বাংলা গানের ধারায় আধুনিকতার অন্যতম পুরোধাপুরুষ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের শতবর্ষ পেরিয়ে গেল গত বছর ১৬ জুন। চলচ্চিত্র এবং সঙ্গীত জগতে তাঁর সমসাময়িক বা অনুজ শিল্পীদের স্মৃতিচারণায় তাঁর সম্বন্ধে নানা কথা জানা যায়—এ তো খুব স্বাভাবিক। কিন্তু গান বা চলচ্চিত্র জগতের বাইরের মানুষজন কীভাবে দেখতেন তাঁকে? সে রকম কিছু টুকরো স্মৃতি নিয়েই এ প্রতিবেদন—‘অন্য হেমন্ত’কে ধরার চেষ্টা।
প্রথম জীবনে হেমন্ত হতে চেয়েছিলেন সাহিত্যিক। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাঁর বাল্যবন্ধু, কৈশোরে সাহিত্যচর্চার সূত্রেই আলাপ হয়েছিল সন্তোষ কুমার ঘোষের সঙ্গে। তাই তাঁরা যে বন্ধুকে নিয়ে অন্তরঙ্গ স্মৃতিচারণা করবেন, এও না হয় প্রত্যাশিত। তা ছাড়াও সাহিত্যমনস্ক হেমন্তকে নিয়ে স্মৃতিচারণে মুখর হয়েছেন প্রতিভা বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র, সমরেশ বসু, শঙ্করের মত বিশিষ্ট সাহিত্যিক; অন্যদিকে পিকে ব্যানার্জি-চুনী গোস্বামীর মত খেলার মাঠের তারকা উচ্ছ্বসিত ক্রীড়াপ্রেমী হেমন্তকে নিয়ে। ফুটবল ভালবাসতেন সেই ছোটোবেলা থেকেই, বন্ধুর সঙ্গে গাছে উঠে গান গাইতে গাইতে খেলা দেখেছেন ছাত্রজীবনে। পরে, বম্বেতে থাকাকালীন চুনী গোস্বামীর অনুরোধে তিনি মোহনবাগান দলের অভিভাবকের ভূমিকা পালন করতে এগিয়ে আসেন। চুনী এ-প্রসঙ্গে বলছেন, “মোহনবাগানের প্রতি ওঁর একটা টান ছিল। বোম্বাইয়ে শচীন দেববর্মণ ইস্টবেঙ্গল টিমকে দেখাশোনা করতেন। আমাদের কোনো অভিভাবক ছিল না। হেমন্তদাকে ‘ইনভলভ’ করাতে পেরে এই অভিভাবকহীনতা আমরা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলাম।” টিম জিতলে নিজের বাড়িতে ডেকে, আনন্দ করে খাওয়াতেন খেলোয়াড়দের। সম্পর্ক এতটাই অন্তরঙ্গ হয়েছিল, যে একবার বম্বেতে হেমন্ত খেলার টিকিট চাইতে এলে চুনী ‘শর্ত’ দেন, তক্ষুনি গান শোনাতে হবে। হেমন্ত আবদার মেটাতে শুনিয়েছিলেন, খালি গলায়—তাঁর সে বছরের নতুন গান, “অলির কথা শুনে বকুল হাসে”। আবার পি কে জানাচ্ছেন, “দাদার গাওয়া গাঁয়ের বধূ শুনে চোখে জল আসত। পরে খেলোয়াড় হওয়ার সুবাদে তাঁর খুব ঘনিষ্ঠ হলাম। কারণ তিনি ছিলেন নির্ভেজাল একজন ক্রীড়াপ্রেমিক।”
সমরেশ বসু খুব দামি একটি কথা বলেছিলেন, “সত্যি বলতে কি, সঙ্গীতের জগতের লোক যেমন নই, তেমনি সঙ্গীতের সঙ্গে রীতিমত যোগাযোগ বলতে যা বোঝায় তাও নেই। ...কিন্তু কোনো কোনো গান কোনোদিনই বিদায় নেয়নি, নেয়ও না বোধহয়। একদা (কত আগে, ঠিক মনে করতে পারি না) শুনেছিলাম, ‘কথা কয়ো না কো, শুধু শোনো।’ ...