মন্দিরের শহর বললেই সবাই একডাকে চেনেন বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরকে। তবে মল্ল রাজাদের স্থাপত্যকীর্তি শুধু বিষ্ণুপুরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোণা শহরেও ছড়িয়ে আছে এরকম অসংখ্য মন্দির। বিষ্ণুপুরের বিখ্যাত জোড়-বাংলো মন্দিরের আদলেই এখানেও একটি মন্দির ছিল। তবে কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক কিছুই। যদিও আজও প্রতিটা মহল্লায় পূজিত হন শিব-শীতলা। তেমনই একটি মহল্লা মল্লেশ্বরপুর। এখানে শিব মল্লেশ্বরের মন্দির যেমন আছে, তেমনই আছে শীতলা মন্দিরও। তবে কতদিন থাকবে, সেটা বলা কঠিন।
স্থানীয় বাসিন্দা ধ্রুবজ্যোতি মুখার্জি বলছেন, “চন্দ্রকোণায় হয়তো অনেক কুলীন মন্দির আছে। এই মন্দিরটির তেমন কোনো কৌলিন্য নেই। তবুও এখানকার পরিবেশের সঙ্গে মিশেছিল মন্দিরটি।” গায়ে কোনো ফলক নেই। তবে বয়স প্রায় ১৫০ পেরিয়েছে। পুরনো মন্দিরটি পরিত্যক্ত রেখে ৭ নং রাজ্য সড়কের ধারে নতুন মন্দির তৈরি হয়েছিল কিছু বছর আগে। তবে এবার রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য সেই মন্দিরে কোপ পড়তে পারে। আর তাই হয়তো দেবীকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে পুরনো বাসস্থানেই। কিন্তু ভাঙাচোরা মন্দিরে নয়, তার জায়গায় তৈরি হতে চলেছে নতুন মন্দির। পুরনো লাল ইঁটের মন্দির এবার ইতিহাস হয়ে যেতে চলেছে।
ধ্রুবজ্যোতি মুখার্জির কথায়, “পুরনো কিছু ভেঙে ফেলে নতুন করে তৈরি করলেও তার ইতিহাসকে তো নতুন করে তৈরি করা যায় না। সেই কাঠামো, সেই ঐতিহ্য আর ফিরে আসবে না। দেবী ছিলেন না, সেটাই হয়তো ভালো ছিল।” তবে সভ্যতা এগিয়ে যাচ্ছে প্রাচীনকে পিছনে ফেলেই। মন্দিরের আশেপাশের গাছপালা কেটে ফেলা হয়েছে। তার গা ঘেঁষেই তৈরি হয়েছে হাল আমলের বাড়ি। আর এর মধ্যে দুটি দেয়াল ধসে পড়া একটি ভগ্নপ্রায় মন্দির বড়ো বেমানান। হয়তো এই বদলে যাওয়া সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতেই মুছে ফেলা হচ্ছে ইতিহাস।
“আমার তো আলাদা করে কিছু বলার নেই। শুধু আক্ষেপটুকু থেকে যাবে।” বলছিলেন ধ্রুবজ্যোতি মুখার্জি। এই আক্ষেপ যদি আরও অনেক মানুষের মনের মধ্যে জমা হত, তাহলে হয়তো বেশ কিছু ইতিহাসকে হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা যেত। আর যে জাতির ইতিহাস নেই, তার বর্তমানও নেহাৎ ভঙ্গুর। সেই কথাই যেন আরেকবার মনে করিয়ে দেয় এই ঘটনা...
Powered by Froala Editor