সম্প্রতি গোটা বিশ্বে নতুন করে ত্রাস ছড়িয়েছে করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেন ‘ওমিক্রন’। গত ২৪ নভেম্বর প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত করে হয়েছিল কোভিডের এই বিশেষ ভ্যারিয়েন্টকে। তার মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই ইউরোপের একাধিক দেশ, হংকং, ইজরায়েল, এমনকি অস্ট্রেলিয়াতেও ছড়িয়ে পড়েছে ঘাতক ভ্যারিয়েন্ট। এপিডেমিওলজিস্টদের কথায়, এখনও পর্যন্ত পাওয়া কোভিড স্ট্রেনগুলির মধ্যে ডেল্টার পর সবথেকে বেশি সংক্রামক ‘ওমিক্রন’ (Omicron)। তবে এই নতুন ভ্যারিয়েন্টের নামকরণের পিছনেও লুকিয়ে রয়েছে সূক্ষ্ম রাজনীতি।
প্রাথমিকভাবে কোনো দেশ থেকে নতুন কোভিড ভ্যারিয়েন্টের সন্ধান মিললে, সেই দেশের নামেই নামকরণ করা হচ্ছিল ভ্যারিয়েন্টটির। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’-এর এই নামকরণ পদ্ধতি নিয়ে তৈরি হয়েছিল বিস্তর বিতর্ক। আর তারপরেই নামকরণের বিকল্প পথে হাঁটে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গ্রিক অক্ষরমালার বর্ণ দিয়েই চিহ্নিত করা হচ্ছিল সদ্য আবিষ্কৃত স্ট্রেনগুলিকে। আলফা, বিটা, ডেল্টা, গামা— এভাবেই এগোচ্ছিল সেই তালিকা। এই নিয়ম মেনে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কলোম্বিয়ায় খুঁজে পাওয়া স্ট্রেনটির নাম রাখা হয় ‘মিউ’। যা পারতপক্ষে গ্রিক অক্ষরমালার দ্বাদশ বর্ণ।
হিসেব অনুযায়ী, দক্ষিণ আফ্রিকায় সদ্য-আবিষ্কৃত ভ্যারিয়েন্টটির নাম হওয়া উচিত ছিল ত্রয়োদশ গ্রিক বর্ণ ‘নিউ’-এর অনুকরণে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রাপ্ত বি.১.১.৫২৯ ভ্যারিয়েন্টটির নামকরণে ‘নিউ’ এবং পরবর্তী বর্ণ ‘জি’ বা ‘শি’-কে বাদ দিয়ে পঞ্চদশ বর্ণ ‘ওমিক্রন’-কে বেছে নেয় হু। কিন্তু কেন বাদ দেওয়া হল, এই বর্ণ দুটিকে।
না, ‘নিউ’ বর্ণটির মধ্যে কোনো রাজনীতি লুকিয়ে নেই। বরং, ‘নিউ’ বা নতুনের সঙ্গে উচ্চারণগত মিল থাকায়, দ্বিমত তৈরি হওয়ার আশঙ্কায় বাদ দেওয়া হয়েছে এই বর্ণটি। তবে পরবর্তী ‘শি’ বা ‘জি’ বর্ণটিকে বাদ দেওয়ার পিছনে রয়েছে স্পষ্ট রাজনৈতিক কারণ। বিষয়টি স্বীকারও করেছেন ভ্যারিয়েন্ট নামকরণ প্যানেলের শীর্ষ বিজ্ঞানী তথা এপিডেমিওলজিস্ট মার্টিন কুলডর্ফ। হ্যাঁ, চিনের রাষ্ট্রনেতা শি জিংপিং-এর নামের সঙ্গে মিল থাকার জন্যই এই বর্ণটি এড়িয়ে গেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
২০১৯ সালের শেষ লগ্নে করোনা মহামারীর ‘জন্ম’ হয়েছিল চিনেই। তারপর গোটা পৃথিবীতে ধীরে ধীরে প্রকোপ বিস্তার করে মারণ ভাইরাস। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, বলসোনারো-সহ একাধিক রাষ্ট্রপ্রধানই সেসময় আঙুল তুলেছিলেন চিনের দিকে। করোনাভাইরাস অভিহিত করা হয়েছিল ‘চিনা ভাইরাস’ নামে। জৈবঅস্ত্র তৈরির পরীক্ষাগার থেকে ভাইরাসের সংক্রমণের তত্ত্বও উঠে এসেছিল একাধিকবার।
এই বিতর্কের সূত্রপাত হওয়ার পর বিশ্বজুড়েই সামাজিক হিংসার শিকার হয়েছেন এশীয় প্রবাসীরা। বিশেষত আমেরিকায় ভয়ঙ্করভাবে আক্রান্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানুষেরা। সেই হিংস্রতা ঠেকাতেই এমন পদক্ষেপ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। তবে বিজ্ঞানীমহলে হু-এর এই সিদ্ধান্ত সমাদৃত হলেও, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েই গেছে রাজনৈতিক মহলে। চিনকে প্রাধান্য দিয়ে পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে বলেও অভিযোগ নেটিজেনদের একাংশের। তবে এই বিতর্কের সমাধানের থেকেও এই বিশেষ সংক্রামক ভ্যারিয়েন্টকে প্রতিরোধ করাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ গোটা মানবজাতির…
Powered by Froala Editor