পরনে খাকি পোশাক। হতে ক্যামেরা। আফ্রিকার ধুধু প্রান্তরে চিতা কিংবা সিংহের পাশে দিব্যি বসে রয়েছেন এক ব্যক্তি। কখনও আবার দেখা যাচ্ছে তাঁর সারা শরীরে উড়ে এসে বসেছে রঙিন প্রজাপতির দল। সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে এই ছবি কম-বেশি দেখেছেন সকলেই। হ্যাঁ, কথা হচ্ছে ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার তথা ন্যাশনাল জিওগ্রাফির ফটো আর্কের প্রতিষ্ঠাতা জোয়েল সার্তোরেকে (Joel Sartore) নিয়েই। তবে শুধু পেশাগত কারণেই বন্যপ্রাণীর ছবি তোলেন না মার্কিন ফটোগ্রাফার (Photographer)। ফটোগ্রাফির মধ্যে দিয়ে বন্যপ্রাণীদের সংরক্ষণের ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করে তোলেই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। লক্ষ্য, ২০ হাজার বিরল প্রজাতির প্রাণীর ছবি তুলে তাদের ইতিহাস সংরক্ষণ।
আজ থেকে দেড় দশক আগের কথা। ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার হিসাবে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন জোয়েল। কাজের সূত্রেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন অরণ্যে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে তাঁকে। সে-সময়ই তাঁর নজর কেড়েছিল বিষয়টি। জোয়েল লক্ষ্য করেন, প্রতিনিয়তই পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে অসংখ্য প্রজাতি। এমনকি তিনি নিজে প্রত্যক্ষ করেন ন্যাট জিও-র প্রবীণ ফটোগ্রাফারদের তোলা বহু প্রাণীরই আর অস্তিত্ব নেই পৃথিবীতে। আর এই ঘটনার অন্যতম কারণ, মানব সভ্যতার সঙ্গে বন্যের সংঘাত।
জোয়েলকে আরও আশ্চর্য করেছিল অন্য একটি বিষয়। প্রকৃতি থেকে যে দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতি, তা নিয়ে সামগ্রিকভাবে মানুষের মাথাব্যথা নেই কোনো। এমনকি তা নিয়ে তাপ-উত্তাপ নেই মিডিয়ারও। স্পষ্টতই তাঁর অভিযোগ, রাজনৈতিক বিষয়ে যেভাবে ফোকাস করা হয়, সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না বন্যপ্রাণীদের সংকটকে। তাই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং তাদের অস্তিত্ব সংকট নিয়ে সাধারণের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতেই লড়াই-এ নামেন তিনি। প্রাথমিকভাবে সেই লক্ষ্য নিয়েই তৈরি হয়েছিল ফটো আর্ক। পরবর্তীতে তিনি হাতিয়ার করে নেন সোশ্যাল মিডিয়াকে।
পেশাদার ছবি তোলার সময় অরণ্যের মধ্যে গিয়েই কাজ করতে হয় জোয়েলকে, তবে মানুষের সামনে বিরল বন্যপ্রাণীদের উপস্থাপন করতে অরণ্য নয়, বরং স্টুডিওকেই বেছে নিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন চিড়িয়াখানা, অ্যাকোয়ারিয়াম এবং পুনর্বাসনকেন্দ্রে সেট তৈরি করে ছবি তুলেছেন বহু বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর। বিগত এক দশকে সেই তালিকায় রয়েছে ১৩ হাজার প্রজাতি। তবে তাঁর লক্ষ্য, ২০ হাজার প্রজাতির ছবি তোলা। শুধু এই সকল ছবিই নয়, পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রাণীগুলির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা লিখে নিয়মিত ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন জোয়েল। বিশ্বাস, মানুষ সতর্ক হলে তবেই এড়ানো যাবে গণঅবলুপ্তির সম্ভাবনা…
Powered by Froala Editor