প্রায় এক শতকেরও আগের কথা। ব্রাজিলের আমাজনে হাজির হয়েছিলেন নৃ-তাত্ত্বিক গুইডো বোজ্ঞিয়ানি। আমাজনের বিভিন্ন উপজাতি সংস্কৃতির নথি তৈরি কাজ করছিলেন গুইডো। সভ্য সমাজের কাছে তিনিই প্রথম তুলে ধরেন কাদিইউ উপজাতির এক অদ্ভুত শিল্পকলার কথা। ‘কাদিইউ আর্ট’। মাটির পাত্রের ওপর বিভিন্ন প্রাকৃতিক রং দিয়ে আঁকা এক অদ্ভুত নকশা। গুইডোর অনুমান ছিল আর কয়েক দশকের মধ্যেই হারিয়ে যাবে এই শিল্পরীতি। কেন না, সভ্যতার অগ্রগতিতে দ্রুত কমছে এই জনগোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা।
আজ ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, পিন্টারেস্ট কিংবা গুগল— যে কোনো প্ল্যাটফর্মে ‘কাদিইউ আর্ট’ শব্দবন্ধ লিখে অনুসন্ধান করলেই এই রীতির ছবি মিলবে হাজার হাজার। বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থার তৈরি জামা-কাপড় থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাড়ি-অলঙ্করণের সামগ্রী— উদাহরণ মিলবে সবকিছুরই। কিন্তু কীভাবে একশো বছর টিকে থাকল এই চিত্রকলা? কীভাবে ডিজিটালের যুগে জায়গা করে নিল সে?
বর্তমানে ব্রাজিলে এই উপজাতি জনগোষ্ঠীর জনসংখ্যা মাত্র দেড় হাজার। তবে নিজের সমাজের বাইরেও আজ নিজেদের সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন তাঁরা। আর এর পিছনেই রয়েছে ৩৪ বছর বয়সী কাদিইউ শিল্পী বেনিলদা ভার্জিলিও-র অবদান। না, ইতালিয়ান নৃ-তাত্ত্বিক গুইডোর গবেষণাপত্র নয়, বরং তাঁর দৌলতেই বিশ্ব পরিচিত হয়েছে এই শিল্পকলার সঙ্গে।
প্রায় দেড় দশক আগের কথা। বেনিলদা নিজে তখন সাওপাওলোর এক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। তখনই তাঁর পরিচয় হয়েছিল জনপ্রিয় পত্রিকার সঙ্গে। মূলত তরুণ-তরুণীদের জন্য প্রকাশিত সেই পত্রিকায় বেশ ফলাও করেই ছাপা হত নিত্যনতুন জনপ্রিয় নকশা এবং ‘ফ্যাশন’-এর কাহিনি। খানিক সাহস নিয়েই কাদিইউ শিল্পকর্মের নমুনা সেখানে পাঠিয়েছিলেন তিনি। প্রকাশিতও হয়। তবে সেই ঘটনাই যে বিশ্বের দরবারে এনে হাজির করবে এই শিল্পকে, তা কে-ই বা জানত।
আরও পড়ুন
প্রয়াত জুমা সম্প্রদায়ের শেষ ব্যক্তি, পৃথিবী থেকে মুছে গেল আরও একটি জনগোষ্ঠী
হ্যাঁ, বছর দশেক বয়সেই আমাজন ছেড়েছিলেন বেনিলদা। ঠাকুমার মৃত্যুর পরই। তবে তাঁর থেকে ততদিনে শেখা হয়েছে সমস্ত শিল্পের খুঁটিনাটি। প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় রং তৈরি এবং তা আঁকার কাজ। বেনিলদার ছক ভেঙে শহরে পড়তে যাওয়াই শেষ পর্যন্ত ত্রাতা হয়ে দাঁড়ায় কাদিইউয়ের।
নিজেও ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন বেনিলদা। তৈরি করেছেন আধুনিক বস্ত্রে কাদিইউ শিল্প ছাপার ফার্ম। তবে মূল রীতি শুধু মাটির পাত্র এবং জামাকাপড়ের নকসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং সারা শরীর জুড়ে উল্কির মাধ্যমেও এই ধরণের শিল্পচর্চার রীতি রয়েছে কাদিইউ জনগোষ্ঠীর মধ্যে। বিগত কয়েক দশকে এই জনগোষ্ঠীর মানবসংখ্যা অর্ধেক হয়ে এসেছে। সভ্যতা হয়তো তাঁদের সংস্কৃতিকে আরও দ্রুত গ্রাস করে নেবে আগামীতে। সেইসঙ্গে সভ্য সমাজের মধ্যে শিল্পকে ‘ইনজেক্ট’ করে এভাবেই হয়তো অস্তিত্বের জন্য লড়াই চলবে কাদিইউদের…
আরও পড়ুন
শিকার ছেড়ে সিন্থেটিক চামড়াতেই উৎসব, নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত আফ্রিকার জনগোষ্ঠীর
Powered by Froala Editor