তুরস্কে আছড়ে পড়বে ভূমিকম্পের থাবা, আগাম জানিয়েছিলেন এই বিজ্ঞানী

শহরের পর শহর পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। ধ্বসে পড়েছে একের পর এক বহুতল। মৃত্যুর পরিসংখ্যান ইতিমধ্যেই পেরিয়েছে ২১ হাজারের গণ্ডি। তাছাড়াও ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও চাপা পড়ে রয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। চারিদিকে হাহাকার। ভেঙে পড়েছে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাও। 

এমনই মর্মান্তিক দৃশ্য মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্র তুরস্কে (Turkey)। ভূমিকম্প বিপর্যস্ত করেছে সিরিয়াকেও। গত সোমবারের কথা। স্থানীয় সময় অনুযায়ী, ভোরবেলাতেই কেঁপে উঠেছিল গোটা মধ্যপ্রাচ্য। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের (Earthquake) মাত্রা ছিল ৭.৮ রিখটার। আর তাতেই তাসের ঘরের মতোই ধ্বসে পড়ে একের পর এক নির্মাণ, পরিকাঠামো। সেইসঙ্গে আগুন ধরে যায় গ্যাসের পাইপলাইনে। দেশের একাধিক জায়গায় ঘটে যায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ। 

না, এই প্রতিবেদন তুরস্কের ভূমিকম্প কিংবা তার ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে নয়। বরং, আশ্চর্য এক ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে। তুরস্কে যে এমন একটা বিপর্যয় ঘনিয়ে আসতে পারে তা নিয়ে বিপর্যয়ের ঠিক ৩ দিন আগেই সতর্ক করেছিলেন এক ডাচ গবেষক। জানিয়েছিলেন, কয়েকদিনের মধ্যেই ভূমিকম্পের শিকার হতে চলেছে তুরস্ক। এমনকি তাঁর অনুমান অনুযায়ী, সেই ভূমিকম্পের মাত্রা নাকি হওয়া উচিত ৭.৫ রিখটার স্কেল বা তারও বেশি। 

ফ্র্যাঙ্ক হুগারবিটস। নেদারল্যান্ডসের সোলার সিস্টেম জিওমেট্রি সার্ভে’-র গবেষক তিনি। টেকটোনিক পাতের সঞ্চালন নিয়ে একাধিক উল্লেখযোগ্য গবেষণার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তাঁর নাম। তবে সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই খাতায়-কলমে তাঁর করা ভূমিকম্পের অনুমান মিলে যাওয়ায় বর্তমানে নস্ট্রাদামুস হয়ে উঠেছেন ফ্র্যাঙ্ক। তা নিয়ে বিতর্কও কম হচ্ছে না। কেউ বলছেন, সারাবছরই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভূমিকম্পের আতঙ্ক ছড়িয়ে বেড়ান তিনি। কেউ আবার দাবি করছেন, এইসব অনুমান সবটাই ভাঁওতা, মনগড়া। তাতে বিজ্ঞান-সম্মত প্রমাণ নেই কোনো। বৈজ্ঞানিকভাবে এত দ্রুত ভূমিকম্পের অনুমান করা অসম্ভব, এমনটাই ধরে নেওয়া হয়। 

যদিও এসব কথা শুনতে নারাজ খোদ ডাচ গবেষক। তুরস্কের পর, সম্প্রতি তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীতে উঠে এসেছে ভারত এবং পাকিস্তানের কথা। তাঁর কথা অনুযায়ী, ভারতের পশ্চিম প্রান্তের গুজরাট এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের হিমালয়-সংলগ্ন অঞ্চলে থাবা বসাতে পারে ভয়াবহ ভূমিকম্প। সেইসঙ্গে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেও বড়ো মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে বলেই জানাচ্ছেন তিনি। 

স্বাভাবিকভাবেই এই ভবিষ্যদ্বাণী চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেকের কাছেই। এমনকি ভারতের ন্যাশনাল ডিজাসটার ম্যানেজমেন্ট অথোরিটিরও জানিয়েছে, হিমালয়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ভূমিকম্প প্রবণ। সাধারণত ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চলগুলিকে, প্রবণতার নিরিখে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়। যার মধ্যে দেশের ২৮ শতাংশ অঞ্চলই রয়েছে জোন ৪ এবং জোন ৫-এর মধ্যে। অর্থাৎ, সেগুলি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল। এই তালিকায় রয়েছে গুজরাট, মণিপুর, মেঘালয়, বিহার, আসাম, অরুণাচল-সহ একাধিক রাজ্যের নাম। কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের একাধিক অঞ্চল রয়েছে জোন ৩-এর মধ্যে। অবশ্য এইসব অঞ্চলে ভূমিকম্প ঠিক কবে হবে, তা নিয়ে বিষদ অনুমান করতে পারেননি ভারতীয় গবেষকরা। অন্যদিকে ফ্র্যাঙ্কের মতে অদূর ভবিষ্যতেই ভারতে হানা দেবে ভূমিকম্প। মূলত ইউরেশিয় পাত এবং ভারতীয় পাতের গতিবিধির ওপর ভিত্তি করেই তাঁর এই অনুমান। 

আধুনিক যুগের নস্ট্রাদামুসের এই অনুমান ব্যর্থ হলেই যে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে ভারতবাসী, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। তবে আগাম সতর্কতা পাওয়ার পর এ-দেশের প্রশাসন এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীরও পৃথকভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন আছে বৈকি। তা না-হলে হয়তো তুরস্কের মতোই অসহায় হয়ে পড়বেন বিশ্বের ‘সবচেয়ে জনবহুল দেশ’-এর কোটি কোটি মানুষ…

Powered by Froala Editor