ডুবসাঁতার দিয়ে পৌঁছোতে হয় এই মিউজিয়ামে!

আদা, লবঙ্গ, দারুচিনি, জায়ফল কিংবা রসুন— ক্যারিবিয়ান সাগরে অবস্থিত গ্রেনাডা বিখ্যাত তার রকমারি মশলার জন্য। প্রতিবছর প্রায় সাত লক্ষের বেশি মানুষ মশলার উৎপাদন দেখতে ভিড় জমান ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই দ্বীপে। ঠিক এই কারণেই ‘ক্যারিবিয়ানের মশলা দ্বীপ’ বা ‘স্পাইস আইল্যান্ড অফ ক্যারিবিয়ান’ নামেই পরিচিত গ্রেনাডা (Grenada)। তবে সাম্প্রতিক সময়ে, এই দ্বীপের সবচেয়ে বড়ো আকর্ষণ হয়ে উঠেছে সমুদ্রগর্ভে অবস্থিত এক বিচিত্র মিউজিয়াম (Museum)। 

হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন মিউজিয়াম, অথচ তা অবস্থিত সমুদ্রগর্ভে! তবে এই মিউজিয়ামে কীভাবে সংরক্ষিত হয়েছে ভাস্কর্য বা চিত্রকলা? কীভাবেই বা তার ‘চোখের’ নাগালে পাবেন দর্শকরা? মনের মধ্যে এই প্রশ্ন উঁকি দেওয়াই স্বাভাবিক। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল সমুদ্রস্রোত, ঘূর্ণিঝড় কিংবা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগকেও অনায়াসে হার মানাতে পারে এই মিউজিয়াম। 

তবে ওই যে কথায় আছে না, পেটে খেলে পিঠে সয়। এও তেমন। জলের তলায় নির্মিত এই আশ্চর্য জগতের সন্ধান পেতে গেলে আক্ষরিক অর্থেই ডুবসাঁতার দিতে হবে মানুষকে। হ্যাঁ, স্কুবা ডাইভিং-এর মাধ্যমেই সমুদ্রপৃষ্ঠের প্রায় ২৬ ফুট নিচে পৌঁছালে তবেই সামনে থেকে দেখা যাবে অদ্ভুত সব শিল্পকর্মদের। সেইসঙ্গে কাচের তল বিশিষ্ট নৌকায় পরিভ্রমণের ব্যবস্থাও রয়েছে।

২০০৬ সালের কথা। ব্রিটিশ-গিয়ানিজ বংশোদ্ভূত ভাস্কর এবং পরিবেশবিদ জেসন ডেকেইরেস প্রায় একক উদ্যোগেই গড়ে তুলেছিলেন এই পার্ক। লক্ষ্য ছিল, সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র ও প্রকৃতির সংরক্ষণ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা। আদতে, মৎস্য শিকার ও প্লাস্টিক দূষণের জন্য সাম্প্রতিক সময়ে ভয়াবহভাবে বিপদের সম্মুখীন ক্যারিবিয়ান বাস্তুতন্ত্র। ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসেছে সেখানকার কোরাল বা প্রবাল। আর সেই কারণেই এমন উদ্যোগ জেসনের। 

আরও পড়ুন
অসুস্থতাকে হারিয়ে সাহিত্যচর্চা, প্রতিনিয়ত বিস্ময় বুনে চলেছেন এই তরুণ

সমুদ্রপৃষ্ঠের ২৬ ফুট নিচে ৮০০০ বর্গফুট অঞ্চলজুড়ে সবমিলিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে প্রায় ৭৫টি ভাস্কর্য। যার মধ্যে কোনোটি বার্তা দেয় সংরক্ষণের, কোনোটি আবার সম্প্রীতি ও ঐক্যের। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হল, শিল্পসৃষ্টির ক্ষেত্রেও জেসন নজর রেখেছেন দূষণের দিকে। সংশ্লিষ্ট ভাস্কর্যগুলি তৈরি করা হয়েছে কংক্রিট, রেবার-সহ এমন কিছু উপাদান দিয়ে, যাদের পিএইচ মাত্রা ৭। অর্থাৎ, তা সমুদ্রের জলে কোনোরকম রাসায়নিক প্রভাব ফেলবে না। সেখানেই এই মিউজিয়ামের অভিনবত্ব।

আরও পড়ুন
পৃথিবী বুকে প্রকাণ্ড সব 'চিত্রকলা', দেখে নিন বিস্ময়কর কিছু জিওগ্লিফস

গ্রেনাডার পর ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, মালদ্বীপ, নরওয়ের মতো দেশেও গড়ে উঠেছে এমন আন্ডারওয়াটার মিউজিয়াম। তবে এখনও পর্যন্ত সেরা আন্ডারওয়াটার মিউজিয়াম হিসাবে বিবেচিত হয় গ্রেনাডার এই ‘স্কাল্পচার পার্ক’। বছর কয়েক আগে ন্যাশনাল জিওগ্রাফির প্রকাশিত বিশ্বের ২৫টি আশ্চর্যের মধ্যেও জায়গা করে নিয়েছে এই আশ্চর্য মিউজিয়াম। কী ভাবছেন একবার ঘুরে আসবেন নাকি ‘মশলাদার’ এই জলদস্যুর রাজ্যে?

আরও পড়ুন
কৃষিকাজে সাশ্রয় ঘটাতে বিস্ময়কর আবিষ্কার ৭১ বছরের কৃষকের

Powered by Froala Editor

Latest News See More