এক দশকে ২ লক্ষ বৃক্ষরোপণ, নজির কাশ্মিরের ট্রি-ম্যানের

বাগান তৈরির শখ থাকে অনেকেরই। কেউ আবার ব্যবসায়িক কারণে রোপণ করে থাকেন শাল, সেগুন কিংবা মেহগনি গাছের চারা। কিন্তু কারোর একার পক্ষে কি দু লক্ষাধিক গাছ রোপণ করা সম্ভব? হ্যাঁ, এই অসম্ভবকেও সম্ভব করে দেখিয়েছেন কাশ্মিরের শ্রীনগরের ৫৬ বছর বয়সি আবদুল হামিদ ভাট। তাও মাত্র ১০ বছরের মধ্যে। 

আবদুল হামিদের ব্যক্তিগত জীবনের গল্প অবাক করার মতোই। আজ থেকে প্রায় চার দশক আগে তাঁর জীবন শুরু হয়েছিল কাশ্মিরের এক সামান্য স্কুটার মেকানিক হিসাবে। শ্রীনগরের একটি ছোট্ট গাড়ি সারানোর গ্যারেজে কাজ করতেন তিনি। বর্তমানে শ্রীনগরের বৃহত্তম অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ ‘রহিম মোটরস’-এর মালিক তিনি। তবে গাছ লাগানোর অদ্ভুত শখের জন্য তাঁর নামের পাশে জুড়েছে ‘ট্রি-ম্যান অফ কাশ্মির’ তকমা। 

মধ্য কাশ্মিরের বুদগাম জেলার সুথারন অরণ্য। আর পাঁচজনের কাছে সাধারণ একটি জায়গা হলেও, আবদুলের স্মৃতিতে এই অরণ্য জড়িয়ে রয়েছে ওতপ্রোতভাবে। ছোটোবেলায় প্রায়দিনই তিনি ঘুরতে আসতেন এই জঙ্গলে। কুয়াশা-মোড়া কাশ্মির উপত্যকায় ঘন পাইনের মধ্যে দিয়ে হাঁটতেন দীর্ঘপথ। তবে ক্রমাগত বৃক্ষচ্ছেদনে সম্পূর্ণভাবে বদলে গিয়েছিল এই অরণ্যের ছবি। এমনকি গাছের সংখ্যা কমতে কমতে এসে ঠেকেছিল দশের কোঠায়!

বছর দশেক আগে এই ঘটনাই ভাবিয়ে তোলে আবদুলকে। বৃক্ষরোপণের পরিকল্পনা সেখান থেকেই। বিগত এক দশকে একক উদ্যোগেই প্রায় ২ লক্ষাধিক গাছ রোপণ করেছেন তিনি। যার জেরে সম্পূর্ণভাবে বদলে গেছে সুথারন অরণ্যের ছবি। আবার আগের চেহারায় ফিরেছে এই অরণ্য। 

আরও পড়ুন
তৈরি হবে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, হিমাচলে কাটা পড়তে চলেছে অসংখ্য বিরল পাইন গাছ

তবে শুধু অরণ্যনিধনই যে তাঁকে ভাবিয়ে তুলেছিল, এমনটা নয়। একইসঙ্গে, নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ থেকেও এই প্রচেষ্টা তাঁর। আবদুলের মতে, যানবাহনের দ্বারা কার্বন নির্গমনের জন্য প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ। তার ক্ষতিপূরণ হিসাবেই এই বৃক্ষরোপণ। পাশাপাশি প্রত্যেক মানুষেরই দায়িত্ব তাঁর চারপাশের পরিবেশকে রক্ষা করার। সেই বার্তা দিতেই এহেন উদ্যোগ আবদুলের। অবাক করার বিষয় হল, এই প্রকল্পের জন্য কোনো তহবিল তৈরি করেননি তিনি। বানাননি কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও। নিজের সংস্থার লভ্যাংশ থেকেই এই গোটা প্রকল্পের খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। 

আরও পড়ুন
গরু নয়, এ-দেশে গাছে চড়ে ছাগল!

তবে দু-লক্ষেই থেমে থাকছেন না আবদুল। লক্ষ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে কাশ্মিরের পরিত্যক্ত অঞ্চলগুলিতে ১০ লক্ষ বৃক্ষরোপণ করা। ইতিমধ্যেই শের-ই-কাশ্মির বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন তিনি। আগামীতে প্রতিবছর এই বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে বানিয়ে দেবে ১ লক্ষ পাইনের চারা। পাশাপাশি তাঁর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতেও সাহায্য করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আবদুলের এই প্রচেষ্টা ইতিমধ্যেই রূপ ফিরিয়েছে কাশ্মিরের। আগামীতে তা পর্যটন শিল্পকেও প্রভাবিত করবে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো…

আরও পড়ুন
গাছ থেকে জন্ম ঝর্নার, বিরল দৃশ্য মন্টেনেগ্রোয়

Powered by Froala Editor