছে। আর সেখানে জ্বলতে থাকা রহস্যগোলকদের সংসারেই মজে যেতেন তিনি। উইলিয়াম হার্শেল। আকাশের প্রতি এমনই পাগলামি ছিল তাঁর। নক্ষত্র চেনার কাজে গোটে ব্রিটেনে তাঁর মতো দ্বিতীয় পণ্ডিতের সেসময় জুড়ি মেলা ভার। এমনকি স্বয়ং রাজাও এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল ছিলেন। তাই ব্রিটেনের রাজসভায় প্রধান জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসাবে তাই নিযুক্ত করেছিলেন তাঁকেই।
সময়টা ১৭৮১ সালের মার্চ মাস। অন্যদিনের মতো দিনের আলো দিগন্তে গড়াতেই টেলিস্কোপ নিয়ে হার্শেল হাজির হয়েছিলেন ছাদে। আড্ডা জমিয়েছিলেন তারা ভরা একটা আকাশের সঙ্গে। তবে একটা জিনিসই তাঁর একটু অন্যরকম মনে হল। ভুল হচ্ছে কি কোথাও?
তার আগে কয়েকদিন ধরেই পশ্চিম দিকে একটি ম্লান আলোর গতিবিধি চোখে পড়েছিল তাঁর। তবে প্রাথমিকভাবে কোনো নক্ষত্র বলেই ধারণা হয়েছিল তাঁর। কিন্তু আজ বড্ড স্থির লাগছে যে তাকে। কে এই আগন্তুক? নাওয়া-খাওয়া ভুলেই সারারাত ধরে চলল আকাশে ভেসে থাকা সেই আলোকবিন্দুর পর্যবেক্ষণ। শেষ অবধি সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন হার্শেল। না এটা কোনো তারা নয়। তবে একটা অনিশ্চয়তার জায়গা থেকেই গেল। সঠিকভাবে হার্শেল বুঝতে পারলেন না সেটি গ্রহ নাকি কোনো ধূমকেতু।
তার জন্য আরও কিছুদিনের অপেক্ষা। আরও কিছুদিন ধরে হার্শেল পড়ে রইলেন ছোট আগন্তুকের দিকে টেলিস্কোপ তাক করে। শেষ অবধি উত্তর মিলল। সৌরজগতের একটি গ্রহই এই আগন্তুক। কিন্তু এতদিন অস্তিত্ব জানা ছিল না তার? অবাক হলেন নিজেই। সৌরজগতের সপ্তম গ্রহ আবিষ্কারের কথা বেশ উত্তেজিত হয়েই জানালেন দেশের অন্যান্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের। সহকর্মীদের যৌথ সাহায্যে তৈরিও করে ফেললেন তার কক্ষপথ।
সবই হল। কিন্তু নাম? হার্শেল ঠিক করলেন রাজাকে সম্মান জানিয়েই এই নতুন গ্রহের নামকরণ করবেন তিনি। সেই মতোই রাজা তৃতীয় জর্জের নামানুসারে তার নাম রাখলেন ‘জর্জিয়াম সিডাস’। এই ল্যাটিন শব্দবন্ধের অর্থ ‘জর্জের গ্রহ’। তবে সাধারণের মধ্যে ‘জর্জ’ নামেই পরিচিত হল সৌরজগতের সপ্তম সদস্য।
আবিষ্কারের পর প্রায় ৭০ বছর ধরেই অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিল ‘জর্জ’। তারপর ইতিহাস থেকে প্রায় মুছেই যায় সে। মানুষের স্মৃতি থেকেও। কিন্তু কোথায় গেল ‘জর্জ’? কী পরিণতি হয়েছিল তার?
আরও পড়ুন
পৃথিবীর ছায়াপথেই রয়েছে এক অন্ধকার গ্রহ, পৌঁছয় না নক্ষত্রের আলোও!
উত্তর খুঁজতে পৌঁছে যেতে হবে উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে। সেসময় বিজ্ঞানী জোহান বোদে নতুন করে নামকরণ করলেন তার। অন্যান্য গ্রহগুলির মতোই গ্রিক দেবতাদের সূত্র ধরেই তার নাম হল ‘ইউরেনাস’। যিনি মাইথোলজি অনুযায়ী ‘জুপিটার’ অর্থাৎ জিউসের ঠাকুর্দা এবং ‘স্যাটার্ন’ ক্রোনাসের বাবা। ধীরে ধীরে ‘ইউরেনাস’ নামটাই বহুল প্রচলিত হয়ে উঠল সকলের মধ্যেই। ধামা চাপা পড়ে গেল তার আগের সমস্ত ইতিহাস।
তবে অন্য রাজার নামে নাম বলেই হয়তো অন্য গ্রহদের থেকে ইউরেনাসের চরিত্রও একটু আলাদা। ইউরেনাসই সৌরজগতের একমাত্র গ্রহ যে আবর্তন করে কক্ষপথের সমান্তরাল ভাবে। ‘জর্জ’ নামের মাহাত্ম্য রেখেই ইউরেনাস যেন বজায় রেখেছে গ্রহদের মধ্যে এক অন্য রাজকীয়তা...
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
পৃথিবীর থেকেও বসবাসে উপযুক্ত ২৪টি গ্রহ! সন্ধান দিলেন বিজ্ঞানীরা