লিরিক রচয়িতার কাছে সেটা হয়ত প্রিয়ার উদ্দেশে ছিল। হেমন্ত মুখুজ্যের ক্ষেত্রে সেটা হয়ত সঙ্গীত শ্রোতাদের উদ্দেশেই নিবেদন ছিল। আজকের শ্রোতারা নিশ্চুপে ওঁর গান শুনছে।” নিজের লেখা ‘বাঘিনী’ উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়নের সময় রেকর্ডিং শুনতে গিয়ে সমরেশ বসু কাছ থেকে আলাপ করেন হেমন্তর সঙ্গে। এ প্রসঙ্গে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “কাজের মাঝে আলাপে কথায় হেমন্তবাবুকে আমার বেশ মহাশয় ব্যক্তি বলেই মনে হয়েছে। কাজের মানুষকে কাজের মধ্যে দেখলেই বেশি ভাল লাগে।”
অধ্যাপক নিমাইসাধন বসু লিখেছিলেন, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে তিনি বেশ কয়েকবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কাছ থেকে দেখেছেন। একবার বসুশ্রী হলে একটি দাতব্য চিকিৎসালয়ের সাহায্যার্থে এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নিমাইসাধন বাবু। হেমন্তর বাবা কালিদাস মুখোপাধ্যায় ছিলেন ওই দাতব্য চিকিৎসালয়ের অন্যতম পরিচালক। সে অনুষ্ঠানে হেমন্ত গান গাইবেন, এই পর্যন্ত খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু অনুষ্ঠানের কিছু আগে পৌঁছে নিমাইসাধনবাবু যা দেখলেন, তা আরও বিস্ময়কর। হেমন্ত নিজে অনুষ্ঠানের মঞ্চ সাজাচ্ছেন, চেয়ার টেবিল সরাচ্ছেন, মাইক সেট করছেন, আবার সকলকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন, খুঁটিনাটি সব দিকে তাঁর নজর। “যে ভূমিকায় ভারতবিখ্যাত শিল্পী হেমন্তকুমারকে দেখলাম, সে দৃশ্য অভিনব, শিক্ষণীয়”, অকপট স্বীকারোক্তি অধ্যাপক বসুর।
আরও পড়ুন
হারিয়ে যাওয়া সিনেমা হলগুলির ইতিহাস ধরে রাখছেন হেমন্ত
এমন অনেক ঘটনায় সমৃদ্ধ তাঁর স্মৃতিচারণ থেকে বিশেষ করে তুলে আনা যায় আরও একটি ঘটনা। বিশ্বভারতীতে তাঁর কর্মকালে, সঙ্গীত ভবনে রবীন্দ্রসঙ্গীতের একজন অধ্যাপক নির্বাচনের প্যানেলে ‘এক্সটারনাল এক্সপার্ট’ হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয় হেমন্তকে। তিনি আনন্দের সঙ্গেই সম্মত হন। কিন্তু কয়েকদিন পরে হেমন্ত অত্যন্ত বিনীত ভঙ্গিতে একটি চিঠি লিখে জানান, অসুস্থতার কারণে ডাক্তার তাঁকে এই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেবার কথা বলেছেন। চিঠি শেষ হয়েছে ‘এর জন্য আমাকে ক্ষমা করবেন’ বলে। সঙ্গে ডঃ বক্সীর মেডিক্যাল সার্টিফিকেট। অধ্যাপক বসু আশ্চর্য হয়েছিলেন, দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি কখনও দেখেননি যে একজন ‘এক্সটারনাল এক্সপার্ট’ তাঁর অসুস্থতার কারণে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট সহ চিঠি লিখে পাঠাচ্ছেন। একবার ফোন করে, বা একটা খবর পাঠিয়ে দিলেই যেখানে চলত, সেখানে হেমন্তর এই সৌজন্য এক অসামান্য আচরণ। সবচেয়ে বড় কথা, চিঠির তারিখ ১৯৮৯ সালের ১৫ জুলাই- তাঁর প্রয়াণের মোটামুটি দু মাস আগে। অর্থাৎ তখন তিনি গুরুতর ভাবেই অসুস্থ, তা সত্ত্বেও দায়িত্বপালনে আগ্রহী ছিলেন, এবং ডাক্তার বাধা না দিলে হয়ত শারীরিক কষ্ট উপেক্ষা করে মিটিং-এ উপস্থিতও হতেন।
