‘অস্পৃশ্য’ রানি-কে ডুবন্ত দেখেও বাঁচাল না কেউ; সাড়ম্বরে পালিত হল অন্ত্যেষ্টি

নৌকায় করে ঘুরছেন অন্তঃসত্ত্বা রানি। সঙ্গে রয়েছে বছর দুয়েকের আরেক ছোট্ট মেয়ে। হঠাৎই ঘটল দুর্ঘটনা। নৌকো উল্টে জলের মধ্যে পড়ে গেলেন দুজনেই। নদীর তীরে দাঁড়িয়ে দেখছেন সবাই। কিন্তু কারোর এগিয়ে আসার সাহস নেই। রানির দেহরক্ষীরাই যে বারণ করছেন এগিয়ে আসতে। রাজপেয়াদার নির্দেশ বলে কথা! আসলে, রানি-কে স্পর্শ করার অধিকার ছিল না কারোরই। এমনকি, প্রাণ বাঁচাতেও নয়। শেষ পর্যন্ত জলে ডুবেই মারা গেলেন রানি সুনন্দা এবং তাঁর মেয়ে। শেষ পর্যন্ত রানি নিজেই পরিচিত হলেন ‘অস্পৃশ্য রানি’ নামে।

সময়টা ১৮৮০ সাল। ইউরোপ ও তার উপনিবেশ জুড়ে মানুষ ততদিনে আধুনিকতার স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সুদূর শ্যাম প্রদেশে তখনও মধ্যযুগের অন্ধকার। আর সেই অন্ধকারের মধ্যেই জন্ম নিল ‘অস্পৃশ্য রানি’-র কাহিনি। রানি সুনন্দা। শ্যাম প্রদেশ (বর্তমান থাইল্যান্ড)-এর রাজা চতুর্থ রাম বা মোঙ্কুটের মেয়ে সুনন্দা কুমারীরত্ন। পরে দুঃসম্পর্কের ভাই চুলালংকর্ণ বা পঞ্চম রামের সঙ্গে বিবাহ হয় সুনন্দার। সুনন্দার আরও দুই বোনকে বিবাহ করেন চুলালংকর্ণ।

শোনা যায় চুলালংকর্ণের নাকি ৮৪টি সন্তান ছিল। অবশ্য এই তথ্যের সত্যতা জানা যায় না। তবে সুনন্দার গর্ভে একটিমাত্র কন্যাসন্তানের জন্ম হয় ১৮৭৮ সালে। এর ঠিক দুবছরের মাথায় আবারও গর্ভবতী হলেন রানি সুনন্দা। আর তখনই নেমে এল ভাগ্যের পরিহাস। অস্পৃশ্যতার মধ্যযুগীয় রীতিই হয়ে উঠল তাঁর মৃত্যুর কারণ। তবে শুধু রানি সুনন্দার মৃত্যুই নয়, তাঁর অন্ত্যেষ্টিও এক ঐতিহাসিক ঘটনা।

রাজা প্রত্যেক রানির জন্য আয়োজন করেছিলেন অন্ত্যেষ্টির এক নতুন প্রথা। ভারি রাজকীয় সেই অন্ত্যাষ্টিক্রিয়া। প্রথমেই তরল রুপো ভরে দেওয়া হবে প্রত্যেকের শরীরে। তারপর সোনা দিয়ে মুড়ে দেওয়া হবে তাঁদের শরীর। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম ব্যয়বহুল অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কথা উঠলে তালিকার প্রথম দিকেই থাকবে রানি সুনন্দার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া।

আরও পড়ুন
ডাক পেয়েছেন রানি এলিজাবেথের থেকেও, বাঙালিই মনে রাখেনি বিজ্ঞানী মাধবচন্দ্র নাথ-কে

আজও থাইল্যান্ডের মানুষ ‘অস্পৃশ্য রানি’ নামেই মনে রেখেছেন সুনন্দাকে। তবে শোনা যায়, নিজের মায়েদের মৃত্যুর পর রাজকীয় আড়ম্বর মেনে নিতে পারেননি চুলালংকর্ণের সন্তানরাই। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই এই প্রথার অবসান ঘটে। আর ক্রমশ সমাজ থেকে অস্পৃশ্যতাও মুছে যায়। রাজা চুলালংকর্ণের শেষ জীবন কাটে অন্ধকার কারাগারে। আর এরপর ঔপনিবেশিক শাসনের সূত্রে থাইল্যান্ডেও প্রবেশ করে আধুনিকতা। মাত্র ১৪০ বছর আগে ঘটে যাওয়া এমন ঘটনা আজ শুনতে আশ্চর্য লাগতে পারে। ভারত মহাসাগরের তীরে এমন কত আশ্চর্য ঘটনাই স্মৃতি হয়ে থেকে গিয়েছে।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
মুঘল সম্রাট হুমায়ুনকে রাখি পাঠালেন রাজপুত রানি কর্ণাবতী, সাড়া দিলেন সম্রাটও