আজ থেকে বছর দশেক আগের কথা। কর্মসূত্রে আফ্রিকা ছেড়েছিলেন তিনি। পাড়ি দিয়েছিলেন স্পেনে। এর এক যুগ পর, ২০২০ সালে লকডাউনের ঠিক আগে নিজের দেশ, সেনেগালে ফেরেন তিনি। তবে ক্যাসাম্যান্স প্রদেশে পা রেখেই চমকে উঠেছিলেন রীতিমতো। রাতারাতি যেন শুকিয়ে গেছে গোটা অঞ্চলটা। সবুজের চিহ্নমাত্র নেই কোথাও। অথচ, এক দশক আগে এই জায়গাটাই ছেয়ে থাকত গাছগাছালিতে।
না, লকডাউনে বাড়ি ফিরলেও হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি তিনি। বরং, মাঠে নামেন পরিবেশের হাল ফেরাতে। প্রকল্প সেন পাঁচ বছরের মধ্যেই ৫০ লক্ষ বৃক্ষরোপণ করবেন তাঁর মাতৃভূমিতে। অ্যাডামা ডিমা (Adama Diema)। সেনেগালের (Senegal) ৪৮ বছর বয়সি এই বাসিন্দার দৌলতেই এবার ধীরে ধীরে চেহারা বদলাচ্ছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশটির।
ডিমার কথায়, আফ্রিকায় মরুকরণের জন্য দায়ী করা হয় কাঠ পাচারকারীদের। এ-কথায় ভুল নেই এতটুকু। গোটা আফ্রিকা জুড়ে অনৈতিকভাবে প্রতিনিয়তই কাটা হয় হাজার হাজার মহীরূহ। তারপর সেই কাঠ চড়া দামে বিক্রি করা হয় ইউরোপের বাজারে। তবে সেনেগালের ক্যাসাম্যান্স প্রদেশের ব্যাপারটা একটু অন্যরকম। কাঠ পাচারের জন্য গাছ কাটা হয় না সেখানে। বরং, স্থানীয়রা সেখানে দায়ী গাছ কাটার পিছনে। সাম্প্রতিক সময়ে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে জ্বালানির দাম। আর সেই কারণেই কাঠকয়লার সরবরাহ বজায় রাখতেই নির্বিচারে গাছ কাটেন সাধারণ মানুষ। কখনও আবার বাড়ি তৈরির জন্যও কেটে ফেলা হয় বড়ো বড়ো বৃক্ষ। তাছাড়া বর্তমান সময়ে জীবনধারণের জন্য গাছের ওপর নির্ভরতাও অনেকটাই কমেছে সেনেগালে। একটা সময় মানুষ গাছ লাগাত ফল পাওয়ার জন্য। এখন অনেকের হাতেই কাঁচা টাকা আসায় বাজার থেকে ফল কিনে খান তাঁরা। অন্যদিকে কেটে ফেলা হয় ‘অপ্রয়োজনীয়’ গাছ।
পরিবেশের এই দগদগে ক্ষত ঢাকতেই ২০২০ সালের শেষ দিকে বৃক্ষরোপণের প্রকল্প শুরু করেন ডিমা। সম্বল ছিল ৫০০০ মার্কিন ডলার। নিজের সঞ্চয় ভাঙিয়েই সেই অর্থ এই প্রকল্পে দান করেন তিনি। প্রাথমিকভাবে ডিমা গাছের চারা কিনে আনতেন বিভিন্ন নার্সারি থেকে। বর্তমানে সেনেগালে আস্ত একটি সেনাবাহিনীই গড়ে তুলেছেন তিনি। যাঁরা প্রয়োজন মতো চারা তৈরি করে দেন ডিমাকে।
হ্যাঁ, সেনেগালের সাধারণ মানুষদের নিয়েই তৈরি এই সেনাবাহিনী। তবে মূলত মহিলারাই এই বিশেষ সংগঠনের সদস্য। তার কারণ, পুরুষরা অধিকাংশ সময়ই কাজ করেন বাড়ির বাইরে। চারা রোপণের পর, তাদের দেখভাল করার ফুরসৎ পান না তাঁরা। অন্যদিকে মহিলাদের সঙ্গে গভীর যোগাযোগ রয়েছে পরিবেশের। তাই মহিলাদেরই তিনি বেছে নিয়েছেন এই কাজের জন্য। বিগত আড়াই বছরে ১ লক্ষ ৪২ হাজার বৃক্ষরোপণ করেছেন ডিমা ও তাঁর সহকর্মীরা। সংখ্যাটা ডিমার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৩ শতাংশও নয়। তবে বর্তমানে দেশের অসংখ্য মানুষ তাঁর এই প্রকল্পে সামিল হওয়ায়, আগামীদিনে এই প্রকল্পের গতি বাড়বে বলেই আশাবাদী তিনি। সেইসঙ্গেই পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে এবং জৈব উপায় কৃষিকাজ করার জন্য সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতেও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন ৪৮ বছর বয়সি ব্যক্তি। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, আগামীদিনের সংকটময় ভবিষ্যৎ থেকে একমাত্র গাছই বাঁচাতে পারে আমাদের…
Powered by Froala Editor