তপ্ত দুপুর। রাস্তার ধারে গোটা দশেক মানুষের জটলা। আর এই জটলার মধ্যমণি বছর পঁয়ষট্টির এক বৃদ্ধ। সদাহাস্যময় মুখে তিনি মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছেন ঠান্ডা পানীয়ের গ্লাস। হঠাৎ দেখলে তাঁকে কোনো বিক্রেতা মনে হওয়াই স্বাভাবিক। তবে ভুল ভাঙবে কাছে গেলেই। বৃদ্ধের সাইকেলে ঝোলানো সাইনবোর্ডই জানান দেবে, কোনো হকার বা বিক্রেতা নন তিনি। প্রখর তাপদাহের দিনে মানুষকে দু-দণ্ড স্বস্তি দিতে তিনি নিজেই নেমেছেন স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকায়...
শঙ্করলাল সোনি। সম্প্রতি, সোশ্যাল মিডিয়ায় সাড়া পড়ে গেছে মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরের ৬৮ বছর বয়সি এই বৃদ্ধের কর্মকাণ্ডে। সাইকেলে চেপে মধ্যপ্রদেশের একাধিক জেলায় ঘুরে বেড়ান শঙ্করলাল। বিনামূল্যে ঠান্ডা জলের গ্লাস তুলে দেন সাধারণ মানুষের হাতে। তবে আজ নয়, প্রায় তিন দশক আগে শুরু হয়েছিল শঙ্করলালের এই লড়াই। প্রখর তাপদাহে শ্রমজীবী মানুষদের পানীয় জল সরবরাহ করতে পথে নেমেছিলেন তিনি। তারপর প্রতি গ্রীষ্মে এটাই দৈনিক রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর। বিগত ২৬ বছর ধরে এই জনসেবামূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। শুধু শ্রমজীবীরাই নন, কোনো পথযাত্রীরাই বঞ্চিত হন না তাঁর এই পরিষেবা থেকে।
সকাল থেকেই শুরু হয় শঙ্করলালের এই যুদ্ধ। প্রায় ১৮টি ওয়াটার ব্যাগ এবং বেশ কিছু জলের বোতল নিয়ে রাস্তায় নামেন তিনি। একসঙ্গে অন্ততপক্ষে ১০০ লিটার জল থাকে তাঁর সঞ্চয়ে। তারপরেও দিনে তিনবার নতুন করে ভরতে হয় এই জলভাণ্ডার। সবমিলিয়ে তাপদাহের দিনে প্রায় ৪ শতাধিক মানুষের তৃষ্ণা মেটে তাঁর উদ্যোগে।
এই অদ্ভুত কর্মকাণ্ডের জন্য স্থানীয়দের কাছে 'ওয়াটারম্যান' হিসাবেই পরিচিতি পেয়েছেম তিনি। কারোর কারোর কাছে আবার হয়ে উঠেছেন 'জীবন্ত জল-দেবতা'। শঙ্করলালের এই মানবিক উদ্যোগে বাকরুদ্ধ করে দেয় সকলকেই...
Powered by Froala Editor