ছোট্ট শরীর, কটা চোখ, আরামপ্রিয় একটি প্রাণী। বাড়িতে ঢুকলে আপনার কোলের ওমটি নিতে খুবই ভালোবাসে সে। সুযোগ পেলে মাছটি নিয়েও চকিতে পালিয়ে যায়। নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন কাদের কথা বলা হচ্ছে? মার্জারকুল, অর্থাৎ কিনা বিড়ালরা। আশেপাশে পশুপ্রেমী মানুষ অনেকেই আছেন। তাঁদের কেউ কেউ কুকুর পছন্দ করেন, কেউ কেউ আবার বিড়াল। বাঘের মাসি বলে কথা! তাকে ভালো না বেসে থাকা যায়!
তবে আজকের দিন বলে নয়; সভ্যতার ইতিহাসে বিড়ালের স্থান কিন্তু বেশ উঁচু জায়গায়। জাপানের টোকিওতে বিড়ালদের আস্ত একটি মন্দিরই আছে। তবে আমরা আজ জাপানে যাব না। আমাদের গন্তব্য ইজিপ্ট, অর্থাৎ কিনা মিশরে। পিরামিডের দেশের প্রতিটি কোণায় লুকিয়ে আছে ইতিহাস। লুকিয়ে আছে প্রাচীন সভ্যতার অংশ। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার অন্দরে আরও কত রহস্য লুকিয়ে আছে, তা হয়তো এখনও জানা যায়নি। আর এই সভ্যতার সঙ্গেই ওতপ্রোতভাবে জড়িত আছে বিড়াল।
প্রত্নতাত্ত্বিক এবং ঐতিহাসিকরা বলছেন, প্রাচীন মিশরের কারুকাজ, স্থাপত্যগুলি খুঁটিয়ে দেখলে সেখানে বিড়ালের উপস্থিতি ভালোই বোঝা যাবে। মিশরীয়দের কাছে বিড়াল এক রহস্যময় প্রাণী। শুধু রহস্যময়ই নয়; বিড়ালের উপস্থিতি মানেই সৌভাগ্য আসা। আর সেজন্য এই প্রাণীটির গায়ে যাতে আঁচড়ও না লাগে, সেইদিকেই খেয়াল রাখত প্রাচীন মিশরীয়রা। যদি দুর্ঘটনা হয়, এবং সেজন্য যদি বিড়ালটি মারাও যায়, তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হত। আর ইচ্ছা করে মেরে ফেললে তো কথাই নেই…
মিশরের দেব-দেবীর দিকে তাকালে, সেখানেও বিড়ালের উপস্থিতি দেখা যায়। বাস্তেত নামের এক মিশরীয় দেবীর বিশেষ ক্ষমতাই ছিল বিড়ালে রূপান্তরিত হওয়ার। একটু ধনী পরিবারে বিড়ালদের রীতিমতো সোনার গয়না পরিয়ে রাখা হত। এমনকি খাওয়ার এলাহি আয়োজনও থাকত। সবচেয়ে অদ্ভুত প্রথাটি ছিল বিড়ালের মারা যাওয়ার পর। মারা গেলে, মানুষের মতোই মমি দেওয়ার নিয়ম ছিল প্রাচীন মিশরে। তবে এতেই থেমে থাকত না শোকজ্ঞাপন। বিড়াল মারা গেলে, তার মালিকেরা নিজেদের চোখের ভ্রু পুরো কেটে ফেলত। এবং যতক্ষণ না সেই ভ্রু আবার গজিয়ে উঠছে, ততদিন ধরে চলত শোকপালন। বিড়ালদের নিয়ে এমন পরিস্থিতি কি এখন দেখা যায়!
Powered by Froala Editor