শারাফু পিলাসসেরি। কেরলের কুন্নামঙ্গলম অঞ্চলের বাসিন্দা। তবে চাকরি সূত্রে থাকা দুবাইতে। মহামারীর সংক্রমণের পর ছুটিতেই ফিরছিলেন বাড়িতে। দেশের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পর ফ্লাইটে বসেই ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন সপরিবারের ছবিও। ট্যাগলাইনে লেখা, ‘ব্যাক টু হোম’। কিন্তু বাড়ি ফেরা হল না আর। দেশের মাটি ছুঁয়েও বিভীষিকাময় হয়ে গেল রাতটা। দোরগোড়ায় এসেও যেন চলে যাওয়া।
পাইলট ও বিমানকর্মী মিলিয়ে মোট ১৯১ জন যাত্রী ছিলেন এয়ার ইন্ডিয়ার এই এক্সপ্রেস বিমানে। যার মধ্যে ছিল ১০টি শিশুও। কেরালার কোঝিকোড়ের বিমান দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন ১২৩ জন। হতের সংখ্যা কমপক্ষে ২০। তারই মধ্যে একটি নাম শারাফুর। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর তাঁর বন্ধু শফি পারাক্কুলাম সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, ফেরার আগেও তিনি গিয়েছিলেন তাঁর দোকানে। রেখে আসেন কিছু অর্থসাহায্য দুর্গতদের খাওয়ানোর জন্য।
শারাফুর মতই অধিকাংশ যাত্রীরাই ছিলেন ‘বন্দে-ভারত’ মিশনে দেশে ফেরা মানুষ। করোনার সংক্রমণ অধিকাংশের থেকেই কেড়ে নিয়েছে কর্মস্থান, জীবিকা। তাই উপার্জনহীনতার কাছে এক প্রকার বাধ্য হয়েই দেশের মাটিতে ফিরে আসছিলেন অনেকে। কেউ ভেবেছিলেন পরিবারের সঙ্গেই সময় কাটাবেন। কেউ ঠিক করে রেখেছিলেন দেশে এসে নতুন করে শুরু করবেন জীবিকার খোঁজ। আবার কারোর হয়তো শেষ হয়ে গিয়েছিল ভিসার মেয়াদ। ফলে ধরতে হয়েছিল উড়ান।
বছর উনত্রিশের যাত্রী মহম্মদ শলিলের চাকরি না গেলেও এই মন্দার কারণে তাঁকে ৬ মাসের ছুটিতে পাঠিয়েছিল কর্মক্ষেত্র। কোঝিকোড়ের বাসিন্দা সাহিরা ফিরছিলেন এদেশে নতুন কোনো চাকরির সন্ধানে। সঙ্গে ছিল তিন সন্তান। দুই সন্তান রক্ষা আহতের ওপর দিয়ে বেঁচে গেলেও, দশ মাসের খুদের সঙ্গেই চিরঘুমে ডুব দিলেন মা।
আরও পড়ুন
মিলেছিল ‘অনুপ্রবেশকারী’র তকমা, ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত দিলেন সেই বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকরাই
অপেক্ষায় ছিলেন পালাক্কড়ের বাসিন্দা ফইজল। বিদেশ থেকে দেশে ফিরছে তাঁর স্ত্রী এবং মেয়ে। সেই মতই উদযাপনের প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু সংবাদ এল বিমান দুর্ঘটনার। স্ত্রী সুমাইয়া আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি হাসপাতালে। আর কন্যা আয়েসার সঙ্গে আর কোনোদিন দেখাই হবে না।
আরও পড়ুন
পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা তুলে ধরতে হাতিয়ার র্যাপ, ডাক এল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকেও
কেরালার ছবি এখন এমনই বিভীষিকায় ভরা। ভাইরাসের সংক্রমণ তাঁদের আস্তে আস্তে ভিন দেশে ঠেলে দিয়েছিল আর্থিক অনটন, অসহায়তার দিকে। আর সেখান থেকে মুক্তি পেতেই নিজের রাজ্যে এসে আরও এক বিপত্তি। পিছু ছাড়ল না সেই অসহায়তা। যারা এখনও হাসপাতালে ভর্তি আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁদেরও পরিবার পরিজনকে ঘিরে রয়েছে এক অদেখা আতঙ্ক। অনেককে ছিন্নভিন্ন করে ফেলছে স্বজন হারানোর যন্ত্রণা। থমথমে কেরালা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে এখনও দমচাপা কান্না আর নীরবতা...
আরও পড়ুন
লকডাউন ফুরিয়ে এল, পরিযায়ী শ্রমিকরা কি আদৌ ফিরবেন কাজে?
Powered by Froala Editor