বেকারত্ব মাত্র ২%, ক্যাটালগ দেখে কেনা যেত আস্ত বাড়ি - আজি হতে শতবর্ষ আগের দুনিয়া

১০০! এক স্বতন্ত্র মেজাজ নিয়ে চলা সংখ্যা, পিঠে দুটি শূন্যের বোঝা, অথচ সময়ে সময়ে কী ভীষণ ওজন এই সংখ্যারই! কেবল একটি সংখ্যা বললে ভুল হবে, এ এক উৎসব, এক যাপন। আর সেই আবেগ থেকেই পিছন ফিরে দেখাও। আজকের ব্যস্ত জীবনে যদি ধরুন পিছন ফেরা যায়, যদি শতবর্ষ আগের দুনিয়ায় তাকিয়ে দেখি আমরা, কেমন ছিল সময়টা? কী কী অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে, যা সবকিছু বদলে দিয়েছে আজ?
শব্দ প্রভূত এক টাইম মেশিন, হাত বাড়াচ্ছি, উঠে পড়ুন। দেখে আসি সেই একশো বছর আগের একঝলক পৃথিবী -


১৯০৮ সালে হেনরি ফোর্ডের হাত ধরে পৃথিবী দেখতে পায় ফোর্ড মডেল টি। এক অভিনব যুগান্তকারী আবিষ্কার বললেও যাকে কম বলা হবে। উচ্চমধ্যবিত্তের আওতায় থাকা দামের কারণেই এক দশকে এই গাড়ি ছেয়ে যায় গোটা বিশ্ব। আজকের এই চারচাকার ভিড় যদি ফসল হয় তবে তার বীজ বোনা হয়েছিল ফোর্ড মডেল টি দিয়ে।
আজ থেকে একশো বছর আগে, ১৯১৯ সালে ফোর্ডের তরফে ঘোষণা করা হয় স্ট্যান্ডার্ড হ্যান্ড ক্র্যাঙ্ক বা হাতলের দ্বারা ইঞ্জিন চালু করার পদ্ধতি বাতিল করে এই গাড়িতে খুব শীঘ্রই আসতে চলেছে বৈদ্যুতিক স্টার্টার। যা কিনা এক যুগান্তকারী আবিষ্কারও বটে।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অষ্টাদশ অ্যামেন্ডমেন্টের দ্বারা অ্যালকোহল প্রোডাকশন, ইম্পোর্টেশন, ট্রান্সপোর্টেশন ও সেল নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয় ১৬ই জানুয়ারি ১৯১৯ সালে। কারণ হিসাবে দেখানো হয় সেলুন কালচার এবং পলিটিকাল করাপশান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অন্যতম দায় লিকার-এর বর্তায়। বেশ তোলপাড় হয় এই ঘটনাকে ঘিরে। পরে অবশ্য ৫ই ডিসেম্বর ১৯৩৩ সালে একবিংশ অ্যামেন্ডমেন্ট আসায় নাকচ করা হয় অষ্টদশ অ্যামেন্ডমেন্ট।


খানিক চোখ কান মেললে আমরা দেখতে পাব ১৯১৯ ছিল নির্বাক চলচ্চিত্রের যুগ। প্রথম অস্কারের তখনও বাকি এক দশক, মানুষ তবু থিয়াটারে ভিড় জমান, নির্বাক ছবি দেখতেই। চার্লি চ্যাপলিন, মেরি পিকফোর্ড ও ডগলাস ফেয়ারব্যাংকের মতো শিল্পীরা কাঁপাচ্ছেন বড় পর্দা। এ-বছরেই তাঁরা নিজস্ব স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কিংবদন্তী পরিচালক ডেভিড ওয়ার্ক গ্রিফিথের সঙ্গে।


মাত্র একশো বছর আগে, তবু ভাবলে অবাক লাগে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী নারীরা তখনও পাননি ভোটাধিকার। প্রচুর লড়াইয়ের শেষে উনবিংশ অ্যামেন্ডমেন্টের দ্বারা এই বছর ৪ঠা জুন সেনেটে পাশ হয় এই দাবি। অবশেষে ২৬শে অগাস্ট ১৯২০ সালে ‘উইমেনস্‌ সাফারেজ’ মুভমেন্ট জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে মান্যতা পায়।


