গুলিবিদ্ধ হওয়ার আগে, শেষ ছবিটি কোথায় এঁকেছিলেন ভ্যান গঘ? অবশেষে মিলল হদিশ

শিল্পের ইতিহাসে এক রহস্যময় চরিত্র ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ। তেমনই রহস্যে ঢাকা তাঁর জীবন। কিন্তু মৃত্যুর ১৩০ বছর পরেও তাঁকে নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। আর এর মধ্যেই জানা গেল তাঁর শেষ শিল্পকর্মের সৃষ্টির স্থান। সৌজন্যে একটি পোস্টকার্ড। সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশের ছবি দেওয়া পোস্টকার্ডের রেওয়াজ ছিল এক সময়ে। আর তেমনই একটি পোস্টকার্ড এসে পড়ে শিল্প বিশেষজ্ঞ ভ্যান দের ভিনের হাতে। ১৯০০ থেকে ১৯১০ সালের মধ্যে লেখা এই পোস্টকার্ডে যে ছবি আঁকা ছিল, সেটা দেখেই ভিনের মনে পড়ে যায় ভ্যান গঘের শেষ ছবি ‘ট্রি রুটস’এর কথা। আর মূল ফোটগ্রাফের সঙ্গে শিল্পীর ছবিটি মিলিয়ে তিনি সম্প্রতি একটি রিপোর্টও জমা দিয়েছেন। সেখানে দাবি করেছেন এই জায়গাটিই ভ্যান গঘের শেষ শিল্পের জন্মস্থান।

সময়টা জুলাই মাস। ১৮৯০ সাল। ফ্রান্সে তখন রৌদ্রকরোজ্জ্বল পরিবেশ। কিন্তু ভ্যান গঘের জীবনে নেমেছে অবসাদ, বিতৃষ্ণা আর ব্যর্থতা। ঠিক স্টারি নাইটের মতোই অন্ধকার তাঁর আকাশ। শুধু ভোর হওয়ার স্বপ্নটুকু আছে। পথিক কি পারবে এই অন্ধকার পেরিয়ে যেতে? ভ্যান গঘ পারেননি। শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করতে হয়েছিল তাঁকে। অনেকে মনে করেন মৃত্যুর আগে তাঁর আঁকা শেষ ছবি ছিল স্টারি নাইট। কিন্তু শিল্পীর ভাই আন্দ্রিস বঙ্গারের বক্তব্য অনুযায়ী, গুলিবিদ্ধ হওয়ার দিন সকালে ভ্যান গঘ এঁকেছিলেন একটা জঙ্গলের দৃশ্য। সেখানে আলো ছিল, জীবন ছিল। এই বক্তব্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে মনে হয়, ‘ট্রি রুটস’ ছবিটাই তাঁর আঁকা শেষ ছবি। তাছাড়া ডবল-স্কয়ার ক্যানভাসের উপর আঁকা ছবিটা সম্পূর্ণও নয়। ভ্যান গঘের শিল্প নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন, তাঁদের মতে এর উপর অন্তত আরও একটি রঙের প্রলেপ দেওয়া বাকি ছিল। অর্থাৎ এই ছবিটিকেই শিল্পীর শেষ শিল্পকলা বলে ধরে নিতে আর কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়।

সম্প্রতি এই বিষয়ে আরও নিঃসন্দেহ হওয়া গেল শিল্প বিষেশজ্ঞ ভ্যান দের ভিনের আবিস্কারের সূত্র ধরে। যে জায়গায় বসে ভ্যান গঘ এই ছবিটি এঁকেছিলেন, সেটি নাকি অবার্গ র‍্যাভো-ইন সরাইখানা থেকে মাত্র ১৫০ মিটার দূরে। আর এই সরাইখানাতেই তো কেটেছে শিল্পীর শেষ ৭০ দিন। অতএব মৃত্যুর আগে যে তার আশেপাশে কোনো জায়গায় বসেই ছবি আঁকবেন তিনি, এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যেতেই পারে। বেশ কয়েক মাস আগেই অবশ্য ভ্যান দের ভিন এই জায়গার সন্ধান পেয়েছিলেন। কিন্তু তখন করোনা সংক্রমণের ভয়ে সবাই গৃহবন্দি। আর তাই নিজের চোখে জায়গাটা দেখে মিলিয়ে নিতে পারেননি তিনি। 

মে মাসে প্রথমবারের জন্য লকডাউন উঠতেই তিনি ছুটে যান ওভের-সুর-ওয়াজে। আর সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন সেই গাছের কাণ্ড, মাটির উপরে বেরিয়ে থাকা মূল; সবই এত বছর পরেও প্রায় একইরকম আছে। পুরোটার তুলনামূলক একটা রিপোর্ট লিখে তিনি জমা দিয়েছেন ভ্যান গঘ মিউজিয়ামে। আর এমন একটা আবিষ্কার যে শিল্পের ইতিহাসের জগতে নিঃসন্দেহে একটা মাইল ফলক হয়ে থাকবে, সেটা বলাই বাহুল্য। জীবৎকালে যে শিল্পী কোনো সম্মান পাননি, মৃত্যুর পর তিনিই হয়ে উঠেছেন কিংবদন্তি। অথচ তাঁর সম্পর্কে আমাদের জানার পরিধিটা কত ক্ষুদ্র। সেখানে এমন ছোট ছোট উপাদানই তো শিল্পীর জীবনকে চিনতে সাহায্য করবে।

আরও পড়ুন
পিকাসোর ছবির ভেতর লুকিয়ে আরও একটি ছবি! অত্যাশ্চর্য আবিষ্কার গবেষকদের

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
আত্মহত্যা করেননি ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ; হত্যা করা হয়েছিল তাঁকে!