‘ভয়’-এর বহু রকমফের দেখি আমরা। ভূত-প্রেত বা অশরীরিকে ভয় পান অনেকে। আবার অনেকের ভয় আসলে মানসিক অসুস্থতা। ঠিক তেমনই আমেরিকার এমা ডেভিসের ভয়ের বিষয় বমি। কাউকে বমি করতে দেখলে তো বটেই, এমনকি কটু গন্ধ বা অস্বস্তিকর শব্দ শুনলেও তাঁর আতঙ্ক মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এই বুঝি তিনি নিজেই বমি করে ফেলবেন। আর সেই আতঙ্ক থেকেই ২ বছর ধরে গৃহবন্দি হয়ে আছেন এমা। হ্যাঁ, করোনা পরিস্থিতিতে আমরা সবাই জানি গৃহবন্দি হয়ে থাকা সহজ কাজ নয়। তবুও ২ বছর ধরে নিজেকে এভাবেই গুটিয়ে রেখেছেন এমা।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এমা ডেভিসের এই রোগকে বলা হয় এমিটোফোবিয়া। এক ধরণের বিরল স্নায়বিক রোগ। এর উদাহরণ এতই কম পাওয়া যায় যে এখনও অবধি উপযুক্ত চিকিৎসার কোনো রাস্তাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই এমা ডেভিসের ঘটনা চিকিৎসকদের কাছে রীতিমতো চ্যালেঞ্জিং। তাঁর মেডিক্যাল রিপোর্ট অনুযায়ী, ছোট থেকেই কাউকে বমি করতে দেখলে অস্বস্তি হত এমার। কিন্তু তা ফোবিয়ার আকারে দেখা দেয় অনেক পরে। মোটামুটি বছর কুড়ি বয়স থেকে কাউকে বমি করতে দেখলেই এমার মনে হতে থাকে তিনি নিজে বমি করে ফেলবেন। বমি না হলেও শুরু হয়ে যায় মাথাব্যথা। কখনও কখনও সাময়িকভাবে জ্ঞান হারান এমা। পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে ওঠে ১২ বছর আগে তাঁর প্রথম সন্তানের জন্মের সময়। গর্ভাবস্থায় তাঁর নিজের বমি করার প্রবণতা বাড়ে। আর সেইসঙ্গে বাড়ে আতঙ্কও।
এই ১২ বছরে বহু চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন এমা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাউন্সিলিং করিয়েছেন। কিন্তু কোনোভাবেই অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। প্রথম প্রথম শুধুই কাউকে বমি করতে দেখলে প্যানিক অ্যাটাক হত তাঁর। ক্রমশ দেখা যায় কটু গন্ধ বা অস্বস্তিকর শব্দ শুনলেও স্থির থাকতে পারছেন না। এমনকি দেশলাইয়ের গন্ধ বা লিফট ওঠানামার শব্দেও অস্বস্তি বাড়তে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেন বাড়ি থেকেই বেরোবেন না। এভাবেই ২ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন এমা। তবে তারপরেও কখনও কখনও দিনে ৬ বার পর্যন্ত প্যানিক অ্যাটাকের শিকার হয়েছেন তিনি। আদৌ কোনোদিন এমা ডেভিস সুস্থ হয়ে উঠতে পারবেন কিনা জানেন না। হয়তো সারা জীবন এই অস্বস্তি নিয়েই কাটিয়ে দিতে হবে। ভয় মানুষকে এভাবে চিরকালের জন্য অসহায় করে তুলতে পারে। এমা তার জলজ্যান্ত উদাহরণ।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
নিজস্ব সঞ্চয় থেকেই ১০০ অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর ক্রয় ৯ বছরের পরিবেশকর্মীর