বেকারত্বের মাত্রা ১৯১৯ সালে মাত্র ২ শতাংশ। তবে মজার বিষয় কোনও ন্যূনতম মজুরির ভাবনাই আসেনি পৃথিবীতে। তাই নামমাত্র মজুরিতে অত্যধিক খাটিয়ে নেওয়া হত শ্রমিকদের। কলকারখানার পরিবেশও ছিল ততধিক অস্বাস্থ্যকর এবং ভয়ঙ্কর। ১৯৩৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমের ন্যূনতম মজুরি ধার্য্য হয় ঘণ্টায় ২৫ সেন্ট।


১৯১৯ সালে ক্যাটালগ দেখে কেনা যেত একটি আস্ত বাড়ি। মানুষ একটি ক্যাটালগ থেকে অর্ডার দিতেন তাঁর পছন্দের বাড়ি। ১৯০৮ সাল থেকে সিয়ার্স রোবাক নামক বিখ্যাত কোম্পানির ক্যাটালগে প্রায় ১০০ রকম বাড়ির নকশা থেকে বেছে নেওয়া ও বায়না দেওয়া যেত নিজের পছন্দের বাড়ি। ১৯৪০ সাল পর্যন্ত এই কোম্পানির একচেটিয়া ব্যবসা চলে এই ক্ষেত্রে।


যদিও ১৯১০ সালে প্রথম বাজারে আসে কেলগ’স, তবু ১৯১৯ নাগাদই মাস প্রোডিউসড খাবারের চাহিদা ও বিক্রয় সেভাবে শুরু হয় সাধারণ বাজারে। মানুষ গ্রহণ করতে শুরু করে এই খাবার। প্রথমে কেলগ’স কর্ণ ফ্লেক্স, তারপর ন্যাবিস্কোর ওরিও। আজকের ব্যস্ততম জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেসব অভ্যাস তা শুরু হয়ে গেছে সেই সময় থেকেই…


ফ্রেঞ্চ সিরিয়াল কিলার হেনরি ডিসায়ার লান্ড্রু, যাঁর ডাকনাম দি ব্লু বিয়ার্ড অফ গ্যাম্বেস ১৯১৯ সালের ১২ই এপ্রিল প্যারিসের নিকটবর্তী একটি শহর থেকে গ্রেপ্তার হন। ৫০ বছর বয়সী এই খুনি তখন ২৪ বছরের একজন ক্যাবারে আর্টিস্ট মহিলার সঙ্গে অ্যাপার্টমেন্ট শেয়ার করে থাকতেন। ভাবা হয়, সেই মহিলা তাঁর লম্বা ফর্দের প্রেমিকাদেরই একজন। রিপোর্ট থেকে জানা যায় মোট ২৮৩ জন মহিলার সঙ্গে লান্ড্রুর সম্পর্ক ছিল নানাসময়ে। যাঁদের মধ্যে ৭২ জনের কোনওরকম খোঁজ পাওয়া যায়নি। ১৯২২ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি ১১টি খুনের দায়ে তাকে গিলোটিনে তোলা হয়।


১৯১৯ সালে আবিষ্কার হয় .৩০ ক্যালিবারের মিডিয়াম মেশিন গান এম১৯১৯ ব্রাউনিং। যা পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ভিয়েতনামের যুদ্ধে বহুলমাত্রায় ব্যবহৃত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ব্যবহৃত সাধারণ মেশিন গানের একটি ওয়াটার কুলড আপগ্রেডেশন এই এম১৯১৯ ব্রাউনিং। রক আইল্যান্ড আর্সেলান ও বাফেলো আর্মস কর্পোরেশন নামক দুটি কোম্পানি ১৯১৯ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত তৈরি করেছে এই মেশিন গান।

১০


এই মুহূর্তে আদি নামে কর্মরত প্রাচীনতম এয়ারলাইন ‘কে এল এম রয়াল ডাচ এয়ারলাইনস’। যার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল আজ থেকে ঠিক ১০০ বছর আগে। ১৯১৯ সালে। একই নামে এখনও স্বপ্ন উড়িয়ে চলেছেন তাঁরা। ২০১৫ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী ৩৫৪৮৮ জন কর্মী নিয়ে মোট ১৪৫টি গন্তব্যে প্যাসেঞ্জার ও কার্গো ফ্লাইট ওড়ায় এই সংস্থা।