মিশরের কথা বললেই মনের মধ্যে আসে পিরামিড এবং মমির কথা। যেন টুকরো টুকরো ছবি দিয়ে শতাব্দীপ্রাচীন ইতিহাসের একটা গল্প শুনিয়ে যায় আমাদের। কিন্তু গল্প যদি শুধু 'থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়’ হয়, তাহলে কি আর চলে? মমি মানেও তাই শুধু রাজা-রাজড়ার মৃতদেহ নয়। ঠিক তেমনই এক ব্যাতিক্রমী মমির সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল এক শতকেরও বেশি আগে। কিন্তু আজও তার রহস্য যেন সমস্ত মীমাংসার বাইরে। কারণ, বাকি মৃতদেহের মতো শান্ত স্নিগ্ধ মুখ নয় এই মমির। বরং যন্ত্রণার ছাপ পড়েছে সর্বাঙ্গে। মুখটা যেন যন্ত্রণায় হাঁ হয়ে আছে। আর তাই প্রত্নতাত্ত্বিকরা এই মমির নাম রেখেছেন ‘স্ক্রিমিং মমি’।
১৮৮১ সালে দেইর-আল-বাহারি সমাধিক্ষেত্র থেকে উদ্ধার করা হয় এই মমিটি। ইজিপ্টের রাজধানী লুক্সর থেকে নীল নদ পেরোলেই এই সমাধিক্ষেত্রে পৌঁছনো যায়। আর সেখানে দুটি সমাধির একটির নাম লেখা আছে মেরিটামুন। কিন্তু এই একটিও নাম দিয়ে যেন সঠিক পরিচয় জানা যায় না। সেইসঙ্গে জানা যায় না মূর্তিটির অদ্ভুতভাবে হাঁ করে থাকার কারণ।
প্রত্নতাত্ত্বিকদের প্রাথমিক ধারণা ছিল, হার্ট অ্যাটাক বা তেমন কোনো রোগের আক্রমণে মৃত্যু ঘটেছে মেরিটামুনের। আর তার ফলেই মৃত্যুকালে তার মুখ কঠিন হয়ে হাঁ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আশেপাশে কেউ না থাকায় মৃত্যুর খবর সহজে কেউ জানতে পারেননি। তাই তার মধ্যে রিগার মর্টিস হয়ে গিয়েছে। এবং মৃতদেহটি হাঁ অবস্থাতেই থেকে গিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে কেউ কেউ অবশ্য এই ধারণাকে প্রশ্ন করছেন। তাঁরা বলছেন, মমিফিকেশনের জন্য যে সময় লাগে, তাতে রিগার মর্টিসের পর আবার দেহ নরম হতে শুরু করার কথা। আর সেক্ষেত্রে মুখ হাঁ হয়ে থাকার ঘটনা রহস্যই থেকে যায়।
ঠিক এমনই এক রহস্য সমাধিক্ষেত্রের আরেক মমি পেন্তাওয়েরকে নিয়েও। মনে করা হয় ফ্যারাও দ্বিতীয় রামাসেসের এই পুত্র আত্মহত্যা করেছিলেন। আত্মহত্যা কি তৎকালীন সমাজে অপরাধ বলে বিবেচিত হত? এর উত্তর না জানা থাকলেও এটুকু তো দেখাই যায় যে মমিটিকে আচ্ছাদিত করা হয়েছে সিংহের বদলে গাধার চামড়া দিয়ে। সেইসঙ্গে অন্যান্য মমির ক্ষেত্রে দেখা যায় শরীরের অভ্যন্তরের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বের করে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু পেন্তাওয়েরের ক্ষেত্রে সবই প্রায় শরীরের মধ্যেই পাওয়া গিয়েছে।
আরও পড়ুন
রাজারাজড়া নয়, মিশরে আবিষ্কৃত এক সাধারণ কিশোরীর পিরামিড, সঙ্গে মমি
তবে এর মধ্যে আরেক জটিলতা ভাবিয়ে তুলেছে ঐতিহাসিকদের। মিশরের ইতিহাসে দুজন মেরিটামুনের কথা জানা যায়। তার মধ্যে একজন দ্বিতীয় রামাসেসের কন্যা, আর অন্যজন থিবসের রাজা দ্বিতীয় সেকিনিরি তাওয়ের মেয়ে। কিন্তু এর মধ্যে কোন মেরিটামুনের মমি পাওয়া গিয়েছে? প্রথমে অবশ্য মনে করা হয়েছে পেন্তাওয়েরের সঙ্গে একই জায়গায় সমাধিস্থ যখন, তখন মেরিটামুন নিশ্চয়ই ফ্যারাও দ্বিতীয় রামাসেসের মেয়ে। কিন্তু মমি পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে এর শরীর থেকে অন্যান্য অঙ্গ বের করা হলেও মস্তিষ্ক থেকে গিয়েছে। ফলে এই মমি উনবিংশ সাম্রাজ্যের না হওয়াই স্বাভাবিক। আবার সেকিনিরি তাওয়ের মেয়ের সমাধির কাছেই কেন থাকবে রামাসেসের ছেলের সমাধি? পুরোটাই যেন এক রহস্য। গভীর গবেষণা ছাড়া কিছুই বলার জো নেই।
আরও পড়ুন
৫০০ বছর ধরে ‘ধ্যানরত’ তিনি, ভারতেই আছে বৌদ্ধ ভিক্ষুর অবিকৃত মমি
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
গুপ্ত সিঁড়ি পৌঁছে দিল সমাধিতে, ‘অভিশাপ’ সত্ত্বেও উদ্ধার তুতেনখামেনের মমি