আরও পড়ুন
পাতাঝরা হেমন্ত দিনে বিদায় নিলেন 'যৌবন বাউল' অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত
একটি আক্ষেপের কথাও জানিয়েছেন অধ্যাপক বসু। হেমন্তর প্রয়াণের পর তিনি জানতে পারেন, মৈত্রেয়ী দেবীর উদ্যোগে রবীন্দ্রনাথের চারটি কবিতায় সুরারোপ করে রেকর্ড করেন হেমন্ত, ১৯৮২ সালে। কিন্তু গানগুলি প্রকাশের অনুমতি বিশ্বভারতীর মিউজিক বোর্ড দেয়নি। নিমাইসাধনবাবুর দুঃখ, হেমন্ত নিজে না-হয় সৌজন্য ও অভিমানবশত এ বিষয়ে নীরব থেকেছেন, কিন্তু অন্য কেউ তো তাঁর গোচরে প্রসঙ্গটি আনতেই পারতেন। তিনি যখন প্রশাসনিক পদে ছিলেন (১৯৮৪-১৯৮৯), সে সময় ঘটনাটি জানতে পারলে মিউজিক বোর্ডের কাছে তিনি বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি জানাতে পারতেন। শেষে তিনি লিখেছেন, “প্রাচীন ইতিহাসের ধারা যাঁরা রক্ষা করেন তাঁরা অবশ্যই শ্রদ্ধেয়। কিন্তু নতুন ইতিহাস ও নজির যাঁরা সৃষ্টি করেন তাঁরা স্মরণীয় হয়ে থাকেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বাংলার সঙ্গীত জগতের এক অনন্য চরিত্র। বাংলা তথা ভারতীয় সঙ্গীতকে তিনি নানাভাবে সমৃদ্ধ করে গেছেন। তাঁর সুরে ও কণ্ঠে মহাকবির যে কবিতাগুলি সংগীত হয়ে উঠেছে, সেগুলির বিশেষ ঐতিহাসিক মূল্য আছে।”
আরও পড়ুন
শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথকে নিজের চোখে দেখেছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়!
বিশিষ্ট সাহিত্যিক শংকর একসময় ছিলেন হেমন্তর সেজো ভাই তারাজ্যোতি মুখোপাধ্যায়ের সহকর্মী। একবার কলকাতার বাইরে একটি কাজে গিয়ে তিনি যে হোটেলে উঠেছেন, সেখানেই ছিলেন হেমন্ত। লাউঞ্জে দেখা হতেই শংকর এগিয়ে এসে আলাপ করার চেষ্টা করলেন, প্রথমে নিজের পরিচয় দিলেন হেমন্তর ভাইয়ের বন্ধু হিসেবেই। হেমন্ত জানতে চাইলেন, ‘আপনাকে কি আগে দেখেছি? মনে হচ্ছে...’ শংকর তখন জানান, তিনি লেখালেখি করেন। হেমন্ত প্রায় লাফিয়ে ওঠেন, ‘আপনি সেই শংকর? আপনার সব বই আমার পড়া!’ তারপর, যেভাবে একজন ‘ভক্ত’ তাঁর প্রিয় লেখককে সামনে পেলে তাঁর সঙ্গে আলাপ করার জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠেন, সেইভাবে হেমন্ত তাঁকে ধরে নিয়ে যান নিজের ঘরে, এবং প্রায় দু ঘণ্টার ওপর গল্প করেন। শংকর অবাক হয়ে সেদিন দেখেছিলেন, একজন মানুষ - যাঁর বাহ্যিক পরিচয় শুধুই একজন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী - তাঁর, সাহিত্য, দর্শন সমস্ত বিষয়ে কী অসামান্য জ্ঞান!
