রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক মধ্যবয়স্কা ভদ্রমহিলা। অফিস টাইমের ব্যস্ততার ভিড়ে সকলের থেকে তাঁকে আলাদা করে চিহ্নিত করা যায় সহজেই। কোথাও যাওয়ার কোনো তাড়া নেই তাঁর। মৃদু হেসে, সামনের দিকে ঝুঁকে পথযাত্রীদের ‘গুড মর্নিং’ বলে অভিবাদন জানাচ্ছেন তিনি। কখনও আবার কোনো বৃদ্ধ ব্যক্তিকে যত্নে হাত ধরে রাস্তা পার করিয়ে দিচ্ছেন, প্রস্তাব জানাচ্ছেন চা পানের। ব্রিটেনের সাউথব্যাঙ্ক সেন্টারে গেলেই দেখা মিলবে এই দৃশ্যের। কিন্তু এমন বিচিত্র কর্মকাণ্ডের কারণ কী?
সহজ কথায় বলতে গেলে বিনয়ের অনুশীলন (Practice Of Kindness)। হ্যাঁ, ব্যস্ততার ভিড়ে ক্রমশ মানুষের মধ্যে থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বিনয়, উদারতা, সহানুভূতি, আশার মতো অনুভূতিগুলি। মানুষের সেই হারানো অভ্যাস ফিরিয়ে আনতেই এমন বিচিত্র অনুশীলন ব্রিটেনের এই ভদ্রমহিলার। বার্নাডেট রাশেল (Bernadette Russell)। বিগত কয়েক বছর ধরেই এটাই তাঁর দৈনন্দিনের রুটিন। নিজে নমনীয় হওয়ার অনুশীলন তো বটেই, সেইসঙ্গে প্রতিদিন মানুষকে একটু একটু করে বিনয়ী করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
বছর দশেক আগের কথা। ২০১১ সাল। দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিল লন্ডনে। ভাঙচুর চলেছিল নির্বিচারে, আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল অসংখ্য বাস এবং যানবাহনে। প্রাণও হারিয়েছিলেন বেশ কিছু মানুষ। এই ঘটনাই দাগ কাটে বার্নাডেটের মনে। ক্রমশ সদয় ভাবটাই কী হারিয়ে ফেলছি আমরা? পশুর মতো নৃশংস হয়ে উঠছি দিনে দিনে? তা অস্বীকার করার জায়গা নেই কোনো। যুদ্ধ, দাঙ্গা, অনাহার, শরণার্থী সমস্যার যুগে দাঁড়িয়ে শান্তি শব্দটাই যেন অবাস্তব মনে হয়েছিল তাঁর। মনে হয়েছিল ডেস্টোপিয়ান কোনো সময়ে এসে হাজির হয়েছি আমরা।
পরিস্থিতির বদল আনতেই তাই রাস্তায় নেমেছিলেন তিনি। লড়াই শুরু করেছিলেন বিনয়ের পথেই। শান্তি, উদারতার প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে শুরু করেছিলেন বিনয়ের প্রচার। শুনতে খানিকটা অবাক লাগলেও, এমনটাই সত্যি। পথে নেমে মানুষের সঙ্গে দু’দণ্ড ভালো করে কথা বললে, সহজ হাসি বিনিময় কিংবা চা খাওয়ার প্রস্তাবনা জানানোর মাধ্যমেও উল্টোদিকের মানুষটিকে বিনয়ী করে তোলা যায়। এমনটাই বিশ্বাস বার্নাডেটের। একইসঙ্গে তিনি কলম তুলে নেন শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে।
আরও পড়ুন
ইউক্রেন সীমান্তে পিয়ানোবাদন, শান্তির বার্তা জার্মান সঙ্গীতশিল্পীর
ব্রিটেনের বিভিন্ন দেওয়ালে দেওয়ালে লিখতে থাকেন শান্তিমূলক অণুগল্প, ছোটো ছোটো কবিতা। শুরু করেন ব্যক্তিগত ব্লগও। পাশাপাশি আগন্তুকের পকেটে বার্তাবাহী চিরকুট চালাচালি। স্কুল, কলেজ, কর্মসংস্থান এমনকি কারাগারে দিয়েও মানুষদের একাধিক বিনয়ের ক্লাস নিয়েছেন তিনি। বিশ্বাস, সদ্ব্যবহারই বদলে ফেলবে পৃথিবীর চরিত্রকে। সাসেক্স সেন্টার ফর রিসার্চ অন কাইন্ডনেসের সাম্প্রতিক সমীক্ষা এবং গবেষণাও সমর্থন জানাচ্ছে বার্নাডেটের এই উদ্যোগকে। এমনকি মানুষের হারানো আস্থা ফিরিয়ে আনতে তাঁর এই উদ্যোগকে সাধুবাদও জানিয়েছে ব্রিটিশ সংস্থাটি।
আরও পড়ুন
নোবেল শান্তি পুরস্কারের মনোনয়ন পেলেন তিন ভারতীয়
তবে এই লড়াই কি শুধুই বার্নাডেটের? আমরা প্রত্যেকে একটু একটু করে বিনয়, সহনশীলতার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে সত্যিই বদলে যাবে পৃথিবীর ছবি…
আরও পড়ুন
গৃহযুদ্ধে হাত-পা হারিয়েও শান্তির জন্য লড়ছেন কলোম্বিয়ান প্যারা-সাইক্লিস্ট
Powered by Froala Editor