বন্যপ্রাণীদের জল পৌঁছে দিতে প্রতিদিন ৭০ কিলোমিটার পাড়ি প্যাট্রিকের

২০১৬ সালের গ্রীষ্মকালে কেনিয়ার তাইতা হিল অভয়ারণ্যে ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন প্যাট্রিক কিলোঞ্জো মলুয়া। ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ চোখ পড়ল কয়েকটা বুনো মোষের দিকে। একটা মরা খালের মধ্যে নাক গুঁজে কী যেন খুঁজছে তারা। কী খুঁজছে, সেটা উপলব্ধি করতে অবশ্য দেরি হয়নি প্যাট্রিকের। প্রাণীদের এই আচরণ তাঁর চেনা। ওরা আসলে শুকনো খালের মধ্যেই জল খুঁজছে। একটু জিভ ভিজিয়ে নেওয়ার মতো জলও যদি পাওয়া যায়। ওদের কষ্ট দেখে অভয়ারণ্যের ওয়ার্ডেনের সঙ্গে কথা বলতে গেলেন প্যাট্রিক। আর তাঁর কাছ থেকেই শুনলেন, অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও এই জলকষ্টের কোনো সমাধান তিনি করতে পারেননি। এমনকি কখনও কখনও একটানা কয়েকদিন বিন্দুমাত্র জল না পেয়েও বেঁচে থাকে তারা।

তাইতা থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে প্যাট্রিকের বাড়ি। সেদিন ফিরে এসেই স্থানীয় এক পরিবহন সংস্থার মালিকের কাছ থেকে ভাড়া নিলেন একটি ট্যাঙ্কার ট্রাক। তারপর সেই ট্রাকভর্তি জল নিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই আবার পৌঁছে গেলেন তাইতায়। না, কেবল একদিন নয়। সেদিন থেকে টানা ৫ বছর ধরে তিনি প্রতিদিন এই কাজ করে চলেছেন। তাইতার পাশাপাশি স্যাভো ন্যাশানাল পার্ক এবং লুমো কমিউনিটি অভয়ারণ্যেও প্রতিদিন জল সরবরাহ করে চলেছেন তিনি। প্যাট্রিকের কথায়, পৃথিবীর বুকে প্রত্যেকেরই বেঁচে থাকার সমান অধিকার আছে। আর একজনকে বেঁচে থাকার জন্য সাহায্য করার চেয়ে বড়ো তৃপ্তি আর কিছুতেই নেই। প্যাট্রিকের কাছে হাতি, গণ্ডার, মোষদের সঙ্গে মানুষের কোনো প্রভেদ নেই।

কেনিয়ার গ্রামাঞ্চলে ৪৮ বছর আগে জন্ম প্যাট্রিকের। তখন পূর্ব আফ্রিকার গ্রামগুলি ছিল সবুজে ঢাকা। তার মধ্যে নানা প্রাণী অবাধে ঘোরাফেরা করত। তবে দেখতে দেখতে অবস্থা বদলেছে। ক্রমশ নগরায়ণ শুরু হয়েছে কেনিয়াতেও। প্যাট্রিক নিজে তো এই প্রক্রিয়া বন্ধ করতে পারবেন না। তাই বনভূমির প্রাণীদের যতটুকু নিরাপদ রাখা যায়, সেইটুকু চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এর আগে ১৬ বছর ধরে তিনি নানা জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে চোরা শিকারীদের পেতে রাখা ফাঁদ সরাতেন। তবে এখন সচেতনতা অনেকটা বেড়েছে। চোরাশিকারের ঘটনাও অনেকটা কমেছে বলেই মনে করেন প্যাট্রিক। কিন্তু জলকষ্ট এক জীবন্ত সমস্যা। এখন তাঁর লড়াই এই সমস্যার সমাধানেই।

বনাঞ্চলে জলকষ্টের সমস্যা মেটাতে প্যাট্রিক তৈরি করেছেন নিজস্ব একটি সংস্থাও। সেখানে তিনজন স্বেচ্ছাসেবক স্থায়ীভাবে কাজ করেন। এছাড়াও স্থানবিশেষে এগিয়ে আসেন অনেকেই। জলকষ্ট মেটাতে স্থায়ী সমাধানের রাস্তাও খুঁজছেন প্যাট্রিক। অন্য জায়গা থেকে জল সরবরাহ করা তো কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হতে পারে না। যদিও এখনও তেমন কোনো সমাধানের রাস্তা খুঁজে পাননি তিনি। তবে জীবনের ৪৮টা বছর পেরিয়ে এসে আজও প্যাট্রিকের এই অক্লান্ত পরিশ্রম সত্যিই অবাক করে।

Powered by Froala Editor