প্রকাণ্ড ঘরের মধ্যে পিন পড়া নিস্তব্ধতা। মায়াবি লালচে আলোয় দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রকাণ্ড এক প্রাণী। না, প্রাণ নেই তার শরীরে। তবে ৯ মিটার দীর্ঘ, দু-মানুষ উঁচু সেই কঙ্কাল দেখলে রীতিমতো কাঁপ ধরবে যে-কারোর বুকে। টি-রেক্স। হ্যাঁ, চাইলে প্রাগৈতিহাসিক এই দানবের কঙ্কালও অর্থের বিনিময়ে কিনতে পারেন আপনিও।
মধ্য ইতালির (Italy) শহর অ্যারেজোর (Arezzo) কেন্দ্রস্থলেই রয়েছে এই আশ্চর্য গ্যালারি। যা পরিচিত ‘থিয়েট্রাম মুন্ডি অফ অ্যারেজো’ (Theatrum Mundi) নামে। শুধু ডাইনোসরের কঙ্কালই নয়, সিনেমায় ব্যবহৃত হ্যারি পটারের জাদুছড়ি, থরের হাতুড়ি, আয়রন ম্যানের হেলমেট, প্রাচীন ঘড়ি, ষোড়শ শতকের পাণ্ডুলিপি, রুশ ও মার্কিন নভোচারীর ব্যবহৃত স্পেস স্যুট, চাঁদ, মঙ্গল কিংবা পৃথিবীতে খসে পড়া উল্কার টুকরো— সবই থরে থরে সাজানো রয়েছে এই আশ্চর্য গ্যালারিতে। তারা সকলেই ক্রেতার অপেক্ষায়।
আশ্চর্য এই গ্যালারির নেপথ্যে রয়েছেন ইতালির ব্যবসায়ী ও উদ্যোগপতি লুকা ক্যাবলারি। পেশাগত দিক থেকে লুকা একজন আইনজীবী। তবে আইনচর্চা কিংবা মামলা লড়ার কাজ তিনি ছেড়েছেন বহুদিন। বরং, আশ্চর্য জিনিসপত্র সংগ্রহের নেশাকেই বদলে ফেলেছেন পেশায়। প্রাগৈতিহাসিক জিনিস থেকে শুরু করে জ্যোতির্বিজ্ঞান, মুভি প্রপ থেকে শুরু করে ক্রীড়া স্মারক, প্রাচীন গ্রন্থ থেকে ভিন্টেজ মোটরবাইক— ক্যাবলারির সংগ্রহ দেখলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য যে-কারোর। এ যেন এক সব পেয়েছির দুনিয়া।
তবে মজার বিষয় হল, ইতালির কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত এই গ্যালারির বেশ নাম-ডাক থাকলেও সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ সেখানে। কেবলমাত্র বিলিয়নেয়ার কিংবা মিলিয়নেয়ারদেরই প্রবেশের অনুমতি দেন ক্যাবলারি। কারণ, তাঁর গ্যালারিতে সংগৃহীত এইসকল সামগ্রী কেনার সামর্থ্য সাধারণ মানুষের বাইরে। এমনকি এই গ্যালারি থেকে স্মারক কেনার সময় কখনও কখনও বিলিয়নেয়াররাও রীতিমতো দর কষাকষি করেন তাঁর সঙ্গে। তাঁর ক্রেতার তালিকায় রয়েছেন লিওনার্দো ডি-ক্যাপ্রিও, নিকোলাস কেজ, রাশেল ক্রো-এর মতো খ্যাতনামা তারকারা।
ক্যাবলারির মতে, একটা সময় তাঁর এই গ্যালারি থেকে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হত সিনেমার প্রপ কিংবা প্রাচীন প্রত্নসামগ্রী। তবে বিগত এক দশকে বদল এসেছে সেই ট্রেন্ডে। বর্তমানে নাকি আকাশ ছুঁয়েছে ডাইনোসরের চাহিদা। তার জন্য স্পিলবার্গই দায়ী বলে অভিমত তাঁর। সাম্প্রতিক সময়ে ডাইনোসরের জীবাশ্ম কিংবা ডিমের চাহিদা মেটাতে নাজেহাল ক্যাবলারি। তবে লাভও মন্দ হয় না এই ব্যবসায়। নাম উল্লেখ না করেই ক্যাবলারি জানান, বছর কয়েক আগে এক কোটিপতিকে ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে একটি টি-রেক্সের কঙ্কাল বিক্রি করেছেন তিনি।
তবে এই ব্যবসায় সবচেয়ে বড়ো বিষয় হল, প্রাচীন সামগ্রীর সত্যতা যাচাই করা। সামগ্রী বা স্মারক সংগ্রহের সময় নিজেও বেশ কয়েকবার ঠকেছেন ক্যাবলারি। বর্তমানে তাই সামগ্রী যাচাই করার জন্য, বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আস্ত একটি দলই বানিয়ে ফেলেছেন ইতালির ব্যবসায়ী। সেই দলে রয়েছেন হার্ভার্ড কিংবা ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা অধ্যাপকরা। চাঁদের টুকরো, ডাইনোসরের কঙ্কাল কিংবা প্রাচীন প্রত্নসামগ্রী পরীক্ষা করে, তাঁরা প্রথমে রিপোর্ট জমা দেন ইতালির ধনকুবেরকে। তারপরই তাঁর গ্যালারিতে জায়গা পায় সে-সব সামগ্রী। সবমিলিয়ে বলতে গেলে এমন দ্বিতীয় কোনো গ্যালারি খুঁজে পাওয়া যাবে না গোটা বিশ্বেই…
Powered by Froala Editor