মাস দুয়েক আগেই এক মর্মান্তিক ঘটনায় শিরোনামে উঠে এসেছিল নাইজেরিয়া। একটি রান্নাঘরের ভিতর থেকে বছর ১১-র একটি কিশোরকে উদ্ধার করে পুলিশ। সেই একই ঘরে মাত্র ফুট তিনেকের একটি লোহার চেন দিয়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাকে রেখে দেওয়া হয়েছিল প্রায় ৩ বছর। ওইটুকুই ছিল তার পৃথিবী। আর এভাবে দিনের পর দিন থাকতে থাকতে ভেঙে পড়েছিল কিশোরটির মানসিক স্বাস্থ্যও। তবে পরবর্তী নানা ঘটনায় দেখা গিয়েছে, এমন ঘটনা নাইজেরিয়ায় খুব বিরল নয়। শিশুদের এবং মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের শিকল দিয়ে বেঁধে রাখাই যেন সে-দেশের অঘোষিত রেওয়াজ।
এই ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে নাইজেরিয়ার সরকার এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। একটি শিশু-সুরক্ষা সংগঠনের নেতৃত্বে শুধু আগস্ট মাসের মধ্যেই এরকম আরও ১১ জনকে উদ্ধার করা হয়। তার মধ্যে ৭ জন শিশু। বাকিরা মানসিক ভারসাম্যহীন। এর মধ্যে একজন শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে বাড়ির টয়লেট থেকে। ৫৫ বছর বয়সের একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে পাওয়া গিয়েছে এমন একটা ঘর থেকে, যার জানলা-দরজা কিছুই নেই। দেয়ালের একটি ফাঁক দিয়ে শুধু রোজ সামান্য কিছু খাবার দেওয়া হত তাকে। তবে এইসব ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, এর পিছনে প্রকৃত কারণ কী?
বিশেষজ্ঞদের দাবি, মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের সঙ্গে এমন ব্যবহারের পিছনে আছে সচেতনতার অভাব। ২০ লক্ষ মানুষের দেশে মনোবিদের সংখ্যা যেখানে ৩০০ জনেরও কম, সেখানে মানসিক রোগ সম্বন্ধে প্রকৃত ধারণা থাকা সত্যিই কঠিন। ফলে এইসমস্ত মানুষদের নিয়ে সমাজে বাসা বেঁধেছে নানা কুসংস্কার। এমন কুসংস্কার আজ থেকে কয়েকশো বছর আগে সারা পৃথিবীতেই দেখা যেত। কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সেসব ক্রমশ হারিয়ে গিয়েছে। নাইজেরিয়া এখনও পড়ে আছে মধ্যযুগের অন্ধকারে।
অন্যদিকে শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, প্রায় প্রতিটা শিশুই মাতৃহীন। আর দেশের প্রচলিত কুসংস্কার অনুযায়ী, মায়েদের মৃত্যুর জন্য আসলে শিশুরাই দায়ী। তারাই দুর্ভাগ্য বয়ে নিয়ে আসে। ফলে কোনো শিশুর মাতৃবিয়োগ হলে তাকে ঠিকভাবে দেখাশোনা করা হয় না। বরং অত্যাচারের মধ্যেই কাটে বাকি জীবন। এইসমস্ত ঘটনা সামনে আসায় শিশুদের জন্য বিশেষ হোমের ব্যবস্থা করেছে সরকার। গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের অভিভাবকদেরও। পার্লামেন্টে আইনের খসড়াও তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সব মিলিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গেলে প্রয়োজন উপযুক্ত সচতনতা তৈরি করা। সেইসঙ্গে বৈজ্ঞানিক মানসিকতার বিকাশ। কতদিনে সেটা সহজ হবে, সেকথা বলা সত্যিই কঠিন।
আরও পড়ুন
স্কুলের ফি মেটাতে ভিক্ষাবৃত্তিতে শিশুরা, করোনাকালে এমনই ছবি কর্ণাটকে
তথ্যসূত্রঃ বিবিসি
আরও পড়ুন
দেশজুড়ে নাৎসিদের তাণ্ডব, ৮৩ জন ইহুদি শিশুর প্রাণ বাঁচালেন ফ্রান্সের সন্ন্যাসিনী
Powered by Froala Editor