মানুষের সভ্যতার শুরু থেকেই সমস্ত অপরাধের জন্য আছে নির্দিষ্ট শাস্তির ব্যবস্থা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধের সংজ্ঞা এবং শাস্তির নিয়মে নানা পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু অপরাধ করলে শাস্তি পেতে হবে, এতে সন্দেহ নেই। তবে যদি বলা হয় এমন কোনো জায়গার কথা, যেখানে যেকোনো অপরাধ করে আইনের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়? এমনকি খুনেরও কোনো শাস্তি নেই সেখানে? ভাবছেন কোনো আদিম জনজাতি ও কোনো জনমানবহীন দ্বীপের কথা বলছি? অথবা এমন কোনো জায়গা যেখানে নৈরাজ্য চলছে? একেবারেই তা নয়। বরং খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বুকেই রয়েছে এমন জায়গা। অবাক হচ্ছেন নিশ্চই!
আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে আইন যেমন বিচিত্র, আইনের ফাঁকও তেমনই বিস্তর। তবে অপরাধের কোনো শাস্তির ব্যবস্থাই নেই, এটা মেনে নেওয়া সত্যিই অসম্ভব। আসলে মার্কিন সংবিধানের ষষ্ঠ সংশোধনী থেকেই সমস্ত সমস্যার সূত্রপাত। তবে মূল প্রশ্ন অবশ্যই, কোথায় আছে এমন জায়গা? ইয়োলোস্টোন ন্যাশানাল পার্কের মধ্যে ছোট্ট ৫০ বর্গমাইল এই এলাকা। আর তার নামই হয়ে উঠেছে ‘জোন অফ ডেথ’। ইয়োলোস্টোন ন্যাশানাল পার্ক তিনটি স্টেটের মধ্যে অবস্থিত। উয়োমিং, মনটানা এবং ইডাহো। এই ইডাহো স্টেটের মধ্যে থাকা ইয়োলোস্টোন ন্যাশানাল পার্কেই রয়েছে ‘জোন অফ ডেথ’।
এবার আসা যাক মার্কিন সংবিধানের ষষ্ঠ সংশোধনী প্রসঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে এমন বেশ কিছু জায়গা আছে, যা কয়েকটি স্টেটের সীমান্তে অবস্থিত। সেখানে নির্দিষ্ট কোনো স্টেটের আইন খাটে না। আগে অবশ্য ফেডারাল আইনেই শাস্তির ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু ষষ্ঠ সংশোধনীতে স্থির হয়, ফেডারাল আইনে বিচারের পাশাপাশি জুরি বোর্ডে সংশ্লিষ্ট এলাকার অন্তত ১২ জন সদস্যকে থাকতে হবে। ইয়োলোস্টোন ন্যাশানাল পার্কের মধ্যে ঘটে যাওয়া কোনো অপরাধের বিচারও হবে একইভাবে। সেই মতোই উয়োমিং-এর ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে বিচারের সমস্ত বন্দোবস্ত করা হয়ে। আর মনটানা বা ইডাহো স্টেটের ঘটনা হলে এখানকার প্রতিনিধিরা থাকেন জুরি বোর্ডে। না, একটু ভুল হল। মনটানা স্টেটের প্রতিনিধিরা থাওলেও ইডাহো স্টেটের কোনো প্রতিনিধি থাকেন না।
ভাবছেন কোনো অন্তর্দ্বন্দ্বের বিষয়? না, বিষয়টা একেবারেই তা নয়। আসলে ইয়োলোস্টোনের মধ্যবর্তী ইডাহো স্টেটে কোনো নাগরিক বাস করেন না। অতএব কোনো জুরি থাকাও সম্ভব নয়। ফলে এখানে যেকোনো অপরাধের পর বিচারব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই বেরিয়ে যাওয়া যায়। তবে এইটুকু শুনে মনে হতে পারে, এই এলাকায় বুঝি বহু অপরাধের ঘটনা ঘটে। আসলে, ২০০৫ সালের আগে আইনের এই ফাঁকটি কেউ লক্ষই করেননি। মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ব্রায়ান কাল্ট তাঁর গবেষণামূলক বই ‘দ্য পারফেক্ট ক্রাইম’-এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। আর সেই বছরই ঘটে যায় প্রথম অপরাধ। তবে মানুষ খুন নয়। হত্যা করা হয় ইয়েক প্রজাতির একটি হরিণকে। আর যথারীতি কোনো শাস্তির ব্যবস্থা করা যায়নি। তবে এই ১৫ বছরে আইনি ব্যবস্থায় আর কোনো পরিবর্তন আসেনি। যদিও আর কোনো অপরাধের ঘটনাও ঘটেনি। কিন্তু বিশ্বের প্রাচীনতম সংবিধানের দেশে এমন একটা আইনি ফাঁক সত্যিই অবাক করে।
Powered by Froala Editor