রোজ সাইকেলে কলকাতা, মাত্র ৫ টাকায় মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন রানাঘাটের যুবক

আকাশে তখনও লালের আভাস ফুটে ওঠেনি। ঠিক তখনই গ্রামের রাস্তার পথ ধরে টুংটুং করতে করতে এগিয়ে চলেছে একটি সাইকেল। একদিনের ঘটনা নয়। সেই মার্চ মাস থেকে প্রতিদিন এভাবেই রাত ৩টের সময় বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন রানাঘাটের সাগর ঘোষ। সঙ্গে দু-তিনটে ক্যানে ভর্তি করে থাকে মিষ্টি। রসগোল্লা, পান্তুয়া, কালোজাম, ছানার জিলাপি।

বাবা চাষের ক্ষেতে কাজ করেন। পড়াশোনা করেও শেষ পর্যন্ত চাকরি মেলেনি সাগরের। তাই বাধ্য হয়েই শেষ পর্যন্ত নিজের মতো করে ব্যবসা শুরু করলেন। পুঁজি বিরাট কিছু নেই। আছে শুধু রানাঘাটের মিষ্টির জনপ্রিয়তা। এটুকু সম্বল করেই বেরিয়ে পড়লেন। সেটা বছর তিনেক আগের কথা। সপ্তাহের একেকটি দিন একেকটি জায়গা ধরে মিষ্টি বিক্রি করতে শুরু করেন। কোনোদিন বেলঘরিয়া, দমদম, বিরাটি, দুর্গানগর। অন্য একদিন যান ব্যারাকপুর, সোদপুর, বারাসাত। আবার কোনোদিন কাঁকিনাড়া, নৈহাটি অঞ্চলে। “তখন রোজ ট্রেনে করে আসতাম। এত রাতে না বেরোলেও হত। কিন্তু এখন তো ট্রেন চলছে না। তাই রোজ সাইকেলেই আসতে হচ্ছে। যাওয়া-আসাতেই সময় লেগে যাচ্ছে প্রায় ১২ ঘণ্টা।” বলছিলেন সাগর ঘোষ।

শুধুই মিষ্টি নয়। সঙ্গে থাকে ঘি, পনির আর নবদ্বীপের বিখ্যাত দই। ক্রেতারা বেশিরভাগই বাঁধা। আবার রাস্তায় হঠাৎ কিছু খদ্দেরও জুটে যায়। ফোনে জানিয়ে দিলে নির্দিষ্ট মিষ্টি নিয়েও হাজির হন সাগর। করোনা আবহে অবশ্য প্রথমে খানিকটা ভয় পেয়েছিলেন তিনি। মিষ্টি নিয়ে আসা কমিয়ে দিয়েছিলেন অনেকটাই। তবে ক্রেতারাই আবার তাঁকে বললেন বেশি করে মিষ্টি আনতে। কলকাতা শহর তো বটেই, শহরতলিতেও যেখানে মিষ্টির দাম ক্রমশ উর্ধ্বমুখী, সেখানে সাগর ঘোষ এখনও মাত্র ৫ টাকায় প্রমাণ সাইজের রসগোল্লা, ল্যাংচা, পান্তুয়া তুলে দিচ্ছেন মানুষের মুখে। বাড়ি ফিরতে ফিরতে বেজে যায় রাত ৮-৯টা। পরদিন আলো ফোটার আগেই আবার বেরিয়ে পড়া। এভাবেই ছোটো ছোটো গ্রাম উঠে এসে শহর কলকাতার বুকে ছড়িয়ে পড়ে আমাদের অজান্তেই। মিলেমিশে যায় ক্রমশ।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
কমছে চাহিদা, বিলুপ্তির পথে বাংলার প্রথম ‘ব্র্যান্ডেড মিষ্টি’

More From Author See More