বননিধনের প্রতিবাদ করে গ্রেপ্তার হন, ফের আন্দোলনের পথে মুম্বাই-এর প্রমিলা

মুম্বাই-এর (Mumbai) কথা উঠলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ঝাঁ চকচকে বহুতলের সারি, দীর্ঘ সি-বিচ কিংবা ঘন-জনবসতিপূর্ণ বস্তি এলাকা। তবে ভারতের অন্যতম অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র তথা বাণিজ্য শহরের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে সবুজ-শ্যামলা এক অরণ্যাঞ্চল। স্থানীয়দের কাছে যা পরিচিত ‘আরে ফরেস্ট’ (Aarey Forest) নামে। তবে উন্নয়নের ছাপ পড়তে চলেছে সেখানেও। ধ্বংসের প্রমাদ গুনছে প্রকৃতি। আর এই ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধেই প্রাণপন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন মুম্বাই-এর এক নিরক্ষর মহিলা— প্রমিলা ভৈর (Pramila Voir)।

অরণ্যই তাঁর ঘর-বাড়ি। অরণ্যই তাঁর জীবিকার উৎস। সবমিলিয়ে মুম্বাইয়ের আরে ফরেস্ট অঞ্চলে বসবাস ৮ হাজার উপজাতি পরিবারের। প্রমিকা তাঁদেরই একজন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মুম্বাইয়ের ছবি দ্রুত বদলাতে শুরু হলেও, আরে অরণ্য রক্ষা পেয়েছিল সেই ‘তাণ্ডব’ থেকে। তার কারণ এই অরণ্যের মধ্যেই রয়েছে আস্ত একটি জাতীয় উদ্যান— সঞ্জয় গান্ধী ন্যাশনাল পার্ক। যেখানে বেশ কিছু বিরল প্রজাতির পাখি, প্রজাপতি, পতঙ্গ, বন্য শূকর ছাড়াও রয়েছে চিতাবাঘের অস্তিত্ব। তবে ২০১৯ সালে মহারাষ্ট্র সরকার ঘোষণা করে, শহরের উন্নয়ন এবং পরিবহন ব্যবস্থার চাপ কমাতে তৈরি করা হবে নতুন মেট্রো লাইন। সেই প্রকল্পের জন্যই বরাদ্দ করা হয়েছিল এই অরণ্যের একাংশ। মেট্রোরেলের ডিপো তৈরির জন্য শুরু হয়ে গিয়েছিল গাছ কাটার প্রক্রিয়াও। 

সে-সময় প্রথম সরব হয়েছিলেন প্রমিলা। সঙ্ঘবদ্ধ করেছিলেন অন্যান্য উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষদেরও। বেছে নিয়েছিলেন আন্দোলনের পথ। তবে খুব বেশিদিন চলেনি সেই প্রতিবাদ। বহু অবস্থানকারীর মতো পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হতে হয়েছিল প্রমিলাকেও। প্রিজন ভ্যানে ওঠার আগেও তিনি চিৎকার করে প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘অক্সিজেন ছাড়া বেঁচে দেখাতে পারেন?’ তৎকালীন সময়ে সেই ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। আওয়াজ উঠেছিল দেশজুড়ে। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টেও যায় সেই মামলা। 

হ্যাঁ, দেশের সর্বোচ্চ আদালতে জয় ছিনিয়ে এনেছিলেন প্রমিলা। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল মুম্বাই-এর মেট্রো প্রকল্প। তবে নতুন সরকার আসার পর এবার ফের শুরু হল সেই প্রকল্পের কাজ। জানানো হয়েছে ওই একই জায়গায় তৈরি হবে মেট্রোরেলের ডিপো। তবে হার মানতে নারাজ প্রমিলা। ইতিমধ্যেই আদিবাসী মানুষদের সংগঠিত করার কাজ শুরু করেছেন তিনি। প্রস্তুতি নিচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার।

আসলে প্রথাগতভাবে কোনোদিন শিক্ষার আলো না দেখলেও, প্রমিলা জানেন দোরগোড়ায় হাজির কঠিন ভবিষ্যৎ। জলবায়ু পরিবর্তন ক্রমশ অবলুপ্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে প্রাণীজগৎকে। আর এই বিপর্যয় আটকাতে না পারলে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে মানুষের ভবিষ্যৎও। বলতে গেলে, সেই ভবিষ্যৎ সংরক্ষণের জন্যই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ৪৯ বছর বয়সি প্রমিলা… 

Powered by Froala Editor