সন্তানের জন্ম দিতে পারেন রূপান্তরকামীরাও; ‘মাতৃত্বে’র নতুন সংজ্ঞা লিখছেন ড্যানি

বারান্দায় গা এলিয়ে বসে আছেন একজন রূপান্তরকামী। একটু ভালোভাবে দেখলে বোঝা যায়, তাঁর পেট অস্বাভাবিক রকম স্ফীত। না, ভুঁড়ি বলে ভুল হয় না। বরং মনে হয় তিনি অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু একজন রূপান্তরকামী অন্তঃসত্ত্বা! তা কি সম্ভব? হ্যাঁ, সম্ভব। সিয়াটেল শহরের ড্যানি সেই কথাই প্রমাণ করছেন। আর প্রতিদিন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে ড্যানির নতুন নতুন ছবি।

‘ড্যানি দ্য ট্রান্স ড্যাড’, এই নামেই বিখ্যাত হয়ে উঠেছেন তিনি। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একের পর এক ছবি ভেঙে খানখান করে দিচ্ছে সমাজের একমুখী মানসিকতাকে। যে মানসিকতা আমাদের ছোটো থেকেই ভাবতে শেখায়, সন্তানের জন্ম দেওয়া শুধুই মায়ের কাজ। আরও নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে মহিলাদের কাজ। অন্যান্য বিষয়ে অবশ্য প্রকৃতির নিয়মের তোয়াক্কা করে না আধুনিক মানুষ। কিন্তু লিঙ্গ-পরিচয়ের কথা উঠলেই সেই মান্ধাতা ধারণাকেই হাতিয়ার করে সমাজ। অবশ্য ঠিক ১২ বছর আগে থমাস বেটি নামের এক মার্কিন যুবক প্রথম সন্তানের জন্ম দিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু আজও সিয়াটেল শহরের ড্যানিকে নিয়ে আলোচনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আজও সমাজ এই বিষয়টি মেনে নিতে পুরোপুরি প্রস্তুত নয়।

৩২ সপ্তাহ আগে ওয়াসিংটন নিবাসী ড্যানি তাঁর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর জানান সামাজিক মাধ্যমে। তার পর থেকেই ক্রমশ আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসেন তিনি। গর্ভস্থ ভ্রূণের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে বন্ধ করেন তাঁর হরমোন ট্রিটমেন্টও। বিরূপ আলোচনার পাশাপাশি অনেকেই ড্যানির এই সাহসী পদক্ষেপের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আর ড্যানি জানিয়েছেন, সমাজে অনেক মানুষই তো একা হাতে সন্তানের প্রতিপালন করেন। তাহলে সন্তানের জন্ম দিতেই বা অসুবিধা কোথায়? সাম্প্রতিক একটি পোস্টে তিনি এও জানিয়েছেন যে, ছোট থেকেই তাঁর স্বপ্ন ছিল নিজের গর্ভে ধীরে ধীরে একটি সন্তানকে বড়ো করে তোলা। আর অবশেষে সেই স্বপ্ন সত্যি হওয়ায় তিনি সত্যিই খুশি।

ইতিমধ্যে মহামারী পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাস থাবা বসিয়েছিল ড্যানির শরীরে। তাঁর এবং তাঁর সন্তানের স্বাস্থ্যের বিষয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছিল সামাজিক মাধ্যম। যদিও ২ সপ্তাহের মধ্যেই তিনি আবার সুস্থ হয়ে ওঠেন। ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে তাঁর সন্তানও। নিজের শরীরে সেই বেড়ে ওঠা টের পাচ্ছেন ড্যানি। আর একদিন একদিন করে এগিয়ে আসছে প্রসবের দিন। আর তো মাত্র মাস দুয়েকের অপেক্ষা। ড্যানির স্বপ্ন পূরণের সঙ্গে সঙ্গে সৃষ্টি হতে চলেছে একটি ইতিহাসও।

আরও পড়ুন
প্রথম রূপান্তরকামী হিসেবে ভার্জিন পিকে পা, রূপকথার অন্য নাম সৌরভ কিট্টু

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
রাজ্যের রূপান্তরকামীদের জন্য প্রথম ‘আস্তানা’ দক্ষিণ কলকাতায়