প্রাণীদের সঙ্গে কথপোকথন, পোষ্যের ভাষা শেখাচ্ছেন মার্কিন মহিলা

ট্রেনিংপ্রাপ্ত কুকুরকে হামেশাই দেখা যায় মানুষের আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে। টিয়া কিংবা ম্যাকাও মানুষের ভাষা অবিকল নকল করে কথা বলে অনর্গল। কিন্তু নিজেদের মধ্যে কী ভাষায় কথা বলে তারা? তারা মানুষের সঙ্গেও কি মনের কথা ভাগ করে নিতে চায়? হ্যাঁ বা না— এই প্রশ্নের উত্তর যাই হোক না কেন, তেমন কোনো ভাষা থাকলেও আমরা তা বুঝতে অক্ষম, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। তবে আর পাঁচ জন না পারলেও, পোষ্যের ভাষাকে রীতিমতো ‘ডিকোড’ করতে পারেন ক্যালিফোর্নিয়ার হোয়ান র‍্যানকুয়েট (Joan Ranquet)। 

হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য হলেও এমনটাই সত্যি। কেননা, এই দাবি শুধু তাঁর নয়। পোষ্যের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার রীতিমতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি রয়েছে বছর চল্লিশের মার্কিন মহিলার ঝুলিতে। কুকুর, বিড়াল, পাখি কিংবা ঘোড়ার মতো পোষ্য প্রাণী তো বটেই, বাঘ-সিংহ-ভাল্লুক এমনকি ডলফিনের ভাষাকেও দিব্যি বুঝতে পারেন র‍্যানকুয়েট। কথাও বলতে পারেন তাদের সঙ্গে। 

কিন্তু কীভাবে তিনি যোগাযোগ স্থাপন করে প্রাণীদের সঙ্গে? র‍্যানকুয়েট জানাচ্ছেন, পোষ্যদের সঙ্গে কথা বলা অনেকটা টেলিপ্যাথির মতোই। শব্দ, অনুভূতি এবং অঙ্গভঙ্গির মধ্যে দিয়েই বুঝতে হয় তাদের কথা। নিজেদের কথা তাদের বোঝাতে গেলেও এই একই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় মানুষকে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে তাঁকে পোষ্য মনস্তাত্ত্বিক বললেও ভুল হয় না এতটুকু। তবে নিজেকে লেখিকা বলেই পরিচয় দিতে বেশি পছন্দ করেন তিনি। বছর কয়েক আগেই প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর লেখা ‘কমিউনিকেশন উইথ অল লাইফ’ গ্রন্থটি। সাড়া ফেলে দিয়েছিল গোটা বিশ্বে। তাছাড়াও প্রতিদিনই পোষ্যের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের ওপর ব্লগ লিখে চলেছেন তিনি। পাশাপাশি বিভিন্ন সাফারিতে বন্য প্রাণীদের সঙ্গে সংযোগস্থাপক এবং গাইডের ভূমিকাতেও তাঁকে দেখা যায় মাঝেমধ্যেই। 

তবে এই প্রাণীদের সঙ্গে তাঁর এই সখ্য আজকের নয়। বছর সাতেক বয়স থেকেই পোষ্য ঘোড়ার সঙ্গে কথোপকথন চলত তাঁর। তারপর কুকুর, বিড়াল ও অন্যান্য প্রাণীদের সঙ্গে ধীরে ধীরে ‘বাক্যালাপ’-এ অভ্যস্থ হয়ে ওঠেন র‍্যানকুয়েট। বর্তমানে শিক্ষকের ভূমিকাতেও অবতীর্ণ হয়েছেন তিনি। স্থাপন করেছেন ‘অল লাইফ ইউনিভার্সিটি’। হ্যাঁ, এখানে সাধারণ মানুষকে শেখানো হয় পোষ্যের ভাষা। ইতিমধ্যেই প্রায় কয়েক হাজার মানুষ ট্রেনিং নিয়েছেন তাঁর থেকে। আর তার পরিসংখ্যানও ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রাণী জগৎ ও মানুষের মধ্যে যেন সেতু হয়ে দাঁড়িয়েছেন বছর চল্লিশের এই মার্কিন মহিলা…

Powered by Froala Editor