ছোটো দোকান হোক বা বড় কোম্পানি অথবা এন্টারপ্রাইজ, নামের শেষে অনেকেই লেখেন 'অ্যান্ড সন্স' বা 'অ্যান্ড ব্রাদার্স'। বোঝা যায়, এইসব ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে আছে পারিবারিক মূলধন। কিন্তু পরিবার বলতে কি শুধুই ছেলে বা ভাই? পিতৃতন্ত্রের নিগড়ে আবদ্ধ ভারতীয় সমাজে অবশ্য এমনটাই মনে হওয়া স্বাভাবিক। আর তাই দেশের ছোট বড়ো সমস্ত শহরের অলিতে গলিতে দেখতে পাই এমন ব্যানার, যার শেষে লেখা 'অ্যান্ড সন্স'। কিন্তু হঠাৎ যদি দেখেন কোথাও দোকানের নামের শেষে লেখা আছে, 'অ্যান্ড ডটার্স'? বিস্ময় লাগবে নিশ্চই! এই বিস্ময়টুকুই তাঁর ব্যক্তিগত প্রতিবাদ। এভাবেই ভারতীয় সমাজের মধ্যে থাকা পিতৃতন্ত্রকে আঘাত করতে চেয়েছেন পাঞ্জাবের ব্যবসায়ী মনোজ কুমার গুপ্তা।
নির্মাণ শিল্পের ঠিকাদার হিসাবে কেরিয়ার শুরু করে ৫৪ বছরের মনোজ কুমার এখন লুধিয়ানা শহরের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। ২০১৭ সালে তৈরি করেছেন তাঁর নিজস্ব কোম্পানি 'গুপ্তা অ্যান্ড সন্স'। অর্থাৎ সেই পরিচিত পারিবারিক ব্যবসার ছবি। কিন্তু কিছুদিন আগে যখন তিনি ওষুধের দোকান তৈরির পরিকল্পনা করলেন, তখন ভাবনায় অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে। প্রাথমিক উদ্দেশ্য অবশ্য ছিল একটা চমকপ্রদ নাম ঠিক করা। তবে সেই উদ্দেশ্যে যেটা করলেন, সেটা শুধু নামেই নয়, কাজেও চমকপ্রদ। মনোজ কুমারের সন্তানদের মধ্যে ছেলে রোশন ছাড়াও আছে মেয়ে আকাঙ্ক্ষা। তাই নতুন ব্যবসায় তিনি শরিক করে নিলেন মেয়েকেই। আর দোকানের নাম দিলেন 'গুপ্তা অ্যান্ড ডটার্স'।
ব্যবসা শুরু করে অবশ্য লাভের অঙ্কের দিকেই শুধু মন দেননি মনোজ কুমার। কিছুদিনের মধ্যেই শিখ ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে শুরু করেছেন স্বল্প মূল্যের ওষুধ বিতরণ। দেশের অনেক জায়গাতেই ওষুধের অভাবে রোগীর মৃত্যু অতিপরিচিত দৃশ্য। কিন্তু মনোজ কুমার এই ঘটনাকে স্বাভাবিক বলে মেনে নিতে পারলেন না। গরিব মানুষদের কাছে তাই প্রায় কেনা দামে অথবা লোকসান করেও পৌঁছে দিতে শুরু করলেন ওষুধ। ফলে অনেকের কাছেই পরিচিত হয়ে উঠল তাঁর দোকানের নাম।
সুনাম যখন একটু একটু করে বাড়ছিল তখনই অমন কাশ্যপ নামে এক স্বাস্থ্যকর্মী মনোজ কুমারের দোকানের সাইনবোর্ডের একটি ছবি পোস্ট করেন সামাজিক মাধ্যমে। সঙ্গে সঙ্গেই ভাইরাল হয়ে যায় ছবিটি। পাশাপাশি অনেকে অন্য বিভিন্ন উদ্যোগের ছবিও তুলে ধরেছেন, যেখানে একইভাবে নামের শেষে লেখা হয়েছে 'অ্যান্ড ডটার্স'। কেউ তুলে ধরেছেন জম্মু শহরের একটি ভ্রমণ সংস্থার সাইনবোর্ড, কেউ তুলে ধরেছেন হরিয়ানার একটি দোকানের। এই সব উদ্যোগই আসলে পারিবারিক সম্পত্তিতে পুরুষের একচেটিয়া অধিকারের বিরুদ্ধে কথা বলে। মেয়েদের সম্পত্তিতে সমান অধিকারের আইন তো তৈরি হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু সামাজিক মানসিকতায় তার স্বীকৃতি এখনও মেলেনি সেভাবে। এই ছোট ছোট উদাহরণগুলোই হয়তো আদায় করতে পারবে সেই স্বীকৃতি। কাউকেই আর বাস্তবে শুধু মেয়ে বলে ছেলেদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না।
Powered by Froala Editor