এবার যাঁদের কথা বলছি, তাঁরা অন্য জগতের ‘বিশিষ্ট’ মানুষও নন, একেবারেই সাধারণ। ব্রজলাল ব্যানার্জি নামে এক ব্যাঙ্ক অফিসার একসময় থাকতেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে একই আবাসনে। উপরে আর নিচে দুটি ফ্ল্যাট। হেমন্ত তাঁদের সঙ্গে মেলামেশা করতেন একেবারেই সাধারণ প্রতিবেশী-সুহৃদের মতো। দরকারের সময় চা পাতা-দুধ ইত্যাদি ফুরিয়ে গেলে দেওয়া নেওয়া চলত দুই ফ্ল্যাটের মধ্যে। বাড়িতে অন্য শিল্পীরা এসেছেন, গান চলছে - ব্রজলালবাবু গান শুনতে ভালবাসেন বলে হেমন্ত ডেকে আনতেন তাঁকে। এইভাবে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, হৈমন্তী শুক্লার মতো অনেক শিল্পীর সঙ্গে ব্রজলালবাবু বা তাঁর পরিবারের আলাপ করিয়েও দিয়েছেন হেমন্ত। “কীভাবে অত্যন্ত সাধারণ মানুষের সঙ্গেও নম্র ব্যবহার করতে হয়, তা হেমন্তদাকে দেখে শেখার”, জানিয়েছেন ব্রজবাবু।
অনিরুদ্ধ মুখার্জি ছিলেন বি ই কলেজের এক ছাত্র। বছর দুয়েক আগে তিনি ‘শেয়ার’ করেছিলেন এক অভিজ্ঞতার কথা। কলেজের অনুষ্ঠানের জন্য হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানাতে গিয়েছিলেন তিনি। ১৯৭০ সাল। তিনি তখন কলকাতায় নেই। কথা হয়েছিল তাঁর বন্ধু-সেক্রেটারি শান্তিবাবুর সঙ্গে। তিনি বলেছিলেন পুরো টাকাটাই আগে দিতে হবে, কারণ “ইনি অন্যদের থেকে আলাদা।” টাকা দিয়ে এলেও ছাত্র-উদ্যোক্তা মনঃক্ষুণ্ণ হলেন, অন্যদের থেকে আলাদা বলে এরকম! এরপর অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছে, কলেজের এক ছাত্র দুর্ঘটনায় মারা গেলেন। সবারই মন খারাপ, কিন্তু সব ব্যবস্থা হয়েছে যখন কোনোমতে অনুষ্ঠান করতেই হবে। ব্যয়সংকোচের কথাও ভাবা হচ্ছে। অনুষ্ঠানের দিন হেমন্ত এসে ডেকে পাঠালেন অনিরুদ্ধকে। বললেন, “শুনলাম দুর্ঘটনা আর তোমাদের অসুবিধের কথা। ছেলেটির পরিবারকে আমার আন্তরিক সহানুভূতি জানিও। আর তোমাদের যদি সামান্য সাহায্য হয়...” ফিরিয়ে দিলেন সাম্মানিকের পুরো টাকাই। এরপর হেমন্ত মঞ্চে উঠে গান ধরলেন, আর উইংসের পাশে দাঁড়িয়ে অনিরুদ্ধ তখনও ভেবে চলেছেন, এইজন্যই ইনি এতখানি ‘আলাদা’!
