ঢাকার ব্যস্ত রাজপথ। ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে অমনোযোগী জনতা। সামনেই টিএসসি প্রজন্ম চত্ত্বর। আরেকটু এগোলেই একুশে বইমেলার মাঠ। চারদিকে উৎসবের আমেজ। মেয়েদের মাথায় ফুলের মুকুট। চন্দ্রমল্লিকা, গোলাপ। ছোটো সন্তানের হাত ধরে ছুটির বিকেলে হাঁটতে বেরিয়েছেন বাবা-মা। কারোর চোখেই পড়ছে না, সেই হাঁটাপথেরই পাশে, নিশ্চুপে শুয়ে আছে একটি সমাধি। বাংলাদেশের জাতীয় কবি’র। কাজী নজরুল ইসলাম।
আরও পড়ুন
প্রেম হোক বা সন্তানশোক, রবীন্দ্রনাথের মতো নিজেকে আড়াল করেননি নজরুল
২৯ আগস্ট, ১৯৭৬। দীর্ঘ অসুস্থতার পর, নজরুল তখন ঢাকার পিজি হাসপাতালে ভর্তি। সেখানেই মারা গেলেন তিনি। শোকে স্তব্ধ হল গোটা বাংলাদেশ। একসময়, গানে তিনি লিখেছিলেন - "মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই / যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই।" তাঁর সেই ইচ্ছেকে সম্মান জানাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাধিস্থ করা হয়।
আরও পড়ুন
বেহুলার এই চায়ের দোকানে রোজ হাজির হন মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি, বঙ্কিমচন্দ্ররা
পথ থেকেই দেখা যায় সেই সমাধি। সবুজ মাঠের এককোণে, নির্জনে শুয়ে আছেন তিনি। কাছে গেলে, ধাপে ধাপে সিঁড়ি বেয়ে ওঠা চাতালে। মধ্যিখানে তিনি শায়িত।
আরও পড়ুন
একতরফা প্রেমে ‘সঞ্চিতা’ উৎসর্গ করতে চাইলেন নজরুল, বিবাহ-সংবাদ পেয়ে লিখলেন গান
কবরের গায়ে, পাথরের ফলকে লেখা তারই কবিতার পঙক্তি –
‘তোমাদের পানে জাগিয়া বন্ধু, আর আমি জাগিব না।
কোলাহল করি’ সারা দিনমান, কারো ধ্যান ভাঙিব না।
-নিশ্চল নিশ্চুপ
আপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধবিধুর ধূপ’
আরও পড়ুন
দু-বাংলার সেতু হয়ে হাজির প্রহর, একুশে বইমেলার আড্ডায় জয়ী হল ভাষাই
তবে, নজরুল একা নন। সেই কবরস্থানে নজরুল ছাড়াও রয়েছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও পটুয়াশিল্পী কামরুল হাসানের কবর। রয়েছে ১৯৭১ সালের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার কবরও। তাঁদেরই মধ্যমণি নজরুল। শুয়ে আছেন একান্তে।
আরও পড়ুন
ওপার বাংলার বইয়ের বিপুল সম্ভার, কলকাতায় শুরু বাংলাদেশ বইমেলা
ঢাকার ব্যস্ত রাজপথ মাঝেমাঝে ফিরে দেখে সেই দৃশ্য। আর ভাবে, যিনি একদিন বিদ্রোহের আগুন বুনে দিয়েছিলেন কবিতার মাধ্যমে, উত্তাল প্রেমের গান শুনিয়েছিলেন বাঙালিকে, তাঁর এই ঘুমন্ত দশা যেন মানায় না। বিস্ফারিত চোখ নিয়ে তিনি আবার জেগে উঠবেন, লৌহকপাট ভেঙে ডাক দেবেন তরুণদের। নজরুল তো তেমনই! ‘দে গরুর গা ধুইয়ে’ বলে সোচ্চার হাঁক, অন্যদিকে ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী’র বিনম্র আত্মবিশ্বাস। বর্ধমানের চুরুলিয়া থেকে ঢাকার সমাধিক্ষেত্র – এই দুইয়ের মধ্যিখানে যে জীবন, তা তো নিজেই এক কবিতা! নয় কি?