৩২ বছর নির্জন দ্বীপে একাকী বসবাস ইতালির ‘রবিনসন ক্রুসো’র

ইতালির দক্ষিণে সার্ডিনিয়া দ্বীপপুঞ্জ। তারই উত্তরে ছোটো একটি দ্বীপ বুদেল্লি। দেশবিদেশের ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে এ দ্বীপ বেশ পরিচিত। গোলাপি সমুদ্রসৈকতের বুকে ছুটি কাটাতে যান অনেকেই। আর তাঁদের সবার সঙ্গেই প্রায় যেচে এসে আলাপ জমাতেন একজন মানুষ। তাঁর নাম মাউরো মোরান্ডি। তিনি এই দ্বীপের একমাত্র স্থায়ী বাসিন্দা। এই পরিচয় শুনে অবশ্য হঠাৎ খটকা লাগতে পারে। কারণ সার্ডিনিয়া দ্বীপপুঞ্জে কোনো নাগরিক থাকেন না, একথা সকলেই জানেন। তবে মোরান্ডি মিথ্যা কথা বলেন না। সত্যিই সমস্ত আইন অমান্য করে ৩২ বছর ধরে এই গোলাপি সমুদ্রসৈকতেই বাসা বেঁধে আছেন তিনি। তবে এবার তিনি বুদেল্লি দ্বীপ ত্যাগ করতে স্বীকৃত হয়েছেন। আর কিছুদিনের মধ্যেই সার্ডিনিয়া দ্বীপপুঞ্জের একমাত্র স্থায়ী বাসিন্দা বিদায় নেবেন।

ইতালির রবিনসন ক্রুসো নামে পরিচিত মাউরো মোরান্ডি। শৈশব থেকেই তাঁর মধ্যে একটা বেপরোয়া ভাব দেখা যেত। ৮১ বছরের মোরান্ডি তাঁর শৈশবের চেনা পৃথিবীটাকে হারিয়ে যেতে দেখেছেন চোখের সামনে। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবই পালটে যেতে থাকে। সমাজের বুক থেকে একটু একটু করে হারিয়ে যেতে থাকে মানবিকতা। সবই যেন টাকার অঙ্কে কিনে ফেলা যায়। এই কনজিউমারিজমকে চ্যালেঞ্জ জানাতে চেয়েছিলেন মোরান্ডি। আর তাই তিনি ঠিক করলেন, সভ্য মানুষের পৃথিবীতে আর থাকবেন না। বেরিয়ে পড়বেন নির্জন প্রকৃতির উদ্দেশ্যে। আফ্রিকার কোনো নির্জন এলাকায় যেতে চেয়েছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত জাহাজ আর কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে রওয়ানা হলেন। কিন্তু কিছুদূর এগোতেই সমুদ্রঝড়ের কারণে জাহাজ নোঙর করতে হল। বন্ধুদের সঙ্গে মোরান্ডি উঠে এলেন এই বুদেল্লি দ্বীপে।

এই নির্জন দ্বীপের কথা জানতেন না মোরান্ডি। তবে তিনি যেন এমন একটা জায়গাই খুঁজছিলেন। তখন এই দ্বীপে থাকতেন একজন মাত্র কেয়ারটেকার। তবে তিনিও অবসর নেবেন কিছুদিনের মধ্যে। এই কথা জানতে পেরেই মোরান্ডি ঠিক করে ফেললেন, তিনিই এই দ্বীপের দায়িত্ব নেবেন। বন্ধুরা বিদায় নিলেন। থেকে গেলেন মোরান্ডি একা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার একটি পরিত্যক্ত রেডিও স্টেশনে বসবাস শুরু করলেন তিনি। কিন্তু এই ৩২ বছরের জীবন একেবারে নিষ্কণ্টক ছিল না। বারবার সরকার থেকে নোটিশ পেয়েছেন, এই দ্বীপ খালি করতে হবে। বুদেল্লি দ্বীপ স্থায়ী বসবাসের জায়গা নয়। তবে মোরান্ডি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, যতদিন না কেউ এই দ্বীপের খেয়াল রাখার জন্য আসছেন, ততদিন তিনি কোথাও যাবেন না। মোরান্ডিকে দ্বীপে থাকতে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে সরকারের কাছে পিটিশন পাঠিয়েছিলেন অন্তত ৭ হাজার ইতালিবাসী। তবে বারবার সরকারি নোটিশ পেয়ে বিরক্ত মোরান্ডি। তাই জীবনের শেষ লগ্নে এসে এতদিনের বাসস্থান ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। তবে লা ম্যাডেলেনা ন্যাশানাল পার্কের কাছেই অন্য কোনো দ্বীপে তিনি বাসা বাঁধবেন বলে জানিয়েছেন। এই একাকিত্বময় জীবন ছেড়ে সভ্য মানুষের মধ্যে আর ফিরবেন না ইতালির রবিনসন ক্রুসো।

Powered by Froala Editor

Latest News See More