রবীন্দ্রভারতীর এক প্রাক্তন ছাত্রীর মুখে শোনা আর একটি গল্প - একবার একটি অনুষ্ঠানে গান গাইতে এসেছেন হেমন্ত। তখন তিনি শিল্পী হিসেবে নায়কের আসনে। গান গেয়ে মঞ্চ থেকে নামার সময় অনেকেই ঘিরে ধরে, একটু ছুঁতে চায়, অটোগ্রাফ চায়, এই সবের মাঝে কোনোভাবে তাঁর হাত থেকে কলমটি পড়ে গিয়েছিল। খেয়াল না করেই বেরিয়ে যাচ্ছিলেন ব্যস্ত শিল্পী, অন্য জায়গায় আবার অনুষ্ঠান ছিল। স্বভাবে মুখচোরা, লাজুক সেই তরুণী ব্যাপারটা দেখে, কলমটি তুলে নিয়ে একবার ভাবলেন রেখে দেবেন। তারপর কী মনে হল, হেমন্তবাবুর জিনিস তাঁকেই ফিরিয়ে দেওয়া উচিত ভেবে ছুটলেন পেছনে। হেমন্ত গাড়িতে উঠতে যাচ্ছেন, ছাত্রীটি অনেকটা দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, “আপনার পেনটা...” হেমন্ত ঘুরে তাকালেন, খুব অপ্রস্তুত হয়ে, পেনটা নিয়ে বললেন, “আপনি আবার এতটা কষ্ট করে ছুটে এলেন?... অনেক ধন্যবাদ।” ছাত্রীটি উত্তরে কী আর বলেন। হেমন্ত পেনটা একটু নেড়েচেড়ে, আবার সেই ছাত্রীকে ফিরিয়ে দিয়ে অমায়িক হেসে বললেন, “আপনিই রেখে দিন।” অভিভূত হতে এর চেয়ে বেশি আর কী লাগে?
দু-একটি ব্যক্তিগত অনুভূতি দিয়েই শেষ করা যাক। শেয়ালদা স্টেশনের পাশে সবজিপট্টির ধার দিয়ে পেরিয়ে যেতে যেতে বেশ কয়েক বছর আগে শুনেছিলাম, পসরা সাজাতে সাজাতে এক সবজি বিক্রেতা গাইছেন, “এমন আমি ঘর বেঁধেছি...”। দাঁড়িয়ে পড়ায় গান থামিয়ে তিনি জানতে চাইলেন, “কী নেবেন?” বলেছিলাম, “কিছু না, আপনার গানটা শুনছি।” একটু লজ্জা পেয়ে বলেছিলেন মানুষটি, “হেমন্তর গান তো, একসময় খুব শুনতাম, এখনও কাজের ফাঁকে ফাঁকে বেরিয়ে যায়।” আর এই কয়েকদিন আগে অবসর নিলেন কলেজের ‘বড়বাবু’, অতিমারি-পরিস্থিতিতে তাঁকে বিদায় সংবর্ধনা জানাতে এক ভার্চুয়াল মিটিং-এ সমবেত হয়েছিলাম সকলে। শেষে এক শিক্ষাকর্মী বন্ধু গান ধরলেন—“কতদিন পরে এলে...” গানটির অনুষঙ্গ তো আলাদা, শুধু ‘বহুদিন এমন কথা বলার ছুটি’ শব্দগুলোর জন্যই কি ওই অনুষ্ঠানে এ গান গাইবার কথা মনে হয়েছিল আমাদের অফিসের সেই করণিক-দাদার? হতেও পারে, গান গায়কের কাছ থেকে এসে যখন সাধারণ শ্রোতার ভাবনায় ছড়িয়ে যায়, এবং ‘শ্রোতার গান’ হয়ে ওঠে তাঁর নিজস্ব বোধ অনুযায়ী, তখনই তো জীবনের সঙ্গে ঘটে শিল্পের আসল সংযোগ। জীবনে অথবা কর্মে, এই সংযোগ কোনদিনই হারাননি ‘আমাদের এই হেমন্ত’।
তথ্যসূত্রঃ
১. নিমাইসাধন বসু, ‘যা চেয়েছি যা পেয়েছি’, পুনশ্চ
২. ‘আনন্দলোক’, জুলাই ২০১৯
৩. ‘আনন্দলোক’ ১১ নভেম্বর, ১৯৮৯
৪. ‘পরিবর্তন’, ৬-১২ অক্টোবর, ১৯৮৯
৫. ‘জীবনপুরের পথিক হেমন্ত’ (সম্পাদনা) ধীরাজ সাহা
৬. এবং কিছু ব্যক্তিগত আলাপচারিতা
Powered by Froala Editor